অ
অলস ভীষণ অসীম বাবু,
সবাই বলে কুঁড়ে,
জীবননগর বাবার বাড়ি,
থাকেন মহেশপুরে।
আ
আমার বাড়ির খুব কাছেতেই
অসীম বাবুর বাড়ি,
পাড়ার সব লোকের সাথে
ভীষণভাবে আড়ি।
ই
ইঁদুর মামা লিজ নিয়েছে
অসীম বাবুর শোবার ঘর,
ঘরটা জুড়ে এখন যে তাই
ক্ষুদ্র মাটির একটা চর।
ঈ
ঈগল পাখি রোজ বিকালে
বসে গাছের ডালে,
ছোঁ মেরে ঠিক ইঁদুরছানা
তোলে নিজের গালে।
উ
উঁইয়ের ঢিবি পাহাড় সমান
রান্নাঘরের পাশে,
কাকপক্ষী হাজার হাজার
ঢিবির কাছে আসে।
ঊ
ঊষার আলো যখন আসে
অসীম বাবুর ঘরটায়,
গেঞ্জিটা রাখে খুলে
ভাঙা আলনার ‘পরটায়।
ঋ
ঋষি মশাই’র সারা শরীর
বকের মতো সাদা,
অসীম বাবুর বাসার ছবি
ময়লা ফ্রেমে বাঁধা ।
৯
কাঁঠবেড়াড়ি দুষ্টু ভীষণ,
৯-এর মতো লেজ
অসীম বাবুর বাগানে এলেই
যায় বেড়ে তার তেজ।
এ
এই বাগানে অসীম বাবু
দেয় না কভু পানি,
অসীম বাবু ভীষণ কুঁড়ে,
আমরা সবাই জানি।
ঐ
ঐ দূরেতে একটা বাগান,
ফুলে ফলে ভরা,
এই বাগানে বারো মাসই
চৈত্র মাসের খরা।
ও
ওপাশেতে একটা বাড়ি
সাজানো পরিপাটি,
অসীম বাবুর এই বাড়িতে
কাকপক্ষীর ঘাঁটি।
ঔ
ঔষধ কেনেন অসীম বাবু
তাইতো বারো মাস
সব ওষুধের নাম জানেন
যেনো ডিগ্রি পাস!
ক
অসীম বাবু যায়নি কভু
পাঠশালারই বারান্দায়-
বাড়িতে তার ময়লা ফেলে
পাশের বাড়ির নারান্দায়।
খ
খেয়াল করে ময়লা দেখে
অসীম ফাটে আড়িতে-
কুকুর মশাই ময়লাগুলো
ছড়ায় সারা বাড়িতে।
গ
গালে হাত অসীম বাবুর,
ঘরে বসে ভাবে,
এই ময়লা উঠান থেকে
কেমন করে যাবে।
ঘ
ঘাবড়ে যাবার নেই কিছু নেই
কুকুর বিড়াল আছে,
ময়লা ফেলার দায়িত্বটা
দিলাম তাদের কাছে।
ঙ
ব্যাঙ আছে পুকুরজুড়ে
সারা সময় ডাকে,
মাঝে মাঝে ডাক থামায়
অনাহারী কাকে।
চ
চড়–ই পাখির বাসা আছে
রান্নাঘরের চালে,
মধ্যরাতে হুতুম পেঁচা
ডাকে গাছের ডালে।
ছ
ছনের বেড়ার একটি ঘরে
আছে দুটি ছাগল,
ছাগল দুটির জ্বালায় অসীম
হবেই নাকী পাগল।
জ
জীবন নিয়ে ছাগল দুটির
রোজই টানাটানি,
অসীম কুঁড়ে দেয় না খাবার,
ঘাস-পাতা বা পানি।
ঝ
ঝড়- বাতাসের আশায় থাকে
ছাগল দুটো রোজ,
ডাল ভাঙবে, পড়বে পাতা
হবে ভালোই ভোজ।
ঞ
মিঞা মশাই পা বাড়ালে
অসীম বাবুর ঘরে,
অসীম কুঁড়ে দৌড়ে পালায়,
ঝোপের ভেতর সরে।
ট
টিনের চালে কবুতর আর
টালির চালে টিয়ে,
অসীম কুঁড়ের এই জীবনে
জুটবে নাকো বিয়ে।
ঠ
ঠাকুর ঘরে যায় না অসীম
পায়ে হাঁটার ভয়ে,
হাঁটলে নাকী পায়ের তলা
যাবেই যাবে ক্ষয়ে।
ড
ডাল কাটে না কোনো গাছের,
থাক শুকনো গাল,
মাঝে মাঝে ভাতের বদল
খায় সে কাঁচা চাল।
ঢ
ঢোল পিটিয়ে সবাই বলে
