অপু আর দূর্গা। ওরা দুই ভাই-বোন।
দিদি দূর্গা তো দস্যিপনায় এক নম্বর। আজ এর বাগান থেকে আম পেড়ে আনা তো কাল ওর বাড়ি থেকে নারকেল- তার এসব না করলে যেন চলেই না। মা বকতে পারেন ভয়ে কখনো আবার ভাইটিকে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পেড়ে আনা ফলগুলি মজা করে খায় দূর্গা। দু’ভাইবোন খেলে বেড়ায়, ছুটে বেড়ায় বনে-বাঁদাড়ে। বনের নানা গাছ, ফুল আবিষ্কারও তাদের নেশা। এভাবেই বড় হতে থাকে ওরা।
টানাপোড়েনের সংসারে ঠিকমতো দুবেলা খাবার জোটে না। বৃষ্টির দিনে ফুটো চাল দিয়ে জল গড়িয়ে গায়ে পড়ে। অন্য সব মেয়েদের মতো রংবেরঙের খেলনা, জামা-কাপড় পায় না দূর্গা। একই অবস্থা অপুরও। এজন্য দূর্গা কখনো-সখনো অন্যের কোনো জিনিস চুরি করে পাড়া-প্রতিবেশীর গালিগালাজ সহ্য করে, সাথে মায়ের পিটুনি। এরই মধ্যে বেড়ে উঠতে থাকে ওরা। ঘটে নানা মজার মজার ঘটনা। কিন্তু শেষ অবধি প্রাণপ্রিয় দিদিকে হারিয়ে ফেলে অপু। দিদিকে ছাড়াই নিশ্চিন্দিপুরে বাস ছেড়ে পাড়ি জমায় অন্য জায়গায়।
কেন? কীভাবে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না? জানতে চাইলে তোমাকে পড়তে হবে ‘আম আঁটির ভেঁপু’ বইটি। বইটির নামকরণ অনেকটা প্রতীকী। আমের শুকনো আঁটি দিয়ে একধরনের ভেঁপু বানানো হতো আগে। বিষয়টি বেশ মজার। স্মৃতিবহুলও বটে। যদিও এখন এটি দেখো যায় না। অপু দূর্গার ছেলেবেলার সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে আম আঁটির ভেঁপু তৈরি নির্দিষ্ট বয়সের জগৎ।
বইটির লেখক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, গল্পকার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বইয়ে তিনি ছোটদের কাছে অপু আর দূর্গার চরিত্রের মাধ্যমে দুই ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক, গ্রাম্য সহজ সরল শিশু-কিশোরদের রঙিন ছেলেবেলার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন সমাজে দরিদ্র পরিবারগুলোর অবহেলিত হওয়ার করুণ কাহিনীও।
বইটি পড়ে যেমন তুমি মজা পাবে, তেমনি তোমায় কাঁদতেও হবে। আম আঁটির ভেঁপু আসলে বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের একটি অংশ। সেটিকেই ছোটদের উপযোগী করে পূর্ণাঙ্গ কিশোর উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন লেখক। পথের পাঁচালী খুব বিখ্যাত একটি উপন্যাস। এটি নিয়ে পরবর্তীতে ছায়াছবিও নির্মিত হয়। যেটি নির্মাণ করেন বাঙালি অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। এই সিনেমার জন্য তিনি অস্কার পান। সেই বইটি ছোটরা পড়বে না, সে তো আর হয় না। সেকথা ভেবেই লেখক এটিকে ছোটদের উপযোগী করে লেখার উদ্যোগ নেন।
আম আঁটির ভেঁপু কালজয়ী বইটি একাধিক প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অবসর প্রকাশনী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। অবসর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৭০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-মেইল: ichchheghuri@banglanews24.com