ছোট্টবেলায় একটা গান মনে খুব দোলা দিতো- ‘প্রজাপতি, প্রজাপতি, কোথায় পেলে ভাই. . .’ বড় হয়ে যখন জানতে পারি গানটা লিখেছেন নজরুল তখন সত্যিই অবাক হই- এই মানুষটিই কিনা আবার লিখেছেন রণসঙ্গীত!
হ্যাঁ, ফুলের কোমলতা আর যোদ্ধার দৃঢ়তা এই দুয়ের অপূর্ব এক মিশেলের নাম কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
ছেলেবেলা খুব সুখে কাটেনি তাঁর। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম এবং মা জাহেদা খাতুন গৃহিনী। দশ বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়ে শোক কাটানোর পাশাপাশি ধরতে হয় সংসারের হাল। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাজে সাহায্য করা, প্রতিবেশীর বাড়ি দেখাশুনা করা আর মসজিদে আযান দিয়েই কেটে যায় ছেলেবেলা। সেই সঙ্গে নাম জোটে ‘দুখুমিয়া’।
কি মন খারাপ হয়ে গেল? এই দুখুমিয়াই একদিন লিখে ফেললেন, ‘অমা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?, খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক্ ডেঙাডেং ড্যাং। ’ লেটোর দলে গান গেয়ে, রুটির দোকানে কাজ করে কিভাবে তিনি এমন হাজারো মজার মজার ছড়া-কবিতা লিখে গেছেন তা আজও এক বিস্ময় !
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ তুমুল হইচই ফেলে দেয় চারদিকে। প্রতিটি লেখাতেই ছিল বিদ্রোহের আগুন ফুলকি। যা কাঁপিয়ে দেয় ব্রিটিশ শোষণের ভীত। ‘বিদ্রাহী’ কবিতাটির জন্য তিনি জেলও গিয়েছেন।
ছোটদের বড্ড ভালোবাসতেন কবি। লিখেছেন, ‘নতুন দিনের মানুষ তোরা আয় শিশুরা আয়, নতুন চোখে নতুন লোকের নতুন ভরসায়। ’ এছাড়াও বছর ঘুরে ঈদ এলেই ঘরে ঘরে যে গানটি বেজে ওঠে সেটিও ‘দুখুমিয়া’রই লেখা ! ‘রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ...’।
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিলিট উপাধি ছড়াও পেয়েছেন ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘পদ্মভূষণ’।
সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখাতেই তিনি দিয়ে গেছেন শিল্পের ছোঁয়া। বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক প্রভৃতি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় শতাধিক। লিখেছেন দু’হাজারেরও বেশী গান। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন এই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।