অসীম ভীষণ কুঁড়ে,
অসীম কুঁড়ের গল্প একদিন
জানবে বিশ্বজুড়ে।
ণ
চরণখানি অসীম বাবুর
বয় না কোনো কাজে
সুখ খোঁজে সে সব সময়
অলসতার ভাঁজে।
ত
তাই তো বাবুর আসতে হলো
জীবননগর ছেড়ে-
মহেশপুরে বসলো সে তাই
চার হাত পা গেঁড়ে।
থ
থালা ধোয়ার ভয়ে অসীম
খায় না থালায় ভাত,
চামচ দিয়ে ভোজন সারে,
না লাগিয়ে হাত।
দ
দাঁত মাজে না অসীম বাবু
বলে পাড়ার লোকে,
বারো মাসেই অসীম কুঁড়ের
ময়লা থাকে চোখে।
ধ
ধোয় না মুখ সকালবেলা,
দুপুর এবং রাতে,
পাড়ার লোকে কেউ মেশে না
অসীম কুঁড়ের সাথে।
ন
না না না এই কথাটা
মিথ্যে কোনো গল্প না,
অসীম বাবুর কুঁড়েমিটা
যায় না করা কল্পনা।
প
পাড়ার কিছু ছেলে এলো
অসীম বাবুর বাড়ি,
বললো, অসীম কুঁড়েমিটা
দাও তো এবার ছাড়ি।
ফ
ফল হবে এর ভীষণ ভালো,
ভবিষ্যতে আসবে আলো,
কাজের মাঝে সুখ-শান্তি,
কাজে ভালো মন-
অলসতা ছেড়ে দেবে
করলো অসীম পণ।
ব
বললো অসীম আজকে থেকে
করবো আমি কাজ,
ব্রাশ দিয়ে বললো সবাই
দাঁতটা আগে মাজ।
ভ
ভালো করে দাঁত মেজে সে
পুকুরে দেয় লাফ,
সবাই মিলে ঘষেমেজে
করলো তাকে সাফ।
ম
ময়লা মাটি নেই এখন আর
অসীম বাবুর বাড়ি
ইঁদুর বিড়াল পালিয়ে গেলো
ভীষণ তাড়াতাড়ি।
য
যত্ন নেয় ছাগল দুটোর
বাগানে দেয় পানি,
অসীম বাবুর বদলানোতে
পাড়ায় কানাকানি।
র
রোজ সকালে অসীম বাবু
কাজেই চলে যায়,
তিন বেলাতে নিজের হাতে
রান্না করে খায়।
ল
লাল শাক আর লাউয়ের
চাষ করছে বাবু মাঠে,
ওগুলো সব বিক্রি করে
নানান গাঁয়ের হাটে।
শ
শাক-সবজি সবাইকে দেয়
তবুও অনেক লাভ,
পাড়ার সব লোকের সাথে
এখন ভীষণ ভাব।
স
সবাই এখন বাবুর সাথে
আড্ডা দিতে আসেন,
অতীত দিনের কথা ভেবে
অসীম বাবু হাসেন।
ষ
ষাড় কিনেছে দুইটা বাবু,
করবে হাল চাষ,
পুকুর মাঝে মাছ ছেড়েছে
পালছে দেশি হাঁস।
হ
হাসনাহেনা ফুল ফুটেছে
সারা বাড়িজুড়ে,
অসীম বাবু কাজ ধরেছে,
নেই এখন আর কুঁড়ে।
ড়
পাহাড় সমান উঁইয়ের ঢিবি
কই হারিয়ে গেলো,
কিছু ছেলের সঙ্গ পেয়ে
অসীম ভালো হলো।
ঢ়
আষাঢ়ের ওই বৃষ্টি মাঝেও
অসীম করে কাজ,
অলস মনের মানুষ যারা
যাও বদলে আজ।
ৎ
হঠাৎ করেই বদলানো যায়
যদি থাকে ইচ্ছা,
মুছে ফেলো জীবনের
অলস সকল কিচ্ছা।
তিড়িং বিড়িং ছটফট নয়,
আস্তে ধীরে চলো-
অবসরটা নষ্ট নয় আর
কাজকেই হ্যাঁ বলো।
ঃ
দুঃখ কষ্ট হয় যে শুধু
অলস লোকের সঙ্গী,
কাজের কথা বললে তারা
করে নানান ভঙ্গি।
ঁ
চাঁদের আলো কভু আসে না
অলস লোকের মাঝে-
সুখ শান্তি ভাগ্য কপাল
সবই আছে কাজে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৪