ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আশুরার রোজা রাখার বিধান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
আশুরার রোজা রাখার বিধান

আশুরার দিন, স্বাতন্ত্র্য মহিমা-ভাস্বর এক দিন। ইসলামের ইতিহাসে আশুরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিভিন্ন কারণে। প্রাক-ইসলামী যুগেও আশুরার ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। সৃষ্টির পর থেকে আশুরার দিনে অনেক তাৎপর্যমণ্ডিত ও গুরুত্ববহ ঘটনা ঘটেছে। তাই এই দিনের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অনেক বেশি। এ কারণে ম‍ুহাররম মাসও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মুহাররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনেও মুহাররম মাসকে অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ মাস, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)

আশুরার এদিনে অনেক আম্বিয়ায়ে কেরাম আল্লাহ তাআলার সাহায্য পেয়ে ধন্য হন এবং কঠিন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভ করেন। এই সাহায্যের শুকরিয়া হিসেবে নবী-রাসুল ও তাদের উম্মতরা এদিনে রোজা পালন করতেন।

আশুরার রোজার বিধান
হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের (রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে) আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। আর এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না। (মুসলিম : ১১২৮)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের পর যদি তোমরা রোজা রাখতে চাও, তবে মুহাররম মাসে রোজা রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা একটি সম্প্রদায়ের তাওবা কবুল করেছেন। সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তাওবাও কবুল করবেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৭৪১)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন, অন্য কোনো রোজা সম্পর্কে তাকে সেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতে দেখিনি। (বোখারি : ২০০৬, মুসলিম : ১১৩২)

হজরত হাফসা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) চারটি কাজ কখনো ছাড়তেন না। এর মধ্যে একটি হলো আশুরার রোজা।
আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বলেন, আশুরার দিন ইহুদিরা ঈদ পালন করতো। রাসুল (সা.) সেদিন সাহাবিদের রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (বোখারি, হাদিস নং : ২০০৫, মুসলিম, হাদিস নং : ১১৩১)

আবু কাতাদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর ফলে পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬১, তিরমিজি, হাদিস নং : ৭৪৯)

আশুরার রোজা কয়টি?
ইসলামী বিধান মোতাবেক আশুরার রোজা দুইটি। মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমল কার্যকর হওয়ার জন্য বলেন, মুহাররমের ৯, ১০ ও ১১ তারিখ তিন দিনই রোজা রাখবে। সবার জন্যই নিম্নোক্ত হাদিস প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে।  

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখেন এবং লোকদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন। তখন সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহুদি ও নাসারারাও এই দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ! আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখবো। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছর আগমনের আগেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। (মুসলিম, হাদিস নং: ১৯৯৬)

অন্য হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো। আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো। ’ (মুসনাদে আহমাদ ১/২৪১)

ইমাম শাফেয়ি ও তার অনুসারীরা এবং ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ আলেমগণ বলেন, ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ উভয় দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ তারিখে রোযা রেখেছেন এবং ৯ তারিখে রোযা রাখার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
এমএমইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।