ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কোরআনে বর্ণিত কাহিনীসমূহে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে শিক্ষা

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৭
কোরআনে বর্ণিত কাহিনীসমূহে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে শিক্ষা ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআন কোনো গল্পের বই নয় বরং এটা হেদায়েত, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী ঐশী গ্রন্থ। এ কারণে মানুষের পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার জন্যে যা কিছু প্রয়োজন, সে সবের বর্ণনা রয়েছে পবিত্র কোরআনে।

দ্বীনী শিক্ষা এবং কর্মসূচিগুলোকে কোরআনে কারিমে বিচিত্র আঙ্গিক ও পদ্ধতিতে পরিবেশন করা হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন নবী-রাসূল, ঐতিহাসিক জনপদ, বিভিন্ন গোত্র ও ব্যক্তিবর্গের উপখ্যান কিংবা গল্প বলা- সেই পদ্ধতিরই একটি অংশ বিশেষ।

কোরআনে কারিমের বহু আয়াতে নবীদের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জী বর্ণনা করা হয়েছে, আবার কিছু ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। নবীদের কাহিনী কিংবা কোনো কোনো গোত্রের কাহিনী বর্ণনার গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর একটি হলো- মানুষের সামনে শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কেননা কোরআনে বলা হয়েছে, কোরআনের কাহিনীতে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত।

কোরআনে প্রাচীন গোত্রগুলোর পরিণতির কাহিনী বারবার উল্লেখ করার কারণ, মানুষকে সাবধান করা, তাদের এটা বোঝানো- তোমাদের পূর্বর্বতীদের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার কারণগুলো থেকে শিক্ষা নাও এবং ইতিহাসের তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করো না।

গবেষকদের মতে, কোরআন অসম্ভব শিল্পসুষমাময় ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে বহু ঘটনাপঞ্জী, কাহিনী, দৃশ্য ইত্যাদিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এসব যেনো একেবারে জীবন্ত। কোরআনে বর্ণিত গল্পগুলোর একটা বিশেষ বর্ণনাভঙ্গি আছে, রয়েছে বিশেষ বয়নভঙ্গি। এসব তারই প্রতিফলন।

কোরআনে কারিমে বর্ণিত হজরত সোলায়মান (আ.)-এর ঘটনার কথাই ধরা যাক। এ ঘটনার মূল উপজীব্য কাল্পনিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি একটি ঘটনা, যা পরম বাস্তব। এ ঘটনাটি পাঠক যখনই পড়বেন, মনে হবে নতুন। ঘটনাটা এতোটাই আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক। এই ঘটনায় বহু চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। মানুষের বাইরেও অনেক চরিত্র রয়েছে, রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের উদাহরণ। যেমন জ্বীন, পশুপাখি ইত্যাদি।

মজার ব্যাপার হলো, এ ঘটনায় সবাই সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও পরস্পরের সহযোগী। গল্পের পটভূমি রচিত হয়েছে সুন্দর সুন্দর চিত্র সহযোগে। আমরা জনি, পাখিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা নিশ্চয়ই বিরল ঘটনা। কিংবা জ্বীন বা পাখির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এবং মানুষের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক লেনদেন খুবই বিরল ঘটনা। আবার ঘটনাগুলো যে স্থানে সংঘটিত হয় তাও বেশ আকর্ষণীয়। সেইসঙ্গে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যময় ব্যক্তিত্বগুলোর আত্মিক এবং চারিত্র্যিক বর্ণনাও পাঠকদের জন্যে দেওয়া হয়েছে- যা একজন পাঠককে সহজেই বুঝে উঠতে সহযোগিতা করবে।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হজরত সোলায়মান (আ.)-এর কাহিনীতে পিঁপড়া ও হুদহুদ পাখির তার সম্পর্ক, আবার রাণী বিলকিসের সঙ্গে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর সম্পর্কের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ঘটনাটির মূলরূপ কিন্তু কথোপকথনধর্মী। এই পদ্ধতিতে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে ঘটতে গল্প এগিয়ে যায়।

কোরআনে বর্ণিত গল্পের শিল্পগত কাঠামো বিচার করলে দেখা যাবে, সেখানে এমন কিছু চরিত্রের উপস্থিতি আছে যারা মানুষ নয়। পিঁপড়া এবং হুদহুদ পাখি কথা বলে এবং হজরত সোলায়মান (আ.) তাদের ভাষা বোঝেন। এর মাধ্যমে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর জ্ঞানের বিস্ময়কর পর্যায়কে পরিমাপ করা যায়।

ছবি: সংগৃহীত আধুনিক গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সংক্ষিপ্ততা। গল্পের বাক্যগঠন হবে ছোট্ট এবং বাহুল্য বর্জিত। ঠিক মূল্যবান পাথরের মালার মতো গল্পকারও শব্দের মালা গাঁথবেন। বর্ণিত ঘটনায় এসবের পরিমিত উপস্থিতি রয়েছে।

চমৎকার কিছু দৃশ্যও রয়েছে হজরত সোলায়মান (আ.) এর গল্পে। হুদহুদ পাখিকে খুঁজ করার দৃশ্য, বিশাল একটি গোত্রের ওপর একজন নারী কর্তৃত্ব, বিলকিসের বিশাল সিংহাসনের দৃশ্য, হজরত সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে বিলকিসের আগমনের নজিরবিহীন দৃশ্য ইত্যাদি।

পুরো ঘটনায় চমক দেওয়ার ব্যাপারটা সর্বোত্তম পন্থায় ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা রাণী বিলকিস জানতোই না তার সিংহাসনটি নবী সোলায়মানের দরবারে নিয়ে আসা হবে। আর তাই বিলকিস তার সিংহাসনটি দেখে চমকে উঠেছিলেন। বিলকিস আরও বেশি চমৎকৃত হন, সোলায়মান (আ.)-এর জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল প্রাসাদ দেখে।

এই যে একটি ঘটনায় রহস্য, বিস্ময় ও কৌতূহল সৃষ্টি করা হয়েছে, এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমান সময়ের আধুনিক গল্পকারদের মাঝে এসব বিষয়ের সমন্বয় দেখা যায়। যার ফলে তারপর কী ঘটতে যাচ্ছে- এমন কৌতূহল পাঠকদের মনে জেগে ওঠে। পাঠক আগ্রহী হয় গল্পের প্রতি। হজরত সোলায়মান (আ.)-এর ঘটনায় এ বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। হুদহুদের আগমনের জন্যে হজরত সোলায়মানের অপেক্ষা, বিলকিসের কাছ থেকে উত্তরের অপেক্ষা, সোলায়মান (আ.) বিলকিসের পাঠানো উপহার সামগ্রী গ্রহণ করলো না কি করলো না- তা জানার অপেক্ষা ইত্যাদি এ ঘটনায় ব্যবহৃত কৌতূহল সৃষ্টির নান্দনিক উদাহরণ।

ঘটনাটির উপজীব্য যদিও বিস্ময়কর, তারপরও তাতে উচ্চতরো মর্মার্থ এবং মূল্যবান যে বার্তা রয়েছে তা পাঠকদেরকে অনুপ্রাণিত করে, প্রভাবিত করে প্রবলভাবে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।