ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের প্রথম অনুবাদক

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের প্রথম অনুবাদক

মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে কোরীয় উপদ্বীপের সঙ্গে মুসলিম ব্যবসায়ীদের সংযোগ স্থায়িত্ব খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে। মুসলিম ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদ ইবনে খারদাজবাহের বর্ণনা মতে কোরিয়ান উপদ্বীপে খ্রিস্টীয় নবম শতকে শিলা রাজ্যে মুসলিমদের স্থায়ী আবাস গড়ে ওঠে।

যখন আরব ও পার্সিয়ান মুসলিম ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সেখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। খ্রিস্টীয় ১৬ শতক পর্যন্ত কোরীয় উপদ্বীপে বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে মুসলিম ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ, মুসলিমদের সঙ্গে সখ্যতা, বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণ। এমনকি প্রশাসনিক পদে মুসলিমদের দায়িত্ব পালনের বিবরণ পাওয়া যায়। এরপর শাসকদের বৈরী মনোভব, আন্তর্ধর্মীয় বিয়ে, ইসলামী জ্ঞানচর্চার অভাব এবং ইসলামী ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি কারণে কোরীয় উপদ্বীপে মুসলিমদের স্বকীয়তা ও অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে যায়।

১৯১০ সালে জাপান কোরীয় উপদ্বীপের দখল নেওয়ার পর বহু সংখ্যক কোরিয়ান নাগরিক চীনে আশ্রয় নেয় এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এছাড়া কোরিয়া যুদ্ধের সময় তুরস্ক দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ নেয় এবং এখানে প্রায় কয়েক হাজার সৈন্য দেশটিতে দায়িত্ব পালন করে। তখন তুর্কি সেনাদের সংশ্রবে বহু কোরিয়ান নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত কোরিয়ান নাগরিকরাও ইসলাম গ্রহণ করে, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত মুসলিম অভিবাসীদের মাধ্যমেও বহুজন ইসলাম গ্রহণ করেছে। ১৯৫৫ সালে তুর্কি সেনাদের তত্ত্বাবধানে সিউলে প্রথম অস্থায়ী মসজিদ নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালে মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতায় সিউলে স্থায়ী মসজিদ নির্মিত হয়।

কোরিয়ানদের সঙ্গে ইসলামের সংযোগ প্রায় ১২শ’ বছর আগে হলেও গত শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের কোনো অনুবাদ ছিল না। ড. হামিদ চৈ ইয়ং কিল কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের অনুবাদ করেন। কাজটি করতে তার সময় লেগেছিল সাত বছর। তিনি ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ’-এর সদস্য এবং ‘কোরিয়ান মুসলিম ফেডারেশন’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত জীবনে ড. হামিদ চৈ ইয়ং কিল একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কর্ম জীবনে মিয়নজি বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ড. হামিদ চৈ-এর বর্তমান বয়স ৭০ বছর। তবে তার শৈশব ও পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ২০০৮ সালে তিনি কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেশন’ লাভ করলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার নাম উচ্চারিত হয়।

গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যানুসারে ড. হামিদ চৈ ১৯৭৫ সালে হানকুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন। তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মদিনা থেকে ‘ফান্টামেন্টালস অব রিলিজিয়ন অ্যান্ড দাওয়াহ’ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন (১৯৭৬-১৯৮০ খ্রি.)। এ সময় আরববিশ্বের খ্যাতিমান আলেম শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে সুদানের খার্তুমে অবস্থিত উমদুর্মান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ইসলামিক কল ইন কোরিয়া’ শিরোনামে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. হামিদ চৈ ইয়াং কিল আল্লামা শফিউর রহমান মুবারকপুরি রচিত মহানবী (সা.)-এর জীবনী গ্রন্থ ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’-এর কোরিয়ান অনুবাদের জন্য ২০০৮ সালে তিনি কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেশন’ লাভ করেন। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো কোরিয়ান ভাষায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ সম্পন্ন করা। এটিই কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের প্রথম অনুবাদ। এছাড়া তিনি ৩০টির বেশি ইসলামী বই কোরিয়ান ভাষায় ভাষান্তর করেছেন।

তথ্যসূত্র : আরব নিউজ, আল-ইকতিসাদিয়্যাহ, কোরিয়া-আরব ডটঅর্গ ও উইকিপিডিয়া

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।