ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বুয়া থেকে খালা | রিয়াজুল ইসলাম হৃদয়

গল্প / ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৪
বুয়া থেকে খালা | রিয়াজুল ইসলাম হৃদয়

সাদিয়া ভার্সিটি থেকে এসে বিরক্তি নিয়ে কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ভেতর থেকে দরজা খোলার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। একটু পরেই শোনা গেল বুয়ার গলা— ‘দাঁড়ান আম্মা আইতেসি’।

এতে তার বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল আরও। সে আগেই বুয়াকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাকে এসব আজেবাজে নামে যেনো না ডাকে, ম্যাডাম বলে ডাকে। কিন্তু এই মহিলা বরাবরই একই কাজ করে যাচ্ছে! দরজা খোলার সাথে সাথেই—

- এই মহিলা কই থাকো তুমি? দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে!!
: জে আম্মা ভাতের মার গালতেছিলাম।
- আমি যে কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি সে খেয়াল নাই তোমার?
: এইবারের মতন মাফ কইরা দেন আম্মা। আর হইবো না।
- এই শোনো, তোমাকে না কতবার নিষেধ করছি আমাকে আম্মা ডাকতে! যতসব গাইয়া ভূত!

২.
বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায় সাদিয়া। সাদিয়ার পরিচয় আলাদাভাবে দেওয়ার মতো কিছু নেই। ব্যবসায়ী ধনী বাবার একমাত্র দুলালি হলে মেক্সিমাম ক্ষেত্রে যা হওয়ার কথা এখানেও ঠিক তাই। পার্থক্য শুধু তাকে ৪ বছরের রেখে তার মা না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা দ্বিতীয় কাউকে আসতে দেননি। সেই তখন থেকেই সাদিয়ার বুয়ার কাছেই বেড়ে ওঠা।

ভিটেমাটি, স্বামী-সন্তানহারা হালিমাও এতোদিনে সাদিয়ার মাঝে নিজের সন্তানকে খুঁজে নিয়েছে। তবুও মেয়েটা কিভাবে যে এমন হয়ে গেল সে রহস্য হালিমার অজানা। হালিমা সব হাসিমুখে মেনে নেয় আর ভাবে আজ যদি নিজের সন্তান এমন করত তবে কি সে পারত তাকে ফেলে দিতে! কখ্‌খনোই না।

রান্না শেষ করে সাদিয়ার রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটা না খেয়েই দিব্যি ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছু না বলে আস্তে করে জানালার পর্দাগুলো ঠিক করে লাইট অফ করে বেরিয়ে যায়।

৩.
- বুয়া... অ্যাই বুয়া এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও তো।
: আম্মা আমি ইপ্তারি বানাইতাছি। আপনে নিয়া খাইয়া ফালান।
- তোমাকে বলছি দিয়ে যেতে।
: কেন আপনে কি এক গেলাস পানিও লইয়া খাইবার পারেন না!
- কী বললা তুমি? অ্যাই তুমি আমাকে কী বললা?

চিৎকার করতে করতে হাত থেকে ছোলার বাটি কেঁড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে বুয়ার মাথার লম্বা সাদা ঘোমটা পড়ে যায়। সাদিয়া চমকে উঠে দুইপা সরে গিয়ে চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না এটা কিভাবে সম্ভব! সামনে যে তার মা দাঁড়িয়ে আছে!!

৪.
সাদিয়া লাফ মেরে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়ে। তার সাড়া শরীর থরথর করে কাঁপছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে রান্না ঘরের দিকে দৌড়ায় সে। তাকে এদিকে দেখে বুয়া জিজ্ঞাস করে ‘কি আম্মা... কিসু লাগবো আপনের?’ উত্তরে কিছু না বলেই সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। বুয়া আর কথা বাড়ায় না। কিছুক্ষণ পরেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বুয়াকে জড়িয়ে ধরে সাদিয়া।

- আমাকে মাফ করে দাও খালা। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলছি।
: আরে আরে কানতাছেন কেন? কী হইসে আম্মা?
- দেখ আমাকে একদম আপনে করে বলবা না। নিজের মেয়েকে কেউ আপনি করে বলে!!
: (হাসতে হাসতে) আল্লারে কি পাগল মাইয়া।

সাদিয়া আজ নিজ হাতে তার খালার জন্য শরবত বানাচ্ছে। খালাকে এটাসেটা এগিয়ে দিচ্ছে। মেয়ের এসব পাগলামি দেখে হালিমা শাড়ির আঁচলে মুখ লুকায়। চোখের পানিও যেন আজ কিছুতেই বাধ মানছে না। হঠাৎ করেই প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তির ভার বেশি হয়ে গেলে তার প্রাথমিক উচ্ছ্বাসটা বোধ হয় এরকমই হয়। জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই তার। সুখ নামক সোনার হরিণটি যে নিজে থেকেই এসে ধরা দিয়েছে।

[কিছু কথা: সাধুতা বা ভালোমানুষি প্রদর্শনের জায়গা থেকে নয় বরং নিজের অবস্থান থেকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেই কথাটা বলছি, আপনার অভিধান থেকে বুয়া শব্দটি মুছে ফেলুন। এই গরীব মানুষটিকে আজ থেকে জাস্ট ‘খালা’ বলে ডেকে দেখুন উনি আপনার প্রতি কতটা আন্তরিক আর খুশি হন! অবশ্যই তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া আমাদের কর্তব্য। ]

IccheGhuri

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।