সংসার জীবনের স্বর্ণালি স্মৃতিতে মোহাবিষ্ট হয়ে কায়মনোবাক্যে বরাবরই স্বামীর জন্য আকুল প্রার্থনায় ছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতেও বারবার ছুটেছেন স্বামীর দূয়ারে।
প্রিয়তম স্বামীর জীবনের আলো নিভে যাওয়ার ভয়ানক দুঃসংবাদ পেয়েছেন সাত সকালেই। স্থির থাকতে পারেননি। একমাত্র সন্তান রাহগীর আল মাহে সাদ এরশাদকে সঙ্গে নিয়েই ছুটলেন নিজেদের আলাদা করতে। কিন্তু স্বামীর পাশে যেতেই স্ত্রী দুর্বিনীত কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এ কান্না থামার নয়।
বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠা এ কান্না স্পর্শ করছে কাছের মানুষ থেকে দূরের মানুষকেও। অধিক শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। কথাও বলছেন কম। বন্ধ রেখেছের নিজের সেলফোন। ৬৩ বছরের অম্ল-মধুর সম্পর্কের ইতি টেনে শূন্য হৃদয় নিয়ে গুলশানের বাড়িতে এখন স্তব্ধ-নির্বাক রওশন এরশাদ।
রোববার (১৪ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কয়েক দফা বিরোধী দলীয় উপনেতার সহকারী একান্ত সচিব মামুন হাসান ও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো এমন দৃশ্যপট।
জানা যায়, ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে রওশনকে বিয়ে করেন সেনা কর্মকর্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। চাকরির কারণে বিয়ের পরপরই সংসার করা হয়ে ওঠেনি। ওই সময় রওশন নিজের পড়াশোনার জন্য ময়মনসিংহে থেকেছেন। স্ত্রীর জন্য আকুল হৃদয়ে সেই সময় নিয়মিতই ‘ডেইজি’ সম্বোধন করে তাকে চিঠি লিখতেন এরশাদ।
নানা ঘাটে এরশাদের জীবন বাঁক নিলেও জীবনের গোধূলি বেলায় এসেও নিজের স্বামী অন্তঃপ্রাণ মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন রওশন। দু’জন আলাদা বসবাস করলেও কথাবার্তা হতো নিয়মিতই। এরশাদের রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি দুঃসময়েই পাশে ছিলেন। ভাঙনের মুখ থেকে রক্ষা করেছেন জাতীয় পার্টিকে।
বিভিন্ন সময় এরশাদ ও রওশনের মধ্যকার দ্বন্দ্বের বিষয়টি ছিল বহুল চর্চিত বিষয়। তবে এ সম্পর্কে দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, দু’জনের সম্পর্ক ছিল মধুর। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মান-অভিমান হয়। কিন্তু কেউ কাউকে কোনোদিনই ছোট করে কথা বলেননি। সম্পর্ক অবনতির বিষয়টি ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতার প্রকাশ। মূলত সব সময়ই স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই দু’জনের মর্যাদা রক্ষা করেছেন।
ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট স্যার আর ম্যাডামের মধ্যে কখনোই কথাবার্তা বন্ধ হয়নি। দু’জন দু’জনকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে একটি কুচক্রি মহল তাদের মাঝে বিভেদের অপপ্রচার করতেন। ’
জাপার নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন নিয়মিতই তাকে দেখতে গেছেন রওশন এরশাদ। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। জাতীয় সংসদেও নিজের প্রতিটি বক্তৃতায় স্বামীর প্রসঙ্গ টেনে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন। আসলে তাদের দু’জনের সম্পর্কের গভীরতা পরিমাপ করার মতো মন ছিল না ষড়যন্ত্রকারীদের। তাই দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে সব সময়ই কুৎসা রটিয়েছে তার।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতার সহকারী একান্ত সচিব মামুন হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সিএমইচে দেখেছি স্যারের কাছে গিয়ে ম্যাডাম যতোবার হাত বাড়িয়েছেন স্যার হাত ধরেছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা স্বামীর পাশে বসে ম্যাডাম কোরআন তেলাওয়াত করেছেন। ’
তিনি বলেন, ‘জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। স্যারকে হারিয়ে ম্যাডাম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সকাল থেকেই অঝোরে কেঁদেছেন। এখন অনেকটা পাথর হয়ে গেছেন। ’
বাংলাদেশ সময় ১৬২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
এমএএএম/এইচএ/