ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য করণীয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য করণীয় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য করণীয়

মদিনা। প্রিয় নবীর প্রিয় শহর। এই শহরে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠ- মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। যা পবিত্র হারামের সীমানায় মসজিদে নববির পাশে অবস্থিত।

বরেণ্য উলামা-মাশায়েখের পদচারণায় প্রাণবন্ত এক বিশাল ক্যাম্পাস। ভেতরে প্রবেশ করলে চারদিকে ইলমচর্চার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনার চোখে পড়বে।

সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনের নানন্দিক নজরকাড়া স্থাপত্যশৈলী আপনাকে মুদ্ধ করবে।  

২৫ রবিউল আওয়াল ১৩৮১ হিজরিতে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ বিশ্বব্যাপী ইসলামের আলো ছড়াচ্ছে। দিন দিন তার কার্যপরিধি ও প্রসিদ্ধি বাড়ছে।  

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবীর প্রায় ১৮০টি দেশের (তার মানে প্রায় সকল দেশ) ছাত্র একসঙ্গে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে ছাত্রসংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ম ব্যাচের (১৪৩৭-১৪৩৮ হি. শিক্ষাবর্ষ) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশসহ ১২০টি দেশের মোট ৩৫৫৮ জন ছাত্র বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি থেকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মাননাসনদ গ্রহণ করেন। ২৭৭৪ জন ছাত্র স্নাতক সম্মানে (অর্নাস) উত্তীর্ণ হন। ১০৩ জন উচ্চতর ডিপ্লোমায়, ৪৮৫ জন স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) এবং ১৯৬ জন ছাত্র ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন।  

সুযোগ সুবিধাসমূহ
উচ্চশিক্ষার উন্নত পরিবেশের পাশাপাশি একজন ছাত্রকে আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা হচ্ছে-
১. বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর ভিসা ও এয়ার টিকেট খরচ ভার্সিটি বহন করে।  
২. শিক্ষার্থীর শিক্ষা বেতন ও পরীক্ষা ফি মওকুফ।
৩. আধুনিক পরিচ্ছন্ন ছাত্রাবাসে ফ্রি আবাসন ব্যবস্থা।
৪. রেস্টুরেন্টে উন্নত খাবারের সুব্যবস্থা। খাবার বিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট হারে ভর্তুকি প্রদান।
৫. বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট হারে (অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি) ভাতা দেওয়া হয়।
৬. শিক্ষার্থী প্রতি বছর গ্রীষ্মকালীন ছুটি (প্রায় ৩/৪ মাস) কাটাতে দেশে যেতে পারেন। ভার্সিটি ভিসা-টিকেট খরচ বহন করে।  
মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য করণীয়
৭. নতুন বছরের সেমিস্টারের শুরুতে বইপত্র ক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট হারে অর্থ দেওয়া হয়।
৮. যারাপরপর দুই সেমিস্টারে ‘মুমতাজ’ (জিপিএ-৫) ফলাফল অর্জনকারীকে অতিরিক্ত বৃত্তি দেওয়া হয়।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হসপিটালে বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে হজ-ওমরা আদায় করানো হয় এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানসমূহে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়।
১১. মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা সস্ত্রীক মদিনায় বসবাসের সুযোগ পান।  
১২. ক্যাম্পাস থেকে মসজিদে নববীতে যাতায়াতের জন্য ভার্সিটির নিজস্ব গাড়ির সুবিধা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদসমূহ
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ৮টি অনুষদ, ২৩টি বিভাগ ও ৩টি মাহাদ (ইনস্টিটিউট) আছে। ইসলামিক অনুষদ বা বিভাগগুলোই মূখ্য। তবে পাশাপাশি বেশকিছু আধুনিক অনুষদও চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফ্যাকাল্টি সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। বিদ্যমান অনুষদগুলো হচ্ছে-

1. FACULTY OF ISLAMIC LAW (SHAREE’AH)
2. FACULTY OF ISLAMIC PREACHING (DA’WAH) AND THEOLOGY (USOOL UD DEEN)
3. FACULTY OF THE HOLY QURAN AND ISLAMIC STUDIES
4. FACULTY OF PROPHETIC TRADITION (HADITH) AND ISLAMIC STUDIES
5. FACULTY OF THE ARABIC LANGUAGE
6. THE FACULTY OF SCIENCE
7. THE FACULTY OF COMPUTER AND INFORMATION SYSTEM
8. THE FACULTY OF ENGINEERING

আবেদনের শর্তসমূহ
এখানে একজন বিদেশি ছাত্রকে ভর্তি হতে হলে প্রথমে শিক্ষাবৃত্তির জন্য উপযোগী হতে হয়। এ জন্য আছে বেশকিছু শর্ত। যেমন-

