ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আখমাদ কাদিরোভ মসজিদ বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম

চেচনিয়া রাশিয়ার একটি প্রদেশের নাম। ইসলামের সূচনাকালেই চেচনিয়া ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়।

চেচনিয়া দীর্ঘদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনে ছিলো। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ৬টি মুসলিম দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

এতে চেচেনরা স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।  

চেচেনদের স্বাধানীনতার নেতৃত্ব দেয় দুদায়েভ। চেচেনদের দমন করতে রাশিয়াকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার না করলেও অতি উচ্চমানের অস্ত্র নিয়ে চেচেনদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রাশিয়া। এতে চেচেনদের জনপ্রিয় নেতা ও প্রেসিডেন্ট দুদায়েভ ১৯৯৬ সালের ২৪ এপ্রিল মিসাইল আক্রমণে শহীদ হন।  

কয়েক বছরের যুদ্ধে চেচনিয়ার প্রায় ৩০ হাজার লোক শহীদ হয়। আহত তথা পঙ্গু হয় অসংখ্য চেচেন। রাশিয়াকেও চড়া মূল্য দিতে হয়। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট চেচেন নেতা আসলান মাসখাদভ রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় চেচেনরা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা না পেলেও ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন লাভ করেন।  

চেচনিয়ার জনসংখ্যা ১৪ লাখের মতো। এখানে চেচেনরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের সংখ্যা শতকরা ৭৫ ভাগ। চেচনিয়ার প্রাদেশিক রাজধানী গ্রোজনি।  

চেচনিয়ায় পাশের প্রদেশের নাম দাগিস্তান। দাগিস্তানের আয়তন চেচনিয়া থেকে বেশি। জনসংখ্যা ৩০ লাখের মতো। রাজধানীর নাম মাহাসকাল।  

জনশ্রুতি রয়েছে, এ এলাকায় প্রায় ৪০ জন সাহাবির কবর রয়েছে।

উভয় প্রদেশের রাজধানীর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০০ কি.মি.। চেচনিয়ায় অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ। সেখানকার স্কুলেরা ছাত্ররা ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে অধ্যয়ন করেন।

চেচনিয়ার মানুষ সুন্দর ফর্সা ও সুঠাম দেহের অধিকারী। এরা যেমন উদারপ্রাণ তেমনি সাহসী। উভয় প্রদেশ থেকে প্রচুর মুসলমান হজপালনে সৌদি আরব গমন করেন।  

মুসলিম নারীরা হিজাব ব্যবহার করেন। অনেকে আবার বাহু থেকে পা পর্যন্ত ঢাকতে লম্বা পোশাক পরিধান করেন, যা আভায়া নামে পরিচিত। হিজাব চেচেন ঐতিহ্যও বটে।  

চেচনিয়ায় ২০০৭ সাল থেকে ক্ষমতায় রমজান কাদিরোভ। তার শাসনামলে এ এলাকায় ইসলামের ভূমিকা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পর বিধ্বস্ত শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর কয়েক ডজন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

এমনই একটি মসজিদ আখমাদ কাদিরোভ মসজিদ। যা রাজধানী গ্রোজনির কেন্দ্রে অবস্থিত। মসজিদটি ‘চেচনিয়ার হার্ট’ (The Heart of Chechnya) হিসেবে পরিচিত।  

আখমাদ কাদিরোভ মসজিদ বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে চেচনিয়ার প্রধান মুফতি এবং প্রথম প্রেসিডেন্টের নামে। তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাদিরোভের বাবা। তিনি ২০০৪ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন।

ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমেদ মসজিদের ডিজাইনের অনুকরণে মসজিদটি নির্মিত। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে চেচেন নেতা রমজান কাদিরোভের বক্তব্যের মাধ্যমে মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

মসজিদটি অটোমান শৈলীতে নির্মিত। মসজিদটিতে ১৬ মিটার ব্যাস এবং ৩২ মিটার উচ্চতার বিশাল একটি প্রধান গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ৪ কোনায় ৬৩ মিটার উচ্চতার চারটি সুউচ্চ মিনার এর শোভা বাড়িয়েছে।  

মূল মসজিদের বাইরের বারান্দায় রয়েছে ১৭টি ছোট ছোট গম্বুজ। মসজিদটির ভেতরে এবং বাইরে মার্বেল পাথরে ঢাকা।  

৫ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের এই মসজিদে এক সঙ্গে ১০ হাজারের বেশি লোক নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৪ একর জায়গাজুড়ে বিশাল এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি সাজনা নদীর তীরে অবস্থিত।  

এটি এখন পর্যন্ত ইউরোপের বৃহত্তম মসজিদ। যা যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমান।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।