বন্ধুরা, তোমরা কী মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা জানো? কেউ হয়তো জানো, আবার কেউ জানো না।
আচ্ছা, মনে করো, একটা আপেল যদি গাছ থেকে পড়ে, তবে সেটা উপরে না গিয়ে নিচে কেন পড়বে? তুমি যদি কোনো কিছু উপরের দিকে ছুঁড়ে দাও, তবে সেটা ওপরে না থেকে নিচে নেমে আসবে কেন?
এই প্রশ্নগুলোই এসেছিল ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মাথায়।
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই নিউটন আবিষ্কার করে ফেললেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। আর তিনি মাধ্যাকর্ষণ বিষয়ে প্রমাণসহ যা যা বললেন, সেই ব্যাখ্যাকেই বলা হয় “নিউটন’স থিওরি অফ গ্র্যাভিটেশন” অর্থাৎ নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তত্ত্ব।
এবার চলো একটু বুঝে নিই নিউটনের তত্ত্ব অনুযায়ী মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কী। এই যে কোনো জিনিস উপরে না গিয়ে নিচে পড়ে, এর কারণটাই হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে টানে। অর্থাৎ পৃথিবীর এক অদৃশ্য আকর্ষণ শক্তি আছে। পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে টেনে রাখে বলেই কোনো কিছু উপরের দিকে না গিয়ে নিচের দিকে পড়ে। এজন্যই আমরা মাটিতে হেঁটে বেড়াতে পারি, শূন্যে ভেসে থাকি না।
ভেবো না পৃথিবীর একারই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে সব বস্তুরই। কিন্তু যে বস্তুর ভর যত বেশি, তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও ততই বেশি। সেকারণেই চাঁদ পৃথিবীর চেয়ে ছোট ও তার ভর কম হওয়ায় পৃথিবীর চেয়ে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম।
এখানে আরো একটা ব্যাপার আছে। একটা বস্তু আরেকটা বস্তুর যত কাছে থাকবে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও ততটাই বেশি হবে। চলো পৃথিবীর উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝি।
আমরা ভূ-পৃষ্ঠের যত কাছে থাকি, আমাদের উপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবও তত বেশি পড়ে। আমরা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যত দূরে যাব, মাধ্যাকর্ষণও তত কমতে থাকবে।
মানে ভূ-পৃষ্ঠের উপরে বা নিচের দিকে যত যেতে থাকব, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও ততটাই কমতে থাকবে। আর যদি মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব কমতে থাকে, তবে কিন্তু তোমার ওজনও কমতে থাকবে।
সেজন্যই যখন মানুষ মহাকাশে যায়, তারা কিন্তু হাঁটতে পারে না। ভেসে থাকে। কারণ সেখানে মাধ্যাকর্ষণের কোনো প্রভাব নেই। আর মহাকাশে তাদের ওজন হয় শূন্য। অর্থাৎ কোনো ওজন থাকে না।
আগেই বলেছি, যে বস্তুর ভর কম, তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও কম। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেখানে কম, সেখানে বস্তুর ওজনও কম। তাই চাঁদে গেলে কিন্তু পৃথিবীর চেয়ে তোমার ওজন কমে যাবে!
তবে ওজন কমলেও ভর কিন্তু একই থাকবে। চলো একটু বুঝে নিই ওজন আর ভরের পার্থক্য কী। তোমার শরীরে পদার্থের উপস্থিতি কতটুকু, সেটা হচ্ছে তোমার ভর।
আর সেই পদার্থের উপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কতটুকু সেটা হচ্ছে তোমার ওজন। এবার বুঝেছ কেন ওজন কমলেও ভর কমবে না? আর যে বস্তুর ভর যত বেশি হবে, তার উপর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবও তত বেশি হবে। সেজন্য ভারী জিনিস তুলতে কষ্ট হয়, কিন্তু হালকা জিনিস তুলতে কষ্ট হয় না।
মজার কথা কী জানো? তোমার সাধারণ ওজনের চেয়ে কিন্তু পাহাড়ের উপরে ওজন কম হবে। কারণটা সেই মাধ্যাকর্ষণ। পাহাড়ের ওপরে ওঠা মানে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে তুমি উপরে উঠে গেছ। তাই সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম। সেজন্য তোমার ওজনও হবে কম।
এই মজার ব্যাপারটা নিউটন আবিষ্কার করেছিলেন বলে ওজনের পরিমাপকটার নামকরণ হয়েছে তার নামে। ওজনের পরিমাপক ‘নিউটন’। আর ভরের পরিমাপক কিলোগ্রাম।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? যখন তুমি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠো, তখন কষ্ট হয়। কিন্তু নিচে নামার সময় কষ্ট হয় না, বা বলতে পারো কম কষ্ট হয়।
কেন বলো তো? এর পেছনেও রয়েছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারসাজি।
উপরে ওঠার সময় তোমায় মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে চলতে হয়। তাই তখন কষ্ট হয়। আর নিচে নামার সময় তুমি মাধ্যাকর্ষণের দিকেই আসো, মানে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি আসতে থাকো, তাই তখন কষ্ট হয় না।
ঠিক এই কারণেই পাহাড়ে ওঠার সময় কষ্ট হয়, নামার সময় হয় না। বিষয়টা নদীতে নৌকা চলার মতো। স্রোতের বিপরীতে যদি নৌকো চলে, তবে নৌকো চালাতে পরিশ্রম বেশি হয়।
কারণ স্রোত নৌকোটাকে উলটো দিকে টানতে থাকে। আর স্রোতের দিকে চালালে পরিশ্রম কম হয়। কারণ স্রোত নিজেই নৌকাকে তার দিকে টানছে।
কী? বুঝতে পেরেছ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কী? খুব মজার একটা বিষয় তাই না? সাথে সাথে নিশ্চই অনেক অজানা বিষয়ও জানা হয়ে গেছে। সমাধান হয়েছে অনেক কৌতূহলের, পেয়ে গেছ অনেক প্রশ্নের উত্তরও।
তবে আর কী! এবার নিজেই লেগে পড়ো উদাহরণগুলোকে এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করতে!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৩
এএ/এমজেডআর