ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৮)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৮)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।

বাংলানিউজের ইচ্ছেঘুড়ি বিভাগ ধারাবাহিকভাবে এ কিশোর উপন্যাসটি প্রকাশ করছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার—সপ্তাহের এ তিনদিন উপন্যাসটির একটি করে নতুন পর্ব প্রকাশিত হবে।



পর্ব ৭ পড়তে ক্লিক করো

‘হুউফ, হুউফ!’ প্রচণ্ড শক্তিতে, শ্যাডো বলে। তারপর আরো জোরে গর্জন করতে থাকে। ‘ঘরর-রর-রর-রর-রর! ঘরর-রর-রর-রর-রর!’

ষাঁড়টা অবাক হয়ে থামে। সে এর জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। বেশির ভাগ জন্তু-জানোয়ার তার এই ডাক শুনে দৌড়ে পালায়। সে শ্যাডোর দিকে তাকায়—এবং এরপর তারদিকে তেড়ে আসে!

শ্যাডো একপাশে সরে যায় এবং ষাঁড়টা তার প্রকাণ্ড মাথাটা নামিয়ে শিং তাক করে ছুটে আসলেও আঘাতটা ওর গায়ে লাগে না। সে ষাঁড়টির পায় কামড়ে দেয়। পিঙ্কার এটা ঘৃণা করে। সে আবারও শ্যাডোকে গুঁতো মারতে চেষ্টা করে, কিন্তু পুঁচকে সাহসী কুকুরটি তা চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে গিয়ে আবারও তার পায়ে কামড় বসায়, খুব জঘন্যভাবে ছড়ে দেয়।



‘আমরা যে বিস্ময়কর কাজগুলো করি তা ঘুরে ঘুরে কাউকে বলে বেড়াই না!’ সে বলে। ‘আমাদের সাহসিকতা বা ভালো কাজের কথা বরং অন্যদের বলে বেড়াতে দিই, শ্যাডো। আমরা সবাই যদি তোমার কথা শুনি আর প্রশংসা করি তাহলে তুমি অহঙ্কারী এবং আত্মদর্পী হয়ে উঠবে। আমাদের মতো আর দশটা কুকুর যা যা করে তুমি কেবল সেটাই করেছো। ’
‘আমি দুঃখিত,’ লজ্জায় শ্যাডো বলে। ‘এর বেশি আমি আর একটা শব্দও বলতে চাই না, টিঙ্কার। সত্যিই চাইছি না



পিঙ্কার স্থির হয়ে দাঁড়ায় এবং কিছু সময়ের জন্য ভাবে। দীর্ঘদিন পর এই প্রথম সে বাগানের বাইরে এলো। বাগানটা তার খুবই পছন্দের। বাগান ছেড়ে এই গলিতে আসার পর সবকিছু তার কাছে বড় অদ্ভুত ঠেকছে।

তখনই একটা ট্রেন চারদিক কাঁপিয়ে বিকট শব্দে গ্রামের দিক থেকে ধেয়ে আসে। পিঙ্কার সেটার দিকে তাকিয়ে গর্জন করে ওঠে। শ্যাডো ষাঁড়টির ঝুলন্ত লেজের দিকে লাফিয়ে তাতে আচ্ছা করে কামড় বসিয়ে দেয়।

পিঙ্কার ফোঁস ওঠে এবং ঘুরে দাঁড়ায়। শ্যাডো ঠিক এটাই চাইছিল! ষাঁড়টা এবার আবারও বাগানের দিকে মুখ করে। মনে হয় শ্যাডো এবার তাকে ধাওয়া করে ফিরিয়ে নিতে পারবে!

সে পিঙ্কারকে ঘেউ ঘেউ করে তাড়ায়। ষাঁড়টি বাগানের দিকে পিছিয়ে যেতে থাকে—এবং তখনই শ্যাডো জনিকে গলি দিয়ে আসতে দেখে। সে আতঙ্কে তাকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে।

‘কাছে এসো না! যাও সাহায্যের জন্য কাউকে নিয়ে এসো! ষাঁড়টা বেরিয়ে গেছে!’

জনি ষাঁড়টিকে দেখতে পায়। দেখে শ্যাডো ওকে ঘিরে ঘেউ ঘেউ করছে। সে জানে ষাঁড়টাকে ফেরাতে তার একার চেষ্টা কোনো কাজেই আসবে না, তাই সে ঘোড়ার সাজ পরাতে ব্যস্ত কামলাদের দিকে ছোটে, কাছে গিয়ে তাদের চিৎকার করে ডাকে। এতক্ষণ শ্যাডো আস্ত থাকবে সেটা সে কী করে আশা করতে পারে! তার কুকুর ছানাটি ষাঁড়ের গুঁতো খাবে এটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না।

