টিপটিপ বৃষ্টির এক বিকেলে রাজধানীর বিজয় সরণী মোড়ে ছোট্ট মেয়ে মিন্তির সঙ্গে কথা হয়েছিলো। মেয়েটি তার হাতের গোলাপগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কেনার জন্য জোড় করছিলো।
ফুলগুলো খুশিমনেই কিনে নিলাম। তার লালচে চুলে হাত দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করায়, সে হাসিমুখে বললো মিন্তি। মনে আছে সেই বিকেলে বেশ কিছুক্ষণ মিন্তির সঙ্গে কথা বলেছিলাম।
বন্ধুরা বুঝতেই পারছ, মিন্তি হলো রাস্তার এক হতভাগ্য শিশুশ্রমিক। তার সাথে কথা বলে জেনেছিলাম, মাত্র ১০বছর বয়স থেকেই সে তার সংসারের জন্য আয় করা শুরু করেছে। মিন্তির মতন এমন অনেক শিশুই নিজের ও পরিবারের দু’মুঠো খাবার সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত অমানুষিক শ্রম দিয়ে যাচ্ছে, যার কোন হিসেবও আমরা রাখি না।
১ মে আসলেই আমরা পত্রিকার প্রথম পাতায় মিন্তির মত হাজারো শিশুর জীবনযুদ্ধে লড়াইয়ের ছবি দেখি। প্রচণ্ড রোদে খালি গায়ে মাথায় পণ্যের বোঝা নিয়ে ফেরি করা, উত্তপ্ত পিচঢালা পথে খালি পায়ে ঠেলা, রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে ব্যস্ত শ্রমিক অথবা কারখানার দূষিত পরিবেশে শিশু শ্রমিকের শ্রমদানের দৃশ্য…। তাদের এই অসহায়ত্বের চিত্রকল্প শিল্পীত রূপে উপস্থাপনে ব্যস্ত হতে হয় ফটো সাংবাদিকদের। ১ মে`কে সামনে রেখে এসব ছবি তুলতে গিয়ে অস্বস্তিতে পরে যান ফটোগ্রাফাররা। আবার এসব ছবি দেশীয় আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়নও তোলে। তবে ছবির প্রাণ ওইসব শিশুদের ভাগ্য ফেরে না।
যেভাবে মে দিবস
তোমরা অনেকেই জানো, ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন শ্রমিকরা। তাদের সেই আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলি চালালে কয়েকজন শ্রমিক প্রাণ হারান। তাদের সেই আত্মত্যাগের ফলেই যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প মালিকরা শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। সেই থেকে পালিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস।
দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করার দাবি তাদের জন্যই অর্জিত হয়েছিলো– যারা কলকারখানায়, অফিস-আদালতে কাজ করতেন এবং সপ্তাহান্তে বেতন পেতেন। কিন্তু আমাদের দেশের অগণিত সাধারণ মানুষ আর শ্রমিকদের কোন কারখানা বা অফিস আদালত নেই। তাদের শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত নেই। পরের দিনের কাজের নিশ্চয়তা নেই। আর এসব শ্রমিকদের মধ্যে যারা মিন্তির মত শিশু শ্রমিক- তাদের অসহায়ত্ব আর কষ্টটা সবচেয়ে বেশি।
সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি/আহসান কবীর, আউটপুট এডিটর