ভাষা আমাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। তাই দেশে দেশে সবারই রয়েছে নিজস্ব ভাষা।
আমাদের রয়েছে বাংলা ভাষা, ইংরেজদের রয়েছে ইংরেজি ভাষা, ফ্রান্সের মানুষদের জন্যে রয়েছে ফরাসি ভাষা। আবার একই দেশে রয়েছে একাধিক ভাষা। এভাবে পৃথিবীতে প্রায় ৬ হাজার ৯শ’ ১২টি ভাষা রয়েছে।
বন্ধুরা, এবার নিশ্চয়ই ভাবছো পৃথিবীতে দেশ তো বেশি নেই, কিন্তু এতো ভাষা কীভাবে? তাই না?
তোমরা নিশ্চয় ভাবছো চীন, ভারত, আমেরিকার মতো বড় দেশেই বোধহয় বেশি ভাষা আছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এগুলোর কোনোটিই নয়। সবচেয়ে বেশি ভাষা যে দেশটিতে রয়েছে তার নাম পাপুয়া নিউ গিনি। আর এদেশে ভাষা ৮২০টি।
পাপুয়া নিউ গিনি পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটি অবস্থিত ওশেনিয়া মহাদেশে। এর আয়তন মাত্র ৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৪০ বর্গ কিলোমিটার। দেশটি ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।
এ দেশের প্রায় পুরো অংশ জুড়েই রয়েছে ঘন জঙ্গল। খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এ দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব। আর এখানে বাস করে অনেকগুলো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ।
ঘন জঙ্গলের কারণে এ মানুষগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াত করা খুবই কঠিন। এমনকি এখানে এমন অনেক স্থান আছে যেখানে হেলিকপ্টার ছাড়া যাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়।
এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে একটি অঞ্চলের মানুষদের ভাষা অন্য অঞ্চলের মানুষদের ভাষা থেকে আলাদা হয়েছে। এক এক অঞ্চলের মানুষ এক এক রকম ভাষা ব্যবহার করে। এ কারণেই দেশজুড়ে এতো ভাষার জন্ম।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে যতো ভাষা রয়েছে তার ১১.৮৬ শতাংশ ভাষাই রয়েছে এ দেশে। তবে মাত্র ১০০০ জন মানুষ কথা বলে এমন ভাষাও রয়েছে এখানে।
পাপুয়া নিউ গিনিতে সবচেয়ে বেশি যে ভাষাটি ব্যবহৃত হয়, তার নাম এনগা। এই ভাষায় কথা বলে প্রায় ২ লাখ মানুষ।
পাপুয়া নিউ গিনির রাজধানী পোর্ট মোর্সবি। এখানে অফিস-আদালতে তিনটি ভাষা ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- ইংরেজি, হিরি মতু, এবং এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা তক পিজিন। কয়েকটি ভাষার উপাদানের মিশ্রণের ফলে প্রস্তুত ভাষাকে পিজিন ভাষা বলা হয়।
যখন কোনো একটি স্থানে বিভিন্ন ভাষার মানুষ একসঙ্গে কাজ করে, তখন নিজেদের মধ্যে যাতে সহজে প্রয়োজনীয় কথাগুলো সারা যায়, সে জন্যে সবার ভাষার উপাদান নিয়ে এ ধরনের ভাষা তৈরি করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এ ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা লাভ করে। পাপুয়া নিউ গিনিতে এ তক পিজিন ভাষা ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে। যেমন, সংসদ অধিবেশন, দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ লেখা, এবং টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিতে।
হিরি মতুও একটি কৃত্রিম ভাষা। এটি প্রস্তুত হয়েছে ইংরেজি, তক পিজিন এবং পাপুয়া নিউ গিনির অন্য কিছু ভাষার মিশ্রণের মাধ্যমে। এর সাহায্যে এখানকার অধিকাংশ মানুষ একে অপরের সঙ্গে কথা বলে। অন্যদিকে ইংরেজি ভাষা এ দেশে ব্যবহৃত হয় কেবল অফিস আদালতে।
এমন ভাষাবৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য দেশ হিসেবে পাপুয়া নিউ গিনি পৃথিবীর মানুষদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। অনেকগুলো ভাষা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ফলে দেশটি পর্যটকদের তীব্রভাবে আকর্ষণ করে।
এখন জেনে নাও পৃথিবীর পাঁচটি সর্বোচ্চ সংখ্যক ভাষার দেশের নাম ও ভাষার সংখ্যা।
দেশের নাম ভাষার সংখ্যা পৃথিবীর সমস্ত ভাষার শতাংশ
পাপুয়া নিউ গিনি ৮২০টি ১১.৮৬%
ইন্দোনেশিয়া ৭৪২টি ১০.৭৩%
নাইজেরিয়া ৫১৬টি ৭.৪৭%
ভারত ৪২৭টি ৬.১৮%
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩১১টি ৪.৫০%
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ভাষা রয়েছে ৩৮টি। বাংলা প্রধান ভাষা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর