ঢাকা, সোমবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ মে ২০২৪, ১৮ জিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো যেখানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো যেখানে এ্ই সেই স্থান যেখানে জাহেলিয়াতের যুগে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো; ছবি: বাংলানিউজ

মক্কা নগরী থেকে: মক্কার মসজিদে হারামের পশ্চিম-উত্তর কোণের দিকটার নাম ‘জাবালে ওমর’। সেখানে একটি বাসস্ট্যাণ্ড রয়েছে। নাম ‘সেপকো’। বেশক’টি রাস্তা এসে মিলেছে সেখানে।

মসজিদে হারামে আসা-যাওয়ারও অন্যতম পথ এটা। রাস্তার দক্ষিণে বিশাল বিশাল হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে।

এসব হোটেলের সামনের ফ্লাইওভার এবং মসজিদে হারামের সীমানার মাঝামাঝিতে একটি খালি জায়গা। মসজিদে হারামের সম্প্রসারণের কারণে হারাম এলাকা লাগোয়া এমন খালি জায়গা আর দেখা যায় না। কিন্তু এ জায়গাটি খালি। মূল্য বিচারে জায়গাটি খালি থাকার কথা না। তারপরও খালি।

এই খালি জায়গাটিতে অন্ধকার যুগে আরবের লোকেরা তাদের কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দিতো। জায়গাটিতে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই, কোনো ফলক নেই। শুধু জায়গাটি ঘিরে রাখা আছে। যারা ইতিহাস জানেন, তারা জায়গাটি দেখে আসেন। তবে এখানে দায়িত্বরত কোনো পুলিশ এ বিষয়ে- ‘ওয়াল্লাহি লা মালুম’ বলে আপনাকে সেখানে যেতে নিরুৎসাহিত করবে। কিন্তু ফ্লাইওভার ধরে এক-দুই মিনিট হেঁটে গিয়ে জায়গাটি দেখা যায়।
যে জায়গায় গেলে নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি এসে পড়ে। হৃদয়পটে ভেসে ওঠে জাহেলি যুগের সে বর্বরতার চিত্র। যে যুগে কন্যা সন্তানের পিতা হওয়া ছিল ভীষণ লজ্জার বিষয়। সমাজে তার মুখ দেখানো হতো দায়। যে দায় এড়াতে আপন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে রাখতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতো না আরবরা!

তাদের এই অবস্থা তুলে ধরে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে সে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে চেহারা লুকিয়ে রাখে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে রাখবে, না মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। ’ -সূরা নাহল : ৫৮-৫৯

এটা ছিল ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের চিত্র, যেখানে ছিল না শিক্ষা-দীক্ষা। ওই সমাজে মানুষ হিসেবে কন্যা সন্তানদের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। জীবনের সব ক্ষেত্রে তারা ছিল অবহেলিত, উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত অঅর করুণার পাত্রী। কন্যা সন্তান জন্ম হওয়া তাদের কাছে অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে গণ্য হতো। অনেক আরব গোত্রে কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তারা অপমানিত এবং লজ্জিত হতো। আর এ লজ্জা এবং অপমান থেকে পরিত্রাণ লাভের আশায় তাদের জীবন্ত কবর পযন্ত দিতে তারা দ্বিধা করত না। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়াকে তারা বৈধ মনে করতো। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র ছিল না।

জায়গাটি পাথুরে আর বালুকাময়। সেখানে গিয়ে দেখা গেল অনেক দর্শনার্থী চোখের পানি ফেলে দোয়া করছেন। কেউ কেউ আবার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করছেন।

মনে পড়লো বনি তামিম গোত্রের প্রধান কায়েস বিন আসেমের কথা। ইসলাম গ্রহণের পর একবার যখন নবী করিম (সা.)-এর দরবারে বসে কথাপ্রসঙ্গে তিনি নিজ হাতে কীভাবে তার নিজের জীবন্ত কন্যাকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করলেন তার বর্ণনা দিলেন। মেয়েটি কীভাবে বাবা বাবা বলে চিৎকার-ফরিয়াদ করছিল তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। বর্ণনা শুনে নবী করিম (সা.)-এর দু’চোখে অশ্রুধারা বয়ে চলছিল, তার দাড়ি মোবারক ভিজে গিয়েছিল।

মানবতার ধর্ম ইসলাম আরবে প্রচলিত কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়ার এ ঘৃণিত রীতি চিরতরে বন্ধ করে কন্যা সন্তানকে ছেলে সন্তানের মতো জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়। এমনকি কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আত তাকভিরে ইরশাদ করেন, ‘জীবন্ত প্রোথিত কন্যা সন্তানকে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে কোন অপরাধে তোমাকে হত্যা করা হয়েছিল। ’

ইসলামপূর্ব যুগে নারীদের সব ধরনের শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলা, অবজ্ঞা এবং অত্যাচার-নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ দিয়ে সম্মান, মযাদা এবং গৌরবময় সামাজিক জীব হিসেবে জীবনযাপনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করেছে।

ইসলাম নারীদেরকে জীবনের প্রথম লগ্নে কারও কন্যা, যৌবনে এসে কারও বধূ এবং জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কারও মমতাময়ী মা হিসেবে যে সম্মান এবং মর্যাদার স্বর্ণশিখরে অধিষ্ঠিত করেছে তা পৃথিবীতে প্রচলিত অন্যসব ধর্মে সত্যিই বিরল।

কন্যা সন্তান জন্মলাভ করা মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত হিসেবে ইসলামে স্বীকৃত। কন্যা সন্তানদের মর্যাদার বিষয়ে হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে লোকের তিনটি কন্যা সন্তান আছে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে (তাদেরকে বোঝা মনে করে না) এবং সাধ্যানুসারে ভালো খাওয়ায়, পরায়, তাদের সঙ্গে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে, তার জন্য বেহেশত অবধারিত। ’
বাংলাদেশ সময়:১৭০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমএইউ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।