ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সৈয়দপুরের দৃষ্টিনন্দন গীর্জা

রোমান স্থাপত্যকলার নিদর্শন

নুর আলম, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১২
রোমান স্থাপত্যকলার নিদর্শন

সৈয়দপুর শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল কোম্পানি (বৃটিশ) শাসনামলে। ওই সময় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের গোড়াপত্তন সূত্রে সৈয়দপুর শহরের গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ।

সে সময়ে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের আওতায় সৈয়দপুর ছিল একটি ছোট রেলওয়ে স্টেশন।

এ রেলওয়ে স্টেশনের সোজা উত্তর পাশে স্থাপন করা হয় ছোট একটি লোকোশেড। লোকোশেডটি ছিল আজকের দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানার ভিত্তিভূমি। পরবর্তীতে এ লোকোশেডটিকে ঘিরেই ১০৬ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বিশাল রেলওয়ে কারখানা।

কারখানাটি স্থাপনে বৃটিশরা বিবেচনায় নিয়েছিল এ এলাকার জলবায়ু ও পরিবেশগত অবস্থানকে। কারখানায় কাজ করত বহু বৃটিশসহ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। ধর্মবিশ্বাসে এদের একদল ছিল ক্যাথোলিক, অপরদল প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান। রেলওয়ের ব্রিটিশ আর অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এসব কর্মীদের জন্য গড়ে তোলা হয় বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা। এর মধ্যে সাবঅর্ডিনেট কলোনি বা সাহেবপাড়া ছিল অন্যতম। এখানে বৃটিশ ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ান খ্রিস্টানদের বসবাস ছিল বলে এ কলোনির নাম ছিল সাহেবপাড়া। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য বৃটিশ সরকার সাহেব পাড়ার দু’প্রান্তে দুটি গির্জা নির্মাণ করে। গির্জা দুটির মধ্যে ১টি ছিল রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এবং অপরটি ছিল প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের।

গির্জা দুটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সর্বপ্রথম এবং প্রাচীনতম গীর্জা। এর নির্মাণ শৈলী ছিল রোমান-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতি ও কলায় সমৃদ্ধ। এর মধ্যে রেলওয়ে কারখানা গেট সংলগ্ন গির্জাটি কুমারী মেরি (মারিয়ামের) নামে উৎসর্গ করা হয়। বৃটিশ সরকার ১৮৯২ সালে গির্জার পাশেই রেলওয়ের ৩ বিঘা জমির ওপর একটি পুরোহিত ভবন নির্মাণ করেন। তখন ফাদার ফ্যান্সির রোমালিমে যীশু খৃস্টের ভক্তদের নিয়ে আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ইংরেজ ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলেও কিছু সংখ্যক অ্যাংলো এখানেই থেকে যান। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পূর্বে অনেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। ১৯৭১-এ স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ১৬ এপ্রিল সৈয়দপুরে গণহত্যা শুরু হলে অবাঙালি ও পাকি সেনাদের হাতে নিহত হন বেশ ক’জন খ্রিস্টান।

একসময় সৈয়দপুরে রেলওয়ের এ কারখানাকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় আগমন ঘটেছিল বৃটিশ ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের। কালের বিবর্তনে তারা আজ না থাকলেও রয়ে গেছে ক্ষুদ্র পরিসরে তাদের গড়া ধর্মপল্লী। সাবঅর্ডিনেট কলোনি বা সাহেবপাড়া। সেই সাহেবরা অর্থাৎ তাদের বংশধররা সাহেবপাড়ায় আজ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু রয়ে গেছে সাহেবপাড়া আর এ সাহেবপাড়ার দু’প্রান্তে দুটি দর্শনীয় গীর্জা আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যার স্থাপত্যকলা ও নির্মাণ শৈলী মুগ্ধ করে সৈয়দপুরে আগত প্রতিটি মানুষকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১২
প্রতিনিধি/এএ, সম্পাদনা: আহসান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।