‘পিঙ্কার বেরিয়ে গেছে! তাড়াতাড়ি! পিঙ্কার বেরিয়ে গেছে!’ জনি চিৎকার করে বলে। লোকেরা কাজ ফেলে আস্তাবল ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। ওরা তাদের খড় তোলার কাঁটাওয়ালা লাঠিগুলো তুলে নেয় এবং গলির দিকে ছোটে। পিঙ্কার একবার শুধু ওদের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে ভাবে ওদের দিকে তেড়ে গেলে কতগুলোকেই না গুঁতো মেরে আঁছড়ে ফেলা যাবে—কিন্তু এরপরই সে ওদের হাতের কাঁটাগুলো দেখতে পায় এবং সুবোধের মতো আচরণ করবে বলে ঠিক করে।

তখনই শ্যাডো ওর পায়ে কষে কামড় বসায়। খুব জোরে! ষাঁড়টা প্রচণ্ড ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে এবং দৌড়ে বাগানে ফিরে যেতে শুরু করে। লোকেদের একজন আগে থেকেই গেটটা খুলে রেখেছিল এবং ষাঁড়টি শান্ত ভঙ্গিতে সেখান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। পলকে গেট বন্ধ করে দেয়া হয় এবং লোকদের দুজন বেড়ার ফাঁকটাও মেরামত করতে লেগে যায়।

‘ভালোই হলো, শ্যাডো!’ জনি বলে। ‘তুমি খুব ভালোভাবেই ধাড়ি পিঙ্কারের মোকাবেলা করেছো! তোমাকে নিয়ে আমি গর্বিত!’ ভালো, অবশ্যই, শ্যাডো এতটাই খুশি হয় যেন ওর একটা লেজ দুটা হয়ে গেছে। এবং এমনই দাপাদাপি শুরু করে যে ভালো করে দেখতেও পাচ্ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা জনির প্রশংসা পৃথিবীতে তার সব থেকে বেশি পছন্দের। ঘটনাটা সে মুরগী, হাঁস, শুকর ছানা, অন্যান্য কুকুর, এবং ঘোড়াদের বলার জন্য হুড়মুড় করে ছুটে যায়।

কিন্তু শ্যাডোর এই গর্বের কারণ ওরা কেউই বুঝে উঠতে পারে না! একটা পুঁচকে মুরগী ছানাই কেবল অবাক হয়ে ষাঁড়ের গল্পটা শোনে। লাল মুরগীটা কক্ কক্ করে চেঁচিয়ে ওঠে এবং তাকে অহঙ্কার করতে বারণ করে। শুকরেরা ঘোঁতঘোঁত করে বলে তারা ষাঁড়টিকে মোটেই ভয় পায় না! এমনকি হাঁসেরাও ওর কথা শুনতে চায় না। ওরা দল বেঁধে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং চলে যাবার আগে উদ্ধত পুঁচকে ছানাটির গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়।

বড় এক্কাগাড়ি টানা ঘোড়াটিও শ্যাডোর গল্পটা শোনে এবং কাছের একদলা কাদার মাঝে শক্ত করে পা ঝাড়া মারে। কাদা ছিটকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছানাটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাদায় একাকার হয়ে যায়! সে কী বিভ্রান্তিতেই না পড়ল!

‘এটা কী করলে? নির্দয় ঘোড়া কোথাকার!’—ভালো করে গা ঝাড়া দিয়ে, শ্যাডো চেঁচিয়ে ওঠে। ‘তুমি সাবধান হয়ে যাও! যদি একটা ষাঁড়কেই সামাল দিতে পারি, তাহলে তোমাকেও তাড়া করতে পারব!’

ঘোড়াটি হ্রেষাধ্বনিতে অট্টহাসি হেসে আবারও আগের মতোই কাদায় পা চালায়। ক্ষোভ আর হতাশায় শ্যাডো দৌড়ে সরে আসে। সে এমন বুদ্ধিমান আর সাহসী হবার পরও কেন সব জন্তু-জানোয়ার তার সঙ্গে এমন অদ্ভুত আচরণ করছে?

কারণটা টিঙ্কার তাকে খুলে বলে। ‘আমরা যে বিস্ময়কর কাজগুলো করি তা ঘুরে ঘুরে কাউকে বলে বেড়াই না!’ সে বলে। ‘আমাদের সাহসিকতা বা ভালো কাজের কথা বরং অন্যদের বলে বেড়াতে দিই, শ্যাডো। আমরা সবাই যদি তোমার কথা শুনি আর প্রশংসা করি তাহলে তুমি অহঙ্কারী এবং আত্মদর্পী হয়ে উঠবে। আমাদের মতো আর দশটা কুকুর যা যা করে তুমি কেবল সেটাই করেছো। ’

‘আমি দুঃখিত,’ লজ্জায় শ্যাডো বলে। ‘এর বেশি আমি আর একটা শব্দও বলতে চাই না, টিঙ্কার। সত্যিই চাইছি না। ’

এবং সেও আর কথা বাড়ায় না—এবং এরপর থেকে অবাক হয়ে দেখে সবাই তার কাছ থেকে ষাঁড় নিয়ে সেই অভিযানের কাহিনী শুনতে চাইছে! ভালো, ভালো—শ্যাডো ভালাই শিখেছে এবং ভালো ভালো অনেক অভিযানের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে। এবং জনিও তার ওপর সন্তুষ্ট, এটাই তার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

পর্ব ৯ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।