ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শ্রমবিমুখ মানুষ আল্লাহর নাফরমান বান্দা হিসেবে গণ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
শ্রমবিমুখ মানুষ আল্লাহর নাফরমান বান্দা হিসেবে গণ্য শ্রমবিমুখ মানুষ আল্লাহর নাফরমান বান্দা হিসেবে গণ্য

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দারিদ্র্য মানুষকে কুফুরির কাছাকাছি নিয়ে যায়।’ দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ ন্যায়ভ্রষ্ট হয়। প্রতিভা, সাহস ও মনোবল হারায়। নৈতিক দৃঢ়তা বিনষ্ট হয়। তাই মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হোক- এটা ইসলাম চায় না।

ইসলাম মানুষকে স্বাবলম্বী হতে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহ প্রদান করে। মহানবী (সা.) চাননি মুসলমানরা ভিক্ষাবৃত্তিকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করুক।

তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাতের তুলনায় উত্তম। ’ তার মানে দাতার হাত গ্রহীতার হাতের চেয়ে উত্তম। নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিজের কষ্টার্জিত জীবিকা সবচেয়ে উত্তম। ’

কোরআনে কারিমও মানুষকে রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ দিয়ে বলেছে, ‘যখন নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহতায়ালার দেওয়া রিজিক অন্বেষণ করো। ’ -সূরা জুমা: ১০

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে কর্ষণযোগ্য করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা তার দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ো এবং তার দেওয়া আহার্য গ্রহণ করো। ’ -সূরা মুলক: ১৫

এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভূমিতে বিচরণ করে শ্রম দেবে সে-ই খাদ্য পাবে। আর সাধ্য থাকা সত্ত্বেও যে শ্রম দেবে না, সে খাদ্য না পাওয়ারই যোগ্য। তার মানে হচ্ছে, ঘরে বেকার বসে থাকা মহান আল্লাহর কাছে শুধু অপছন্দনীয়ই নয়; বরং চরম অন্যায়। শ্রমবিমুখ মানুষ মহান আল্লাহর নাফরমান হিসেবে গণ্য। নামাজের সঙ্গে সঙ্গেই যখন রিজিক অন্বেষণের তাগিদ এসেছে, কাজেই হালাল রিজিক অন্বেষণের তাগিদ নামাজের মতো মহান ইবাদতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ’

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, কালের বিবর্তনে মুসলিম জাতি আজ কোরআন ও হাদিসের এসব নির্দেশনা ভুলতে বসেছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।  

অনেকেই বলছেন, মুসলিমরা অর্থবিত্তে স্বাবলম্বী হয়ে উঠলে লোভী ও আধিপত্যবাদী শক্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে- এ আশঙ্কায় তারা মুসলিমদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সুকৌশলে রোধ করার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা মুসলিমদের মধ্যে রুহবানিয়াত তথা বৈরাগ্যবাদের ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে মুসলিমরা সংসার বিরাগী হয়ে দুনিয়াত্যাগী হওয়াকে প্রভূত কল্যাণ মনে করছে।

অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের এ মর্মে দোয়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতেও হাসানা তথা সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও হাসানা তথা সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ দান করুন। ’

ইসলামপূর্ব যুগে একদল খ্রিস্টান নেতা আল্লাহর প্রতি ভক্তির আতিশয্যে সংসার ত্যাগ করে জঙ্গলে গিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হয়ে পড়েন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এ কার্যক্রমের নিন্দা করে বলেন, ‘তারা যে বৈরাগ্য গ্রহণ করেছে, আমি তাদের এ দায়িত্ব দিইনি। এটা তাদেরই মনগড়া উদ্ভাবিত বিষয়। ’

ইসলামে দুনিয়াকে ত্যাগ করার কথা বলা হয়নি; বরং দুনিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার কারণে নিন্দা করা হয়েছে।  

বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে মুসলিম রাষ্ট্রে নানাভাবে নাক গলানোর সুযোগ পাচ্ছে, এটা রোধ করতে হলে, মুসলমানদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, শিক্ষা-সংস্কৃতি রক্ষার জন্য অর্থনীতিতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।