ঘরের ছাদের দক্ষিণে খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছি। সুখের সংসার আমার।
এখন অবশ্য যখন তখন বাসা থেকে বের হয়ে দূরে কোথাও যাই না। বাসা থেকে বের হলেও কাছাকাছিই থাকি। বাসায় আমার চারটে ছোটো ছোটো ছানা। ক্ষুধা পেলেই ওরা চিৎকার চেঁচামেচি করে। তখন এ বাড়ির খোকা নিমেষেই দৌড়ে আসে ছানাদের দেখতে। যেন তাদের চেঁচামেচি শোনার জন্যই খোকা কান পেতে থাকে।
একটু শব্দেই সে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে আসে। আমি তখন কাছেই কোথাও লুকিয়ে দেখি। খোকা আমার বন্ধু। তাকে চিনি সেই ছোটোবেলা থেকে। এতটুকু বয়স থেকে খোকার সাথে আমার পরিচয়। আমাকে দেখলে খোকা ঝলমলে হাসতো। আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে খোকা ভাত খেতো। সারাঘর দৌড়ে দৌড়ে, একটি দুটি ভাত মুখে পুরতো। আমি বড়ো আলমারির পেছনে চলে গেলেই তার হাসি যেত থেমে।
আমি আরো কিছুক্ষণ চুপিচুপি লুকিয়ে থাকতাম তখন। কিছুক্ষণ পর বের হতেই সে হেসে উঠতো খিলখিল করে। কখনও বা যেতে যেতে চিকন বাল্বের পেছনে লুকিয়ে পড়তাম। খোকার ভ্রু তখন কুঁচকে যেত, স্নিগ্ধ বড়ো বড়ো চোখ দুটো দিয়ে আমায় খুঁজতো। ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে আমি সব দেখতাম আর হাসতাম।
আবার বের হয়ে দেয়ালে হেঁটে বেড়াতাম। দেয়ালে, ছাদে হেঁটে বেড়ানোর সময় আমি কেন উল্টে পড়ি না, মাকে সেই প্রশ্ন করতো খোকা। শুনে হাসি পেতো আমার। আমার পায়ে দেয়াল বেয়ে ওঠার মতো আঠা আছে- খোকাকে বুঝিয়ে বলতো মা। তবুও যেন তার বিস্ময় কাটে না। বড়ো বড়ো চোখে আমার দিকেই সে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে আমি তাকে বন্ধু করে নিলাম।
একদিন মায়ের কোলে খোকা। আমি ওদের খুব কাছাকাছি হেঁটে বেড়াচ্ছি। মা হঠাৎ আমার লেজ চেপে ধরলো। আমার লেজ গেলো খসে। আমি কিন্তু মোটেও ব্যথা পেলাম না। খোকার সঙ্গে আমিও অবাক হলাম। তখনও আমার খসে যাওয়া লেজ নড়ছে। আমরা দুজন তাকিয়ে আছি। সেদিনই মার কাছ থেকে জেনেছিলাম যে আমার রক্ত সাদা। কারণ, আমার রক্তে লোহিতকণিকা খুবই কম আর শ্বেতকণিকা বেশি। লোহিতকণিকা থাকলে রক্ত লাল হয়।
এ কথা শুনে আমি টিক টিক শব্দ করলাম। কারণ, মায়ের কথা সত্যি। আমি বিশ্বাস করি। আমার টিক টিক শব্দ শুনেই খোকা যেন কথাটি বিশ্বাস করলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৫
এএ