আগ্নেয়গিরির জন্ম! সে যে এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার! কেউ কি তা নিজের চোখে দেখছিলো? হুম দেখছিলেন। এই সৌভাগ্য হয়েছিলো মেক্সিকোর এক রেড ইন্ডিয়ান চাষির।
১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি। চাষি মানুষ, খেতে ফসল ফলিয়ে খায়। সেবার অনেক চেষ্টা করেও এক টুকরো নিচু জমিতে কিছুতেই ফসল ফলাতে পারছিলেন না তিনি। রোজকার মতো সেদিনও গিয়েছিলেন জমিতে। ভীষণ রোদ। রোদে কাহিল পোলিডা ভাবছিলেন ফিরে যাবেন কি-না, এ জমিতে চাষ হবে না।
মনের দুঃখে পোড়া সিগারেটের টুকরো জমিতে ছুড়ে ফেললেন। আগে থেকেই তেঁতে ছিলো জায়গাটা। পরে দেখলেন ধোঁয়া বেরুচ্ছে সেখান থেকে। তবে সে ধোঁয়া সিগারেটের নয়! তাহলে? জমি ফেটে গিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তার ভেতর থেকে সঙ্গে গুড় গুড় পাতাল গজরানি। আচমকা, দুলে উঠলো পায়ের তলার মাটি। সঙ্গে সঙ্গেই যেন কানের পর্দা ফাটানো ভয়ানক হুঙ্কারে চৌচির হয়ে গেল নিচু জায়গাটা।
মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন চাষি পোলিডা। তারপর কোনো রকমে মাটি থেকে উঠেই পড়ি কি মরি করে দৌড়। ছুটতে ছুটতে ঘাড় ফিরিয়ে ছানাবড়া চোখ!
দেখলেন, ফাটলের মুখে পাথরের এক অকল্পনীয় ফোয়ারা তৈরি হয়েছে। বিপুল বেগে পাথর ছিটকে উঠছে আকাশে দিকে! চাষি পোলিডা ভেবেছিলেন শয়তানের কাণ্ড। গ্রামে ফিরতে ফিরতে তার সন্ধ্যা হয়ে গেলো। পরদিন সকালে আরও কয়েকজন গ্রামবাসীকে নিয়ে তিনি যখন ওই জায়গায় পৌঁছালেন, দেখলেন ভয়ানক এক আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে সেখানে। ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ, পাথর ছুটে বের হচ্ছে অনবরত, আর গরম লাভার স্রোত বইতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে।
গ্রামবাসী দ্রুত হিসেব করে নিলো, আর কিছু সময়ের মধ্যে না পালালে তাদের গ্রামেও পৌঁছে যাবে এই লাভার স্রোত। আর কি করা! দ্রুত ফিরে গিয়ে সবাই বাক্স পেটরা গোছাতে লাগল। এদিকে চাষি ডাইনিসিয়ো পোলিডার তখন মন খারাপ। ঠিক করলেন আর কখনো তিনি ধূমপান করবেন না। তার সিগারেটের আগুনই তো খেপিয়ে দিয়েছে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে। পোলিডার গ্রামসহ মোট দু’টি গ্রাম বিধস্ত হলো। এভাবেই পিলে চমকানো নিদর্শন দিয়ে মেক্সিকোর পারিকুটিন আগ্নেয়গিরিরর জন্ম।
১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত জীবন্ত ছিলো পারিকুটিন। তারপর সে অবশ্য ঘুমিয়ে পড়ে। সে ঘুম আজও ভাঙেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ঘুম আর ভাঙবে না। তাই পারিকুটিন এখন সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।
**মেক্সিকোর একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
এএ