ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রুপুর মন খারাপ | আল হাফিজ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫
রুপুর মন খারাপ | আল হাফিজ

রুপুর মন খারাপ। চুপচাপ বসে আছে সে।

থমথমে ভাব। এলোমেলো চুল, উসকোখুশকো চেহারা। সে আজ একটা আকাশের মতো একা। একটা সূর্যের মতো একা। বড় একা সে আজ।

আম্মু আছেন ছোটকুকে নিয়ে। তার কোলে নতুন ভাইটা থাকে সবসময়। কয়েক মাস হলো ভাইটাকে নানুবাড়ি থেকে এনেছে আম্মু।

ভাইটা আসার পর থেকেই রুপু একা। ওর দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই। না আম্মুর, না আব্বুর, না অন্য কারো। আম্মু আজকাল রুপুকে পাশে ঘুমাতে দেয় না। ওর তো মন খারাপ হবেই।

মন খারাপ করেই বসে আছে রুপু। একটা পচা বুড়িগঙ্গা নদীর মতো, একটা রোদে পোড়া টাওয়ারের মতো মন খারাপ।

খেলনাগুলো মন খারাপ করে পড়ে আছে। এলোমেলো। আগোছালো। এখানে ওখানে।
আম্মু ফিরেও তাকায় না। যদি বা তাকায়- তাও ছোটকুর জন্য। বলে, ‘দ্যাখ দ্যাখ! কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকায় তোর দিকে। ’
তাকায় কিনা তা আম্মুই জানে। রুপু বুঝতে পারে না।
অবুঝের মতো লাইন ভেঙে রেলগাড়ি পড়ে আছে। হেলিকপ্টার মুখ থুবড়ে আছে খাটের তলায়। সোফার নিচে পিয়ানোটা একা একা ঘুমে কাদা। পুতুলগুলোও চুপচাপ। একদম বোবা।

দাদুটাও আসছে না অনেকদিন। দাদুবাড়ির দিকেও নাকি গন্ডগোল। এখানেও গন্ডগোল, ওখানেও গন্ডগোল। একবার আসুক দাদু। রুপু তখন দেখাবে মজা।
আম্মুটা ওকে আদর করে না। চুমু দেয় না। ঘুমাতেও দেয় না পাশে। রুপু সব বলে দেবে দাদুকে। আসুক দাদু। আসছে না কেন?
আব্বুর কথাও বলতে হবে। কী এত কাজ তার অফিসে?
এখন রুপুর সব রাগ আব্বুর উপর। টেবিল থেকে আব্বুর বই ফেলে দেয় সে। খাতাপত্র ফেলে দেয়। এলোমেলো করে দেয় কাগজপত্র। পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নৌকা বানায়। উড়োজাহাজ বানায়। ফুল বানায়। পাখি বানায়।
কিন্তু মন ভালো হয় না। মনের মধ্যে মেঘের পাহাড় জমতে থাকে। জমতে জমতে আকাশ ছুঁয়ে যায়। বাতাস ছুঁয়ে যায়। ভার কমে না।
মন ভার করে রুপু বইয়ের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। রকেট, বিমান দ্যাখে। কামান, বোমা ফাটতে দেখে।
ফেটে যায় স্বপ্ন। ভেঙে যায় রুপুর ঘুম।
বকাবকি করছে আম্মু। কোলে ছোটকু। পাশে আব্বু। চুপচাপ।
চোখ ডলতে ডলতে তাকায় রুপু। না, আব্বু নেই। আবার চোখ ডলে। আবার তাকায়। কোথাও আব্বু নেই। আব্বু কি স্বপ্নে দেখা বোমার মতো? কামানের মতো? বিমানের মতো? শুধুই স্বপ্ন?
চোখ ডলতে ডলতে মন খারাপ হয়ে যায় রুপুর।
বিকেলে অফিস থেকে আব্বু আসে না। জুমার নামাজ পড়ে আব্বু আসে না। আব্বু আর আসে না। শুধু গণ্ডগোল। শুধু ঠুস ঠাস। শুধু বোমবিং। শুধু জঙ্গিবিমান। শুধু সাইরেন। শুধু অন্ধকার ফিরে ফিরে আসে।

মন ভালো হয় না রুপুর। মন ভালো হয় না পুতুলরানির। মন ভালো হয় না পিয়ানোটার। মন খারাপ কুকুর ঘেউ ঘেউ কাঁদে। রুপু কাদে না। মন খারাপ। বসে থাকে শুধু। স্কুল নেই। স্কুল বন্ধ। পড়া নেই। লেখা নেই। কিছু নেই। সব বন্ধ এখন। সব চুপচাপ। গণ্ডগোল পেকে ফোঁড়ার মতো টনটন করছে।
ব্যথায় টনটন করছে রুপুর মন। রুপু কাঁদে না। আম্মুকে ভালোবাসে রুপু। আব্বুকে ভালোবাসে। দাদু-নানু সব্বাইকে ভালোবাসে। ভালোবাসে ছোটকুকেও।
আব্বু সেই ভালোবাসা আনতে গেছে ২৬ মার্চ। ছোটকুর মতো টুকটুকে লাল পতাকা আনতে গেছে। মায়ের সবুজ শাড়ির মতো পতাকা। দাদুবাড়ির মতো- নানু বাড়ির মতো মিষ্টি দেশ আনতে যুদ্ধে গেছে। আব্বু যুদ্ধে।
আব্বু আসবে বাজার ভর্তি বিজয় নিয়ে জুমার নামাজ পড়ে খাবার টেবিলে। অফিস ফেরত আব্বু আসবে। বিকেলের রোদ হয়ে।
রুপুর মন ভালো হয়ে যাবে। পুশি বেড়ালটাও ওর গা ঘেঁষে বসবে খুশিতে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।