ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ইভটিজিংয়ে মানসিক হয়রানির শিকার হচ্ছে মেয়েরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১০
ইভটিজিংয়ে মানসিক হয়রানির শিকার হচ্ছে মেয়েরা

ঘটনা-১
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মিতু পুরো এক সপ্তাহ স্কুলে যায়নি। ‘এতো দিন কেন স্কুল কামাই করলিরে মিতু’ সহপাঠীদের এমন প্রশ্নের জবাবে চোঁখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ফেলে কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর মিতু জানায়, বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলে যাবার পথে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একদল বখাটে তাকে প্রায়ই নানাভাবে উত্যক্ত করতো, শিস বাজাতো, জোর করে এটা সেটা, চিঠি গুজে দিতো হাতে।

এক পর্যায়ে একদিন বাবার সাথে স্কুলে যাবার পথে বখাটেরা বাবার সামনেই একইভাবে যখন উত্যক্ত করছিল তখন মিতুর বাবা প্রতিবাদ করে বখাটেদের ধমক দেয়। ধমক খেয়ে প্তি বখাটেরা তেড়ে এসে মিতুকে টানাটানি করে তার ওড়না কেড়ে নেয়। এসময় বাঁধা দিতে গেলে মিতুর বাবাকেও বখাটেরা লাঞ্চিত করে। এই ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় মিতুর স্কুলে যাওয়া। পরে এক সপ্তাহের মধ্যে বাসা পাল্টে অন্য পাড়ায় যাওয়ার পর মিতু স্কুলে যাওয়া শুরু করে। এখন সে বড়ভাইয়ের সাথে স্কুলে আসা-যাওয়া করে।

ঘটনা-২
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার রুদ্রবয়ড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মিশুকে স্কুলে যাবার পথে প্রায় উত্ত্যক্ত করতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বখাটেরা। সম্প্রতি স্কুলে যাবার পথে গেন্দারপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মনির উদ্দিন ও বয়ড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের পুত্র আল-আমীন পথরোধ করে মিশুকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। বখাটেরা তাকে টানাহেচড়া করার চেষ্টা করলে মিশু চিৎকার শুরু করে। চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে মিতুকে উদ্ধার করে।

শুধু মিতু আর মিশু নয় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুমি, রিমা, রোজী, রোমেনাসহ জামালপুরের অনেক মেয়ে শিশুকেই এভাবে বখাটেদের ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ভয় নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয়। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণীতে পড়া অনেক মেয়ে শিশুই জানিয়েছে, নানাভাবেই তারা উত্যক্তের শিকার হয়। এমনকি অনেক সময় জোর করে রিকশা থেকে নামিয়ে বখাটেরা মোবাইলে ছবি তোলে এবং ফুল, চকলেট, চিঠি এসব গুজে দেয় হাতে। এদের ভয়ে তাদের থাকতে হয় তটস্থ। বখাটেদের এসব অত্যাচারে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরছে। ভয়ে অনেক সময় এসব কথা অভিভাবকদেরও জানাতে পারে না তারা।

সরিষাবাড়ি উপজেলার রুদ্রবয়ড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মিশুকে উত্যক্ত করার ঘটনায় বখাটেদের গ্রেফতারের দাবিতে বেশ কয়েকদিন আন্দোলন করে এলাকার অভিভাবক ও ছাত্রীরা। তারপরও গ্রেফতার হয়নি মূল বখাটেরা। সরেজমিন বয়ড়া গেলে শিশু সাংবাদিকদের সাথে কথা প্রসঙ্গে সরিষাবাড়ি উপজেলার রুদ্রবয়ড়া গ্রামের অভিভাবক মজনু মিয়া, আবুল কালাম ও সুজন মিয়া বলেন, ‘বখাটেদের উৎপাতে আমগো দেয়ালে পিঠ ঠেইকা গেছে। মেয়ে পুলাপান স্কুলে যাবার পারে না। স্কুলে যাবার সময় রাস্তা-ঘাটে খাড়াইয়া থাইকা বখাটেরা আমগো মেয়েদের উৎপাত করে। স্কুল থেইকা বাড়িত ফিইরা মেয়েরা কান্দে-স্কুলে যাবার চায় না। তাই বখাটেদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন করছি-কিন্তু লাভ তো কিছুই অয়নাই, পুলিশ বখাটেগরে গ্রেফতার করে নাই। ’
 
সবমিলিয়ে জেলায় ইভটিজিংয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনেক মেয়ে শিশুই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পড়াশোনায়ও তিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় এখন পর্যন্ত একজন বখাটেও গ্রেফতার বা শাস্তি পায়নি। শিশুদের স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠা ও শিার স্বার্থে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের দাবি জামালপুরের অনেক মেয়ে শিশু ও অভিভাবকের।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রাহা, সাদিয়া, জর্জিনা, মিম, চাঁদনী, সম্রাট, শোভন, শাহেদ, মাহমুদুল, আরমান

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।