ঢাকা: হুমায়ুন আজাদ। যিনি আমাদের কাছে প্রথাবিরোধী লেখক, কবি, অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, ভাষা বিজ্ঞানী, গবেষক, উপন্যাসিকসহ বহু অভিধায় পরিচিত।
তাইতো তিনি কতো যত্নেই না শিশু-কিশোরদের জন্য লিখতে পেরেছেন- ‘ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। /ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। /ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। /ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা। /......./ভালো থেকো বক, আড়িয়ল বিল,/ভালো থেকো নাও, মধুমতি গাও, ভালো থেকো। /ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো। /ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো। ’(ভালো থেকো)।
তার শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বইয়ের নামেই যেন যাদু, যা চুম্বক টানে বড়দেরও টেনে নিয়ে যায় শৈশবে। ‘বুক পকেটে জোনাকি পোকা’, ‘আব্বুকে মনে পড়ে’, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’, ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’, ‘অন্ধকারে গন্ধরাজ’সহ শিশু-কিশোরদের জন্য তার লেখা চমৎকার সব বই আছে। ছোটদের জন্য তিনি ‘আওয়ার বিউটিফুল বাংলাদেশ’ নামে একটি ইংরেজি বইও লিখেছেন।
এছাড়া শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে তিনি লিখেছেন- ‘কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী’ এবং ‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’।
‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ বইটিতে চিত্রিত হয়েছে হুমায়ুন আজাদের শৈশব-কৈশোর। তিনি নিজের কৈশোরের সময়কে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন এতে। বইটির পরতে পরতে রয়েছে উপমার ফুলঝুরি।
‘আব্বুকে মনে পড়ে’ নামে কিশোর উপন্যাসে তিনি এক আব্বুর ডাইরিতে লিখে গেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও সন্তানের প্রতি বাবার তীব্র ভালোবাসার কথা। যুদ্ধ শেষে যার আর ফেরা হয় না। বইটি পড়লে বড়দের চোখও ভিজে ওঠে।
‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’ বইয়ে আমরা পাই একদল দেবদূতকে যারা একটি নষ্ট শহরকে উদ্ধার করে। ‘বুক পকেটে জোনাকি পোকা’ গদ্যে ও পদ্যে মিশেলে হুমায়ুন আজাদের লেখা একটি চমৎকার বই।
মঙ্গলবার এই শিশু হৃদয়ের মহান লেখকের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় যাওয়ার পথে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। একই বছর ৭ আগস্ট একটি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান আজাদ এবং ১১ আগস্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে তার মৃত্যু হয়।
এমন দিনে বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের আত্মার উদ্দেশ্যে আমাদের চাওয়া, ‘ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫
আরএম/এএ