ঢাকা : আনন্দময় শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবার তার সেই স্বপ্নই পূরণ হতে চলছে।
ভবিষ্যতে আর কেউই হয়তো স্কুলে যাওয়ার ভয়ে জ্বর কামনা করবে না অথবা ভেজা জুতো পায়ে রোদেও ঘুরে বেড়াবে না। সবাই খেলাচ্ছলে শিখবে সব কঠিন পড়াগুলোও।
শিশুরা হয়তো আর স্কুলকে ভয় পাবে না, মুখটা গোমড়া করে অস্থিরভাবে ছুটির ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করবে না।
এমনই নজির পাওয়া যাচ্ছে ইদানিং অনেক স্কুলে। ছোট্ট মিতুর আজ বাসাভর্তি মেহমান। বন্ধুদের সঙ্গে খেলবে বলে নানা অজুহাত দেখিয়ে স্কুল ফাঁকি দেওয়া তার পুরনো অভ্যাস। পরিবারের সবারই এটা জানা। আজও নির্ঘাৎ স্কুল কামাই করবে বলে ধারণা ছিল সবার।
কিন্তু না, সকালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে ফিটফাট হয়ে স্কুলে রওনা হলো। অবশেষে তার মা রহস্যের জট খুললেন।
জানালেন, তাদের স্কুলে এখন কম্পিউটারে পড়ানো হয়। ছবি দেখিয়ে, গান শুনিয়ে, মন রাঙিয়ে সবাই সবকিছু আরও সহজে বুঝে নেয়।
স্কুলপ্রীতি বাড়িয়ে দেওয়া এই আধুনিক পদ্ধতিকে ‘ডিজিটাল পদ্ধতি’ হিসেবে পরিচিত করানো হচ্ছে।
শ্রেণীকক্ষের যেখানে আগে বড় একটি কালো বোর্ড থাকতো, চক দিয়ে লেখা বা আঁকা হতো। সেখানেই আজ বসানো হয়েছে বড় একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর।
সে প্রজেক্টরেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এখন শুধু কালো অক্ষরে লেখা দিয়েই শেখানো হবে না ছাত্রছাত্রীদের বরং বাজিয়ে শোনা যাবে। দাঁড়িয়ে আবেগাপ্লুত হবে সবাই।
শুধু তাই নয়, তার সঙ্গেই দেখা যাবে বাংলার মেঠোপথে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়ে চলা কৃষকের মুখটির মায়াও।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ্রেণীকক্ষে সম্প্রতি এই আনন্দময় শিক্ষাদান পদ্ধতির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ দেখে তিনি নিজেও আনন্দিত। জানালেন, ‘শুধু এই স্কুলেই নয়। চলতি বছরের মধ্যেই সারাদেশে ২০ হাজার ৫০০টি স্কুলে এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হচ্ছে। ’
শিক্ষামন্ত্রী অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, ‘প্রথমদিকে অনেক বাবা-মা নতুন এই পদ্ধতি পছন্দ করতে পারছিলেন না। পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল তাদের মনে।
অনেকেই চাইছিলেন এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন তার বাচ্চার ক্ষেত্রে না হয়। পদ্ধতিটি চালু হলেও পরে হোক, যখন তার বাচ্চা পড়া শেষে বের হয়ে যাবে।
কিন্তু তারাই পরে খুশি মনে মেনে নিয়েছেন। বরং জানতে চাচ্ছিলেন, ছেলেমেয়েরা এতো বেশি নম্বর পাচ্ছে কি করে? আর স্কুলে আসার আগ্রহটাও এত বাড়লো কোন জাদুতে!’
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এরই মধ্যে সারাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩ লাখ শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১৭টি মোবাইল কম্পিউটার ল্যাব গাড়ি সারাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এগুলোর উদ্দেশ্য প্রত্যন্ত এলাকার যেসব মানুষ বিশেষ করে যেসব শিশু-কিশোর এখনো কম্পিউটার দেখেইনি তাদের কাছে একে পরিচিত করানো, এর প্রতি আগ্রহী করে তোলা।
উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষানীতি ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন আর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেশের ৩১ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরবরাহ করা হয়েছে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা উপকরণ।
শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে একটি বিষয় শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১২
সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান ও কাজল কেয়া, নিউজরুম এডিটর