ধরো, কালকে তোমার কোনো বন্ধুর বাসায় তোমার দাওয়াত আছে। কিন্তু তার বাসা তুমি চেনো না।
তোমার জন্যই গুগল তৈরি করেছে দারুণ একটি সফটওয়্যার। নাম তার গুগল আর্থ। ‘আর্থ’ শব্দের অর্থ পৃথিবী, আর পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এর মাধ্যমে তুমি যেতে পারবে না! হোক তা আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা তোমার বাসার পাশের খেলার মাঠ।
সবখানে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে তুমি! আর এজন্য শুধু তোমার কম্পিউটার আর ইন্টারনেট কানেকশনই যথেষ্ট।
অবাক হচ্ছো? এ আবার কীভাবে সম্ভব?
এখনই প্রমাণ হয়ে যাক। এই লিংকের ওপর ক্লিক করো। তারপর যে বক্সটি আসবে সেখানে save file লেখাতে ক্লিক করলে সফটওয়্যারটি তোমার কম্পিউটারে সেভ হয়ে যাবে। এখন ইন্সটল করে নাও। খুব সহজেই এটি ইন্সটল করতে পারবে, কোনো সমস্যা হলে বড় কারও সাহায্য নাও।
এবার দেখবে তোমার ডেস্কটপে গুগল আর্থের একটি আইকন এসেছে। সেখানে ক্লিক করলেই- বিশ্ব তোমার হাতের মুঠোয়!
শুরুতেই যে গোল পৃথিবীকে দেখবে, তাকে ইচ্ছে করলেই মাউস দিয়ে যেমন খুশি নাচিয়ে নিতে পারো। কিংবা পৃথিবীর গায়ের যে কোনো জায়গায় ডাবল ক্লিক করে সরাসরি সেখানে চলে যেতে পারো।
আচ্ছা, তোমার সেই বন্ধুর কথা ধরা যাক, যার বাসায় তোমার দাওয়াত আছে। মনে করো, ওর বাসা ঢাকার ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর। আর তোমার বাসা মিরপুর ২ নম্বর। ধানমণ্ডি তুমি মোটেই চেনো না।
গুগল আর্থের যেখানে পৃথিবীর ছবি দেখতে পাচ্ছো, তার বামপাশে দেখো একটি সার্চবক্স আছে। সেখানে ইংরেজিতে লেখো- ‘মিরপুর ২, ঢাকা, বাংলাদেশ’। আর দেখো ম্যাজিক! এক লাফে পৃথিবী ঘুরিয়ে ঠিক তোমাকে মিরপুরে নিয়ে এসেছে আর্থ! তোমার ইন্টারনেট কানেকশন যদি দ্রুতগতির হয়, তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মিরপুর ২-এর ঝকঝকে ছবি দেখতে পাবে তুমি। কিন্তু ইন্টারনেট কানেকশন ধীরগতির হলে একটু সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ৩০-৪০ সেকেন্ডের মতো ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করো।
এবার দেখো তো, চেনা চেনা লাগছে কি? মাউস ব্যবহার করে রাস্তাঘাট জুম করো। বাড়িঘরের ছবি একটু মনযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করো। পরিচিত কিছু চোখে পড়ছে কি? কোনো রাস্তা দেখে কি মনে হচ্ছে, “আরে! আমি তো এ পথ দিয়েই স্কুলে যাই!” কিংবা তোমার বাসার আশেপাশে কোনো পরিচিত জায়গা থাকলে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। যেমন- তোমার বাসা মিরপুর ২ নম্বর হলে মিরপুর চিড়িয়াখানা তোমার বাসা থেকে বেশি দূরে নয়। একটু ভালোমতো খুঁজলেই পেয়ে যাবে চিড়িয়াখানা।
তাও পাচ্ছো না? খেয়াল করে দেখো, প্রতিটি রাস্তার ওপরই লেখা রয়েছে কোনটি কতো নম্বর রোড, কোন ব্লক। তাহলে বাসার কাউকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নাও তোমার বাসা কতো নম্বর রোডে, কোন ব্লকে। এবার মিরপুর ২ নম্বরের মধ্যে ঐ নম্বরের রোড খুঁজতে থাকো। না পেলে সার্চবক্সে মিরপুর ২-এর আগে রোড নম্বরও লেখো। প্রথম প্রথম হয়তো কিন্তু একটু কষ্ট হবে, কিন্তু একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলেই খুব সহজে যে কোনো রাস্তা/এলাকা এভাবে বের করতে পারবে।
এতোক্ষণে নিশ্চয়ই তোমার বাসার রোডটি পেয়ে গেছো। খেয়াল করে দেখো তো, পরিচিত লাগছে কি? রোডের মাথার মাঠটা দেখা যাচ্ছে কি? কিংবা রোডের সবচেয়ে উঁচু বাড়িটা চিনতে পারছো কি? এবার আরেকটু ভালোভাবে আশেপাশে খেয়াল করে দেখো, তোমার মনে আছে এমন কোনো বাড়ি খুঁজতে থাকো। এভাবে খুঁজতে থাকো... হ্যাঁ, ওটাই তোমার বাসা! ঐ যে পাশে তোমার বন্ধুর বাসা, বাসার সামনের এই রাস্তা দিয়েই তো তুমি প্রতিদিন স্কুলে যাও!
