ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রুবাইয়াৎ-এর ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

বাহক (পর্ব ৪)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৩
বাহক (পর্ব ৪)

(বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
কাল্পনিক একটি সময়| বড় বড় যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবী ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত।

একেকটি খণ্ডকে বলা হয় ‘কম্যুনিটি’। প্রতিটি  কম্যুনিটি নিয়ন্ত্রণ করে একদল জ্ঞানী ব্যক্তি, যাদের বলা হয় ‘প্রবীণ’।   সবাইকে কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম ভাঙলেই দেয়া হয় ‘রিলিজ (মুক্তি)’। খাবার থেকে শুরু করে প্রতিদিনকার জীবনে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই তৈরি করে, প্যাকেটে ভরে, ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়। তবে কোনো কিছুই জমিয়ে রাখার নিয়ম নেই। রাখলেই  ‘রিলিজ’| মানুষের মন থেকে স্মৃতি নামের জিনিসটি মুছে ফেলা হয়েছে। যাতে করে সমাজে দুঃখ এবং কষ্ট বলে কিছু না থাকে। তবে প্রতি কম্যুনিটিতে বিশেষ একজনকে নির্বাচন করা যিনি সমস্ত স্মৃতি একা বহন করবেন এবং প্রবীণদের একজন হিসেবে কম্যুনিটিকে পরিচালন করবেন। ছেলেটির নাম জন, সদ্য কৈশোরে পা দিচ্ছে এবং সদ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে| আমরা আজ জনের গল্প শুনবো)

[পূর্ব প্রকাশের পর]

মেরি উঠে মায়ের কাছে গিয়ে হাতে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগল। বাবাও তার জায়গা ছেড়ে উঠে এলেন। একটি হাত নিজের হাতে নিলেন। জন ধরল অন্য হাতটা। একে একে সবাই তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মা মৃদু হাসলেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন। অস্ফুট স্বরে বললেন, তার মন এবার কিছুটা হালকা হয়েছে ।
জন, বাবা এবার বলল, এবার তোমার নিজের অনুভূতি বলার পালা।

জন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার ইচ্ছে হচ্ছিল যে আজ সন্ধ্যায় নিজের অনুভূতির কথা গোপন রাখবে। যদিও এটা নিয়মের বাইরে।

আমি ‘উৎকণ্ঠা’ অনুভব করছি, সে স্বীকার করল| কৃতজ্ঞ যে অবশেষে যথাযথ শব্দটা তার কাছে এসেছে।
সেটা কেন বেটা,  বাবাকে উদ্বিগ্ন দেখাল।

আমি জানি ভয় পাওয়ার কিছু নেই, জন ব্যাখ্যা করল এবং প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্কই এর ভেতর দিয়ে গিয়েছে। আমি জানি তুমি আর মা ও গিয়েছ এর মধ্য দিয়ে। কিন্তু তবুও আমি ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানটি নিয়ে উৎকণ্ঠিত। ডিসেম্বর প্রায় চলে এসেছে।

মেরি চোখ তুলে তাকালো, তার দৃষ্টি প্রসারিত ।

বার বছর বয়সীদের অনুষ্ঠান, সে শ্রদ্ধা মেশানো সুরে ফিসফিস করল।

এমনি ছোট বাচ্চারাও, লিলির বয়সী বা তার চেয়ে ছোটরাও, জানত যে এই অনুষ্ঠান তাদের প্রত্যেকের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে ।

আমি কৃতজ্ঞ যে তুমি আমাদের তোমার অনুভূতির কথা বললে, মা বললেন|

মেরি, ছোট মেয়েটার দিকে মা ইশারা করলেন, এখন যাও এবং রাতের পোশাক পরে নাও। বাবা ও আমি এখানে থাকব এবং জনের সঙ্গে কিছু কথা বলব।

মেরি দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তার থাকার ইচ্ছে| কিন্তু বাধ্যমেয়ের মতো চেয়ার ছেড়ে নামল এবং জিজ্ঞাসা করল, একান্তভাবে?

