ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জীবনের প্রতি অনাগ্রহীদের বাঁচতে শেখাতে হবে

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৮
জীবনের প্রতি অনাগ্রহীদের বাঁচতে শেখাতে হবে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা নিজেরা নিজেকে হত্যা করো না

আত্মহত্যার মতো অসুস্থ প্রবণতার অন্যতম কারণ মানসিক সমস্যা কিংবা চাপ। দেশের অনেকই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু অন্যের কাছে তা প্রকাশ করতে চান না। এমনকি চিকিৎসকের কাছে যেতেও ইতস্ততবোধ করেন।

ফলে ভেতরে ভেতরে রোগ বাড়তে থাকে। মানসিক সমস্যা ব্যতীত আরও বহুবিধ কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন।

পারিবারিক বিরোধ, প্রেম-ভালোবাসা, বিবাহবিচ্ছেদ, বঞ্চনা, হতাশা, ব্যর্থতা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠার অভাব এসব কারণেও আত্মহত্যা করে বসেন অনেকে।  

পরীক্ষায় ফেল করে কিংবা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বসছেন কেউ কেউ। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন মেধাবী ছাত্র দুঃখজনকভাবে আত্মহনের পথ বেছে নিয়েছেন সম্প্রতি।  

সম্প্রতি সহযোগী এক দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩০ জন আত্মহত্যা করেন। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১১ হাজার ৯৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৫৬৯ জন ফাঁসিতে, বিষপানে ৩ হাজার ৪৬৭ ও গায়ে আগুন লাগিয়ে ৫৯ জন আত্মহত্যা করেছেন।  

২০১৬ সালে সারাদেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১০ হাজার ৬০৩টি। প্রতিবছর আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৫০০টি।  

উল্লেখ্য, প্রতিবছর যে সংখ্যক মানুষ খুন হন তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এর হিসেবে বিশ্বের যতো মানুষ যুদ্ধবিগ্রহে মরেন তার চেয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় মারা যান বেশি। প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।  

আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী ২০২০ সালে এ সংখ্যা প্রতি ২০ সেকেন্ডে ১ জনে দাঁড়াবে। গত ৪৫ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে মানসিক চাপ, হতাশা, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথে যান। আর্থসামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক সংকটের কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করেন। কেউ কেউ বিভিন্নরকম যন্ত্রণা ও কষ্টে ভোগেন। এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতেও অনেকে জীবন বিনাশ করেন।  

ইংরেজি এক দৈনিকের রিপোর্টে উচ্চ শিক্ষিত ও যোগ্য তরুণদের আত্মহত্যার জন্য বেকারত্ব বা চাকরিহীনতাকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আর কোনো ধর্মে আত্মহত্যার বৈধতা নেই। সামাজিক ব্যবস্থায়ও আত্মহত্যার বৈধ বিধান নেই।  

আত্মহত্যার বিষয়ে ইসলামের স্পষ্ট ঘোষণা- ‘আত্মহত্যা হারাম। ’ এ বিষয়ে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবল নিন্দা জানানো হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা নিজেকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু। তার পরও যে আত্মহত্যা করল সে সীমা লঙ্ঘন ও জুলুম করল, অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দেবো। ’ -সূরা নিসা: ২৯

আত্মহত্যাকারীকে পরকালে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। আত্মহত্যাকারী নিজেকে যে উপায়ে হত্যা করবে, তাকে সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে স্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবে, জাহান্নামে সেই ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করবে, তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। ’ –সহিহ বোখারি

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, যারা ইমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যাবে। তারা স্থায়ী জাহান্নামি হবে না। যে হাদিসে আত্মহত্যাকারীর জন্য স্থায়ী জাহান্নামের কথা রয়েছে, তার ব্যাখ্যা হলো- তা ওই লোকের জন্য, যে তাকে (আত্মহত্যাকে) হালাল মনে করেছে। তখন তো সে কাফের হয়ে যাবে। তাই আত্মহত্যাকারীকে যত দিন ইচ্ছা আল্লাহ শাস্তি দিয়ে পরে ইমানের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।  

যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জানাজা পড়া যাবে। তবে সম্ভ্রান্ত লোক ও আলেমদের তাতে শরিক না হওয়া উত্তম। এমনকি কোনো কারণে না খেয়ে মারা যাওয়াকে ইসলাম সমর্থন করে না। অনেকে দাবি আদায়ের জন্য না খেয়ে অবস্থান করে। এটি ইসলাম সমর্থিত কোনো বিষয় নয়। তদ্রুপ কারও নির্দেশে আত্মহত্যা করা হারাম। আত্মহত্যার জন্য সহযোগিতাও করা যাবে না। এটাও পাপের কাজ। এক কথায়, আত্মহত্যা পরকালে জাহান্নামের কারণ। অন্যকে হত্যা করার চেয়ে নিজেকে হত্যা করার শাস্তি বেশি। ইসলামে আত্মহত্যার কোনো পথ নেই।  

আমাদের সমাজের ‘জীবনযন্ত্রণা’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। জীবন তথা বেঁচে থাকার আশা যারা হারিয়ে ফেলেন তারাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কথিত জীবনযন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাতে পারলে, মানসিক শক্তি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হলে, জীবন সম্পর্কে ব্যঞ্জনাময় উপলব্ধি শেখাতে পারলে মানুষ অবশ্যই বাঁচতে চাইবেন।  

আমরা জানি, মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ মরতে চান না। সুস্থ ও সবল মানুষ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চান। জীবনকে উপভোগ করতে চান সব মানুষ। তাই যারা জীবনের আলো আগেভাগে নিভিয়ে দিতে চান, তাদের মনের আলো আর চেতনার প্রদীপবাতি আগে জ্বালাতে হবে। যতোটা সম্ভব হতাশাগ্রস্ত শিক্ষিত ও যোগ্যদের কাজ দিয়ে, যারা মানসিক রোগাক্রান্ত তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সেবার ব্যবস্থা ও পুনর্বাসন করে নতুনভাবে বাঁচতে শেখাতে হবে। প্রকৃত জীবনের সন্ধান পেলে কে না বাঁচতে চায়?

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।