খুব মজা লাগছে না? কিন্তু তোমার তো বন্ধুর বাসায় সেই ধানমণ্ডি যেতে হবে! কিন্তু তার আগে তোমার বাসার অবস্থানটি মাউসে ক্লিক করে সেভ করে রাখতে পারো, যাতে পরের বার মুহূর্তের মধ্যে খুঁজে পাও।
পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় দেশে শুধু রাস্তা নয়, ঠিকানা দিলেই বন্ধুর বাড়ির ঠিক সামনে নিয়ে যেতে পারবে গুগল আর্থ। সেসব দেশের রাস্তাঘাটকে ঠিক বাস্তবের মতোই ঘুরে বেড়াতে পারবে তুমি। একে বলা হয় গুগল স্ট্রিট ভিউ। কিন্তু আমাদের দেশে এ সুবিধাটি এখনও চালু না হওয়ায় অচেনা জায়গার রাস্তা পর্যন্ত বের করা সহজ, বাকিটুকু কষ্ট করে নিজেদেরই করে নিতে হবে।
অবশ্য জায়গাটি তোমার ভালোমতো চেনা থাকলে নিজের বাসার মতো সহজেই কাঙ্ক্ষিত জায়গা খুঁজে বের করতে পারবে। দেখবে প্রতিটি জায়গায়ই অনেক ছোট ছোট ট্যাগ রয়েছে। সেগুলো বলে দিচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো দোকান, অফিস, স্কুল বা বাড়ির নাম। সেসব খেয়াল করে বাসার মতো পরিচিত জায়গা, যেমন স্কুল, খেলার মাঠ ইত্যাদি বের করো।
তবে সাবধান! বড় কারও সাহায্য ছাড়া ভুলেও শুধু গুগল আর্থ দেখে কোনো অচেনা জায়গায় যেও না! শুধু ম্যাপ দেখে অনেক জায়গা চিনতে না-ও পারো।
এছাড়া বিশ্বের বিখ্যাত যতো স্থান আছে, সবই ঘরে বসে ঘুরে বেড়াতে পারবে। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, আইফেল টাওয়ার, পিরামিড, মাদাম তুসো জাদুঘর, তাজমহল ইত্যাদির দারুণ স্পষ্ট ও থ্রিডি ছবি দেখতে পাবে। বিদেশের যে কোনো রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াতে পারবে ইচ্ছে মতো।
আমাদের দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত ও বড় বড় স্থাপনা, যেমন জাতীয় সংসদ ভবন, মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ইত্যাদির থ্রিডি ছবিও দেখতে পাবে। এগুলো খুঁজে বের করাও সহজ, নাম দিয়ে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবে।
জানলে তো কীভাবে আর্থ থেকে যে কোনো ঠিকানা বের করতে হয়। কিন্তু এই দারুণ কাজটি গুগল কীভাবে করছে জানো? তারা পৃথিবী থেকে কিছু স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ পাঠিয়েছে আকাশে। যা অনবরত আমাদের পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে। তুমি যে মুহূর্তে আর্থে কোনো একটি জায়গায় যাচ্ছো, তক্ষুণি স্যাটেলাইট আকাশ থেকে সে জায়গার ছবি তুলে তোমার কম্পিউটারে পাঠাচ্ছে। সেই ছবি থেকেই তুমি খুঁজে খুঁজে দরকারি জায়গাটি বের করছো।
তবে গুগল আর্থের ম্যাজিক কিন্তু এখানেই শেষ নয়! এর নতুন সংস্করণগুলোয় তুমি পৃথিবীর মতোই ঘুরে বেড়াতে পারবে মহাকাশে, মঙ্গল গ্রহে কিংবা চাঁদে। এমনকি বিমানে চড়ে পৃথিবী ঘুড়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা পাবে কম্পিউটারের সামনে বসেই!
সেসব গল্প আরেক দিন। আপাতত ঘরে বসেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়ে অভ্যস্ত হয়ে নাও ‘পৃথিবী’র গুগল আর্থে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি- ichchheghuri@banglanews24.com