মা মাথা ঝাঁকালেন, হ্যা, এই কথাগুলো জনের সঙ্গে একান্তভাবে হবে।

বাবা কাপে ফ্রেশ কফি নিচ্ছিলেন, জন তাকিয়ে দেখছিল। শোনার জন্য অপেক্ষা করছে ।

হয়েছে কি, বাবা অবশেষে মুখ খুললেন। ছেলেবেলায় প্রতিটি ডিসেম্বর ছিল আমার জন্যে ছিল উত্তেজনাময়। এবং আমার বিশ্বাস মেরি এবং তোমার জন্যেও তা একই রকম হবে। প্রতিটি ডিসেম্বর কত পরিবর্তন আনে।

জন সায় জানালো। যে ডিসেম্বরে তার বয়স চার হলো, সে খুব সম্ভবত, সে পর্যন্ত মনে করতে পারে। তার আগেরগুলোর স্মৃতি হারিয়ে গেছে। কিন্তু প্রতি বছর সে তা দেখেছে এবং মেরির প্রথম ডিসেম্বরের কথা তার মনে আছে। আর মনে আছে কখন তার পরিবার মেরিকে পেয়েছিল, তার নাম দেয়ার দিনটি, যেদিন তার বয়স এক হলো, সেই দিনটি। এক বছর বয়সীদের অনুষ্ঠানে সবসময় অনেক কোলাহল, মজা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ডিসেম্বরের আগের বছরে জন্মানো সমস্ত শিশুদেরই বয়স এক হ । তারা যখনি জন্মাক না কেন, ডিসেম্বর থেকেই তাদের বয়সের গণনা শুরু হয় ।

যদি কেউ রিলিজড না হয়, প্রত্যেক বছরের গ্রুপে সবসময় পঞ্চাশ জন করে থাকে। তাদের পুষ্টিকারকেরা, যারা জন্ম থেকেই তাদের যত্ন করে, তাদের মঞ্চে নিয়ে আসে। কেউ কেউ হয়তো দুর্বল, কম্পিত, পায়ে কেবলমাত্র হাঁটতে শিখেছে। অন্যদের বয়স হয়তো মাত্র কয়েকদিন, পুষ্টিকারদের কোলে কম্বলে জড়ানো।
নামকরণ আমার খুব ভালো লাগে, জন মুখ খুলল।

শুনে মা হাসলেন। যে বছর আমরা মেরিকে পেলাম, অবশ্যই আমরা জানতাম যে মেয়ে শিশু পাব। কারণ আমরা সেটাই আবেদন করেছিলাম এবং তা অনুমোদিতও হয়েছিল । কিন্তু আমি কেবল ভাবছিলাম, তার নাম কি দেওয়া যায়।

আমি চাইলেই অনুষ্ঠানের আগে গোপন লিস্ট দেখতে পারি, বাবা বললেন। কমিটি সবসময়ই আগেই তালিকা বানিয়ে রাখে এবং সেটা পুষ্টিকেন্দ্রেই থাকে।

যদিও, সে বলে যাচ্ছে, এ কারণে আমি নিজেকে কিছুটা  অপরাধী মনে করছি, কিন্তু আজ বিকেলে আমি খোঁজ করেছি যে এই বছরের নামের তালিকা এখনও তৈরি হয়েছে কিনা। এটা অফিসেই ছিল এবং আমি ছত্রিশ নম্বরের খোঁজ করেছিলাম। সেই ছোট্ট মানুষটার কথা বলছি আরকি। কারণ আমার ধারণা হয়েছে যে আমি যদি সবসময় তাকে নাম ধরে ডাকি তাহলে হয়তো তার বৃদ্ধি দ্রুত হবে। তবে অবশ্যই কেবল একান্তভাবে ডাকব, যখন আশেপাশে আর কেউ থাকবে না। কারণ, নামকরণ অনুষ্ঠানের আগে নাম ধরে ডাকাটা নিয়মের বাইরে।
[চলবে]

লেখক: রুবাইয়াৎ, ওয়াশিংটন ডি.সি

আগের পর্বগুলো পড়তে নিচের লিংক দেখুন

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।