এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)
ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।
তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ
এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।
জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।
পর্ব ১০ পড়তে ক্লিক করো
সাত. শিপ-ডগেদের ট্রেইল
রাফে তার ভেড়া নিয়ে সবার আগে ফিরে আসে। ও পাহাড়ের দিকে ছুটে যাবার সময় মনে হয়েছিল ওর থাবাগুলো বুঝি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। অন্য পাঁচটি কুকুরের গতিও ছিল খুব দ্রুত। রাফে যখন তার ভেড়ার কাছে পৌঁছায়, সেটা তখন নীরবে ঘাস খাচ্ছিল। রাফে কাছে যাবার পর সেটা মাথা তোলে এবং কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। রাফে ওকে ঘিরে দৌড়াতে শুরু করে এবং পাহাড় থেকে নামিয়ে আনে। অন্য কুকুরেরাও তাদের ভেড়াদের নিয়ে একই কাজ করে কিন্তু দুটা ভেড়া ভুল পথে ছুটে যায়। রাফের ভেড়াটি পায়ের কাছে নাক লাগিয়ে থাকা কুকুরটির কাছ থেকে পালাতে চুপচাপ পাহাড় থেকে নেমে আসে।
অন্য কুকুরদের একটি তার ভেড়াটিকে খুব দ্রুত নামিয়ে আনতে চেষ্টা করে, এবং ভড়কে গিয়ে জন্তুটি আবারও পাহাড়ের দিকে ছুটতে থাকে।
‘আমার মতে, আজকে এখানে কিছু চমৎকার কুকুর এসেছে!’ ট্রেইলের দিকে তাকিয়ে, কৃষক বলে। ‘এত দ্রুতগামী আগে দেখিনি, এবং এরা শিপ-ডগের চাইতেও ক্ষিপ্র! দেখো জনি—ওদিকে ওই কুকুরটিকে দেখো, তার সঙ্গীর সাথে কাজ করছে—ওর ওপর নজর রেখো। কথা বলা ছাড়া ও সবই করতে পারে! কী করতে হবে সারাক্ষণ সে তা তার সঙ্গীকে বলে দিচ্ছে, এবং দ্বিতীয় কুকুরটিও তা মানছে—এবং একে ওপরকে ওরা সামান্য ঘেউ ঘেউও করছে না
‘ওহ পেডি, পেডি, তুমি তোমার ভেড়াকে খুব তাড়া দিচ্ছো!’ যার কুকুর সেই কৃষক বলে ওঠে।
রাফে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আসে। তার ভেড়াটি দ্রুত থেকে আরো দ্রুত পাহাড় থেকে নেমে আসে, ভয় পায় না, বরং অন্য কুকুরদের পিছু ফেলে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্তে অটল। এবং রাফে পুরো একটা মিনিট আগেই জেতার খুঁটির কাছে পৌঁছায়। সে নাক দিয়ে গুঁতিয়ে একটা খাঁচায় ঢুকাবার পরই কেবল তার ভেড়াটির পিছু ছাড়ে।
জনি খুশিতে চিৎকার করে ওঠে। বুড়ো রাফে খুব ভালো! এটা ওর জন্য আরো একটা পুরস্কার। বুড়ো রাফে ভালো! টিঙ্কার এবং ড্যান্ডি গলা ধরে আসার আগ পর্যন্ত ঘেউ ঘেউ করে। সবাই তালি দিতে দিতে উল্লাসে চেঁচিয়ে ওঠে। রাফে তাদের দিকে তাকিয়ে আলতো করে লেজ নেড়ে মালিকের দিকে ছোটে।
‘খামখাই, কতবড় একটা কোলাহল!’ সে টিঙ্কারকে ঘেউ ঘেউ করে বলে। ‘এই জিনিস তো আমরা প্রতিদিনই করি?’
‘হ্যাঁ—কিন্তু তুমি বাকিদের থেকে খানিকটা ভালো করেছো!’ টিঙ্কার গর্বের সঙ্গে বলে। ‘এখন দেখো—আরেকটি ট্রেইল আসছে। এবারেরটায় আমি আর ড্যান্ডি আছি। ’
একেরপর এক প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। ভেড়াদের এক কোণায় ঘিরে রাখা হয় এবং দরকার মতো সেখান থেকে তাদের অন্যত্র নেয়া হয়। এদের এক খাঁচা থেকে অন্য খাঁচায় নেয়া হয়। কখনো কখনো একটা কুকুর কাজে লাগানো হয়, কখনো দুটা। কুকুরদের মিলেমিশে কাজ করতে দেখা, আড়চোখে একে অন্যের ওপর নজরদারি দেখা, সঙ্কেত হিসেবে লেজ নাড়তে দেখা, অযথা ঘেউ ঘেউ না করে চুপচাপ থাকতে দেখা, মন দিয়ে কাজ করতে দেখা, সত্যিই চমৎকার।
টিঙ্কার ও ড্যান্ডি ট্রেইলের অন্য কুকুরদের মতো অতটা ভালো করছে না। ওদের খাঁচায় পালের মধ্যে একটা উদভ্রান্ত ভেড়া রয়েছে, এবং সেটা বাকিদের অনুসরণ করছে না।
টিঙ্কার আর ড্যান্ডি সেটাকে নিয়ে খুব খাটাখাটনি করছে, কিন্তু নির্বোধ জন্তুটা দল ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ায় এবং ভুল পথে চলে যেতে থাকে।
জনি আর্তনাদ করে ওঠে। ‘কি লজ্জা!’ সে বলে। ‘ওই একটা ভেড়া টিঙ্কার আর ড্যান্ডির ট্রেইল নষ্ট করে দিচ্ছে। ওরা অন্যসব কুকুরের পিছে পড়ে আছে। ’
