ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

করোনা রোগীর সেবা ও দাফন-কাফন আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
করোনা রোগীর সেবা ও দাফন-কাফন আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব

করোনা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে মানুষ যেন মানবিক দায়িত্ববোধ হারাতে বসেছে। ধর্মীয় দায়-দায়িত্বও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবজ্ঞা ও উপেক্ষার পর্যায়ে চলে এসেছে। করোনা একটি সংক্রামক ব্যাধি, ব্যাপক বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা’ বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতে করোনা আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে ধর্মীয় দায়িত্ব চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে।

করোনা আক্রান্ত সন্দেহে গর্ভধারিণী মাকে রাতের আঁধারে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটছে আমাদের সমাজে। মৃত বাবার গোসল ও জানাজাতে সন্তানের অনীহা, মৃত ভাইয়ের শেষ অধিকারটুকু সহোদরের অস্বীকার, মৃত স্বজন থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।

অথচ অসুস্থ মুমিন ব্যক্তি অন্য মুমিনদের কাছে সেবা পাওয়া তার অধিকার। মৃত মুমিনের জানাজার নামাজ আদায় করতে অন্য মুমিন ধর্মীয় বিধানমতে দায়বদ্ধ। আর এটা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদতও বটে।

বিপদগ্রস্তকে সহায়তা করার সওয়াব: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন মুমিনের ওপর অন্য মুমিনের সাতটি অধিকারের কথা বর্ণনা করেছেন। তম্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো, কোনো মুমিন অসুস্থ হলে তার সেবা করা। (সহিহ আল বোখারি, হাদিস: ১০)

বর্তমান সময়ে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি অসহায় ও বিপদাপন্ন। আর বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন-মুসলমানকে পার্থিব বিপদের মধ্য থেকে কোনো একটি বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার কিয়ামতের দিনের বিপদের কোনো একটি বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৬) 

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ও জানাজার সওয়াব: মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর মধ্যে রয়েছে সীমাহীন সওয়াব। এক হাদিসে রাসুলল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মাইয়্যাতকে গোসল করাবে এবং তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিয়ামতের দিন তার পাপকে গোপন করবেন। আর যে কোনো মুরদাকে কাফন পরাবে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে রেশমের পোশাক পরাবেন। (ত্বাবারানী, হাদিস:৮০০৪) আর কোনো মুমিন-মুসলমান মারা গেলে জীবিতরা জানাজা আদায় করবে এটা তার অধিকার।

ওপরে উদ্ধৃত হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বর্ণিত হাদিসে এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের যে সাতটি অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আরেকটি অধিকার হলো কোনো মুসলমান মারা গেলে তার জানাযজায় অংশগ্রহণ করা। আর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণের সওয়াব সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় কোন মুসলমান ব্যক্তির শবদেহের অনুগামী হবে ও তার জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করবে এবং তাকে দাফন করবে, তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ আদায় করে দাফন করার আগেই ফিরে যাবে সে এক কিরাত সওয়াব নিয়ে ফিরে যাবে। (সুনানে নাসায়ী, হাদিস: ১৯৯৬)

এদিকে, করোনা মহামারির বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। সে কর্তব্যে অবহেলা করলে করোনা বিস্তারে সহায়তা করা হবে, প্রকারান্তরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা হবে। যা সম্পূর্ণ হারাম। যদি কেউ নিজের অবহেলার কারণে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সেটা হবে, তার আত্মহুতির শামিল।

আর আত্মহত্যাকারী জাহান্নামী হবে, একথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সবশেষে বলবো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মান্য করে করোনা রোগীর সেবা করা এবং করোনায় মৃত্যুবরণকারীর গোসল দেওয়া ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করা আমাদের দ্বীনি ও মানবিক দায়িত্ব। আর এর মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পারি সীমাহীন সব জান্নাত।

লেখক: পেশ ইমাম রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।