বন্ধুরা, সামনেই পহেলা বৈশাখ। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির উৎসব।
পহেলা বৈশাখ অনেক রকমভাবে পালিত হয়। তবে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের একটি বড়ো আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হয় এটি। এতে গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিবাদের ভাষা লুকানো থাকে এ শোভাযাত্রায়। প্রতিবছর এতে অংশ নেয় অনেক অনেক মানুষ। রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিমূর্তি নিয়ে হয় শোভাযাত্রা।
বলছিলাম, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিমূর্তি থাকে শোভাযাত্রায়। মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কি কি প্রাণীর, এখানে প্রাণীরা কেনোই বা থাকে?
১৯৮৯ সালে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রায় ১০টি ছোটো ছোটো ঘোড়া এবং বিশাল এক হাতি উপস্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সাল থেকে ধীরে ধীরে আরো যোগ হয়- বাঘ, কুমির, বানর, পেঁচা, কাকাতুয়া, ময়ূর, দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি এবং আরো অনেক প্রাণী। এছাড়া বাঘের মুখোশ এবং বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় মানুষ।
বন্ধুরা, মঙ্গল শোভাযাত্রায় যেসব প্রাণীকে ব্যবহার করা হয়, তারাও আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে। যেমন ধরা যাক, হাতি আর ঘোড়ার কথা। প্রাচীন আমলে রাজারা যে হাতি আর ঘোড়া করে যুদ্ধে যেতো; যুদ্ধ জয় করে, দেশ বিজয় করে ফিরে আসতো, সে তো আমাদের অজানা নয়। আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কিছু সংখ্যক বন্যহাতি পাওয়া যায়, তা তো এককালে দেশের আরো অনেক জায়গাতেই দেখা যেতো।
শোভাযাত্রায় বাঘ কেনো থাকে সে তো সবারই জানার কথা। আমরা জানি, আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আমাদের একটি জাতীয় প্রতীক বাঘ। বাংলা ১৪১৯ সালের নববর্ষে বের করা হয় একটি বড় বাঘকে। এটি বের হয় চিরায়ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে। তোমাদের হয়তো মনে আছে, সে সময় সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি বানানোর জন্য ভোটাভুটি চলছিলো। তবে মনে হয়, বাঘের বিশাল প্রতিকৃতি বের করে রাজাকারদের বাঘের হালুম শুনিয়ে ভয় দেওয়ারও একটা ব্যাপার ছিলো।
তবে রাজাকারের প্রতীক হিসেবে ১৪১৮ সালের নববর্ষে বের করা হয় বিশাল আকৃতির একটি কদাকার কুমির। বোঝানো হয়েছে, কুৎসিত কুমিরটার মতো রাজাকাররা ছিলো মানুষখেকো। তারা হত্যা করেছে অসংখ্য মানুষ। বিশ্রী সেই কুমিরটাকে তাই একজন বাঙালি পুরুষ ও একজন বাঙালি নারীর পায়ের নিচে দেখানো হয়েছিলো। তবে, দেখো কিন্তু, বাস্তব কুমিরকে আমরা যেনো ঘৃণা করে না বসি। আমাদের দেশ থেকে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে কুমির আর ঘড়িয়াল। আমাদের তিন প্রজাতির কুমিরের দু’টি বিলুপ্ত। একটি বিলুপ্তপ্রায়।
রাতে চলাফেরা করে, চোখ দু’টি সামনের দিকে, গ্রাম-বাংলায় নির্জন রাতে মানুষের বুকে ভয় ধরিয়ে দেয় এমন ডাক ডাকে এমন অনেকগুলো ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের পেঁচা মঙ্গলযাত্রার একটি পরিচিত পাখি। আবার পেঁচা কৃষকের বন্ধু পাখি। তারা ইঁদুর খেয়ে কৃষকের ফসল রক্ষায় সাহায্য করে। ওদিকে, দোয়েল দেশের জাতীয় পাখি হিসেবে শোভাযাত্রায় স্থান পাবে এটা স্বাভাবিক। স্থান পায় ময়ূরও। এদেশে আগে সুন্দর পালকের ময়ূর দেখা যেতো, সুন্দর পাখিটি এখন না পাওয়া গেলেও এটি আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। তবে, বিদেশি পাখি কাকাতুয়া কেনো ১৪১৮ এর নববর্ষে হাজির করা হয়েছিলো, সেটি বোঝা যায় না।
সবশেষে, চলো জেনে নেই, এবারের অর্থাৎ বাংলা ১৪২০ সালের নববর্ষে আমরা কোন কোন প্রাণী দেখতে পাবো। শোনা যাচ্ছে, এবার থাকবে হাতি, বিদ্রোহের প্রতীক ষাঁড় আর শান্তির প্রতীক পায়রা। থাকবে বিভিন্ন রকমের পাখি, খরগোশ আর পেঁচা। আর সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ থাকবে বাঁশ, বেত ও কাঠ দিয়ে তৈরি বিরাট একটি কদাকার সরীসৃপ। অনেকটা ড্রাগনের মতো দেখতে। রাজাকারদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ফুটিয়ে তোলা ধরা হবে এই ড্রাগন দিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com