‘এটা ওদের দোষ নয়। ’ ওর বাবা বলে। ‘ভেড়াটা ভালো নয় বরং একগুঁয়ে। টিঙ্কার আর ড্যান্ডির দুর্ভাগ্য, তবে যে করেই হোক ওরা সাধ্যমতো চেষ্ট করে যাচ্ছে। ’
খেলা শেষে ফিরে আসার পর ড্যান্ডি আর টিঙ্কারকে বরং লজ্জিত দেখায়। তবে জনির বাবা হাত বুলিয়ে ওদের খুব করে আদর করে। এবং বলে, ‘ভালোই করেছো!’ তাই ওদের লেজ দাঁড়িয়ে যায় এবং পরের প্রতিযোগিতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
‘আমার মতে, আজকে এখানে কিছু চমৎকার কুকুর এসেছে!’ ট্রেইলের দিকে তাকিয়ে, কৃষক বলে। ‘এত দ্রুতগামী আগে দেখিনি, এবং এরা শিপ-ডগের চাইতেও ক্ষিপ্র! দেখো জনি—ওদিকে ওই কুকুরটিকে দেখো, তার সঙ্গীর সাথে কাজ করছে—ওর ওপর নজর রেখো। কথা বলা ছাড়া ও সবই করতে পারে! কী করতে হবে সারাক্ষণ সে তা তার সঙ্গীকে বলে দিচ্ছে, এবং দ্বিতীয় কুকুরটিও তা মানছে—এবং একে ওপরকে ওরা সামান্য ঘেউ ঘেউও করছে না। ’
ট্রেইলের অর্ধেকটা পেরিয়ে গেছে, সবাই এখন দুপুরের খাবার খাচ্ছে। ছোট ছোট ঘাসের ওপর বসে, পনির আর টমাটো স্যান্ডউইচ চিবাতে চিবাতে, বাড়িতে তৈরি কড়া আর মিষ্টি লেমনেড-এ চুমুক দিতে দিতে, জনি এই বনভোজনটা উপভোগ করছে!
ওর মা তাকে দেখে হাসে। ‘জনি, আমি ভাবতে পারছি না তুমি এর বেশি খেতে পারবে! এরই মধ্যে তুমি বারোটা স্যান্ডউইচ সাবার করে দিয়েছো!’
‘না—আমি পনেরটা খেয়েছি। ’ জনি বলল। ‘আমি গুনেছি। ওহ, মা—আর কি নেই?’
‘ভালো, আমার মনে হয় বিশটা খাবার পর তোমার থামা উচিত। ’ ওর মা বলে। ‘দেখো—এর পরের জন্য ওখানে কিছু আদা কেক রয়েছে। ওদের জন্য জায়গা রেখো। ’
‘ওহ, আমার পেটে তাল তাল জায়গা খালি আছে,’ জনি বলে। ‘এখনো শুরুর মতোই ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে, মা। ’
উজ্জ্বল রোদে ছাওয়া উষ্ণ ঘাসের চাপড়ার ওপর ছোট্ট পার্টি বসেছে, সবাই পাহাড় জুড়ে বইতে থাকা তীব্র বাতাস উপভোগ করছে। অনেক দূরে একটা সরু নীল রেখার মতো—সাগর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। জনি ভাবে কাছে হলে গোসল করা যেত।
সবগুলো কুকুর উষ্ণ ঘাসের ওপর টান টান হয়ে শুয়ে আছে। ট্রেইল শেষে ওরা এখন খুব ক্লান্ত, তবে সামনে আরো কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সেটা ওদের জানা, তাই ওরা চুপচাপ বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু শুয়ে থাকতে থাকতে ড্যান্ডি খুব শীঘ্র ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সঙ্গীদের মাঝে সেই সবচেয়ে বেশি চঞ্চল, এবং কখনোই খুব বেশি সময়ের জন্য চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারে না।
সে উঠে দাঁড়ায়, নাক মাটিতে রাখে এবং ঘ্রাণ পাওয়া একটা পায়ের ছাপ অনুসরণ করে ছুটতে শুরু করে।
‘ড্যান্ডি! খুব বেশি দূরে যেও না!’ কৃষক ডেকে বলে। ‘শীঘ্র ম্যাচটা আবারও শুরু হবে। ’
ড্যান্ডি লেজ নাড়ে। সে ভালো করেই জানে খুব বেশি দূরে যাচ্ছে না। পাহাড়ের নিচ নেমে সে সুখী ভঙ্গিতে লেজ দোলাতে থাকে। শ্যাডো ওর সঙ্গে যেতে চায়—কিন্তু জনিকে ছেড়ে যেতে পারে না। বাচ্চা কুকুরটা খুব সুখী। ট্রেইল দেখতে খুবই মজা—এবং একদিন সেও ওদের সঙ্গে খেলবে ভাবতেই নিজেকে অনেক বড় বলে মনে হতে থাকে।
শিগগিরই পরের প্রতিযোগিতার ঘণ্টা বেজে ওঠে। কৃষক উঠে দাঁড়ায় এবং পাহাড়ের নিচের দিকে তাকায়। ‘এখন ড্যান্ডিটা আবার গেল কোথায়?’ সে বলে ‘ওর তো এখনই ফিরে আসা দরকার। জনি, তুমি কি ওকে দেখেছো?’
জনি লোকজন আর কুকুরদের ভিড়ের মাঝে তাকায়, কিন্তু তার তীক্ষ্ণ তরুণ চোখও ড্যান্ডিকে কোথাও খুঁজে পায় না। ‘আমি গিয়ে খুঁজে নিয়ে আসছি’ সে বলে। ‘এসো, শ্যাডো। ’
পর্ব ১২ পড়তে ক্লিক করো
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
ইচ্ছেঘুড়ি
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১১)
অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।