১.  ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বয়স ২৫ বছরের কম হতে হবে এবং উচ্চমাধ্যমিক সনদ উত্তীর্ণ সাল ৫ বছর অতিক্রম করতে পারবে না।  
২. সৌদি আরবের অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণীয় নয়।  
৩. সৌদি আরবের অন্যকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. সৌদি আরবের স্থানীয় আইন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং শিক্ষার্থীকে  অবশ্যই তা মানতে হবে।  
৫. সৌদি আরবের আইনের বাইরে কোনো প্রকার রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা অবলম্বন করা যাবে না এবং এসব বিষয়ে আলোচনাও করা যাবে না।
৬. বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে।
৭. বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তাদের বৃত্তিকালীন নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন হলে দেশে ফিরে যেতে হবে।
৮. যারা জন্মগতভাবে মুসলিম না, তাদের ইসলামগ্রহণের সনদপত্র লাগবে।
৯. শিক্ষার্থীকে ইসলামিক বিশুদ্ধ আকিদা পোষণকারী এবং সালফে সালেহিনদের অনুসারী হতে হবে।
১০. আরবিতে পারদর্শী হতে হবে (কারণ শিক্ষার মাধ্যম আরবি)।

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসমূহ
একজন বিদেশী ছাত্রকে ভার্সিটিতে স্কলারশিপ আবেদন করতে হলে নিচের ডকুমেন্টগুলো লাগবে-
১. আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমানের সার্টিফিকেট।
২. আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমানের মার্কশিট। (সার্টিফিকেট ও মার্কশিট নিজ নিজ শিক্ষাবোর্ড এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে। )
৩. আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমানের প্রশংসাপত্র।
৪. জন্মসনদ।
৫. পাসপোর্ট।
৬. প্রার্থীর ছবি (৬*৪) সাইজ। (ছবি টুপি ও চশমা ছাড়া এবং ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে)
৭. মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট (জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া যায়)।
৮. দু’জন ইসলামি ব্যক্তিত্বের চারিত্রিক সনদ।
৯. অতিরিক্ত যোগ্যতার অন্যান্য সনদপত্র থাকলে (যেমন হেফজ, আরবি ভাষাদক্ষতার কোনো কোর্স) সেগুলোও অপশনাল হিসাবে জমা দেওয়া যাবে।

যেভাবে আবেদন করবেন
এসব ডকুমেন্ট প্রথমে আরবি ও নোটারি করে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন করাতে হবে। (পাসপোর্ট আরবি ও সত্যায়ন করতে হবে না) পরে সবগুলো ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ভার্সিটির এডমিশন ওয়েব পেজে গিয়ে অনলাইনে আবেদন হবে। বছরের যেকোনো সময় আবেদন করা যায়। আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক ও বিনামূল্যে।  

মনে রাখবেন, মদিনা ভার্সিটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু বিনামূল্যে। বিশ্বের কোথাও ভার্সিটির কোনো এজেন্ট নাই, তাই কারো কাছে টাকা দিয়ে প্রতারিত হবেন না।  

আপনার আবেদন নিজেই করতে পারবেন। আরবি জানলে আরবিতে, অন্যথায় ইংরেজিতে আবেদস করবেন। আবেদনে নির্বাচিত হলে শুরু হবে ভিসা প্রসেসিং। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নিয়মিত খবর রাখতে হবে ফলাফল জানার জন্য। ইমেইলে আপডেট থাকা ভালো।  

আবেদন লিংক হচ্ছে-
https://admission.iu.edu.sa/WelcomePortal.aspx

এ ছাড়া যেকোনো তথ্যের জন্য ভিজিট করতে পারেন-
http://iu.edu.sa/

কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা যেভাবে আবেদন করতে পারবেন
কওমি মাদরাসা শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেক মেধাবী ছাত্র মদিনা ভার্সিটিতে আবেদন করতে পারেন না। এটা না জানার কারণে হয়। অথচ কওমি কর্তৃপক্ষ একটু চেষ্টা করলেই তাদের ছাত্রদের এখানে পাঠাতে সক্ষম। এমনকি এখানেও পিএইচডিও করতে পারবে।  

ভার্সিটি প্রধানত সনদের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদিত সনদ দেখে। কিন্তু দ্বিতীয় অপশন হিসেবে ‘মুআদালা’ নামক একটি সিস্টেম রয়েছে। অর্থাৎ আপনার প্রতিষ্ঠান যদি সরকারি সনদপ্রাপ্ত না হয়, কিন্তু মদিনা ভার্সিটির সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক শিক্ষা চুক্তি বা মুআদালা করা থাকে- তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও আবেদন করতে পারবেন।  

এ জন্য মাদরাসার কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট মুআদালা ফরম পূরণ করে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। কওমি মাদরাসাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের দারুল মাআরিফ এমন একটি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বাংলাদেশে আহলে হাদিসদের পরিচালিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মুআদালা করা আছে।  

পরামর্শ
মদিনা ভার্সিটিতে পড়তে ইচ্ছুক হলে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী টার্গেট নিতে হবে। হঠাৎ করে কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। জেএসসি, এসএসসি (দাখিল) এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পাশাপাশি আরবিতে দক্ষ হতে হবে।  

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি সাহিত্য বিভাগ, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।