লেখার শিরোনাম দেখে নিশ্চয় অনুমান করতে পারছো কয়লা তৈরি হয় কীভাবে। হ্যাঁ ঠিকই বলেছ।
খনিতে কয়লা কীভাবে থাকে
মানুষ নানা ধরনের পরীক্ষা করে যখন জানতে পারে কোথাও কয়লার খনি আছে, তখনই শুরু হয় মাটির নিচ থেকে কয়লা তুলে আনার প্রচেষ্টা। একে বলে মাইনিং। কিন্তু কাজটি মোটেও সহজ নয়। কারণ মাটির গভীরে কয়লা থাকে। এজন্য মাটির ওপর থেকে সুড়ঙ্গ করে পৌঁছাতে হয় সেখানে। ভূগর্ভে কয়লার স্তরের নিচে যা থাকে তাকে বলে fire clay, কয়লার স্তরের ওপরে sandstone বা shale থাকে। এগুলো শক্ত পাথরের মতো পোড়ামাটিÑতার মধ্যে গাছের কা-, ডাল প্রভৃতির চিহ্ন পাওয়া যায়। কয়লা খনিতে স্তরের পর স্তরে কয়লা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে পুরু পাথরের স্তরও থাকে। থাকে গাছপালার কঙ্কাল বা ফসিল।
কয়লার শ্রেণী
কার্বন মৌলের অবিশুদ্ধ রূপ কয়লা। অপর্যাপ্ত বাতাসে কাঠ পোড়ালে কয়লা হয়। এর নাম কাঠকয়লা। ভূগর্ভে খনিতে পাওয়া যায় পাথরের মাতো শক্ত এক ধরনের শিলাখ-, এর নাম খনিজ কয়লা। এছাড়াও আছে প্রাণীজ কয়লা, ভুসা কয়লা, সক্রিয় কয়লা, শর্করা কয়লা প্রভৃতি। প্রাণীদেহের চর্বিমুক্ত হাড়ের বিধ্বংসী পাতনের ফলে উৎপন্ন হয় প্রাণীজ বা অস্থিজ কয়লা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়লার কার্বনের অনুপাত বাড়তে থাকে এবং কয়লার গুণগত মানও বৃদ্ধি পায়। এজন্য খনিজ কয়লার মধ্যেও শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। যেমনÑ পীট কয়লা, লিগনাইট, বিটুমিনাস এবং অ্যানথ্রাসাইট।
কয়লার ব্যবহার শুরু
বিদ্যুৎ আবিষ্কারের আগে কোল বা কয়লা গ্যাস দিয়ে আলো জ্বালানো হতো। ১৭৯২ সালে স্কটল্যান্ডে উইলিয়াম মার্ডক প্রথম কোল গ্যাস দিয়ে তার বাড়ি আলোকিত করেন। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ কয়লার ব্যবহার জানত (২০০০ খ্রিস্টপূর্ব)। খ্রিস্টিয় নবম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে খনি থেকে কয়লা তোলা শুরু হয়। ১৩শ শতকে শিল্পক্ষেত্রে কয়লার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। কাঠকয়লা জ্বালানি হিসেবে, ধাতু নিষ্কাশনে, বারুদ প্রস্তুতিতে, ফিল্টার তৈরিতে এবং ভুসা কয়লা ছাপার কালি, রঞ্জক প্রস্তুতে ব্যবহার হয়। সক্রিয় কয়লা দূষিত গ্যাস পরিশোধন করে বলে গ্যাস মুখোশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। খনিজ কয়লা প্রধাণত ব্যবহৃত হয় জ্বালানি হিসেবে। এছাড়া কয়লা থেকে কোল, গ্যাস, ওষুধ, রং, কীটনাশক, স্যাকারিন, রেনজিন, টলুইন, ন্যাপথলিন, আলকাতরা প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস আবি®কৃত হওয়ার পর জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার কমে যায়।
খনি থেকে কয়লা তোলা
কয়লা খনিতে নামার সুড়ঙ্গপথের মুখে পধমব বা ডুলির মতো একটি কুঠুরি একবার উপরে উঠে আসে, আবার নিচে নেমে যায়। এর সাহায্যে খনিশ্রমিকরা খনির মধ্যে নেমে যায়। এবং প্রয়োজনে আবার উপরে উঠে আসে। অন্ধকার খনিগর্ভে শ্রমিকরা বিশেষভাবে তৈরি আলো হাতে কিংবা হ্যালমেটের মাথায় জ্বালানো আলোর সাহায্যে কাজ করে। এই আলোকে বলে মাইনারস সেফটি ল্যাম্প। শ্রমিকরা খনি থেকে চাপ চাপ কয়লা আয়রনম্যান নামক এক ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে কেটে বের করে। এই যন্ত্রের সাহায্যে কয়লার চাঁই কাটা হয়। কয়লা কেটে বের করে নিলে সে জায়গায় ফাঁকা গর্তের মতো সৃষ্টি হয়। ক্রমশ কয়লা কাটতে কাটতে ফাঁকা স্থানটি হয়ে দাঁড়ায় বিরাট এক সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গের ওপর থাকে চাপ চাপ কয়লা। কয়লা যাতে উপর থেকে ভেঙে না পড়ে সেজন্য বড় বড় কাঠের খুঁটি দিয়ে তার ওপর মোটা কাঠের তক্তা সাজিয়ে কয়লার ওপরের স্তরকে ঠেলে রাখা হয়।
শেষ কথা
পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে কয়লার খনি। এদের মধ্যে চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং কানাডায় প্রাপ্ত কয়লা খনিগুলোতে পাওয়া যায় উন্নতমানের কয়লা। আমাদের দেশেও আছে বেশ কয়েকটি কয়লা খনি। এর মধ্যে দিনাজপুর, জামালগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা অঞ্চলে আবি®কৃত পিট কায়লার খনি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।