স্বাধীনতার ১২ বছর পর আমার জন্ম
কিন্তু আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি।
ছোটবেলায় মা শোনাতেন গণ্ডগোলের কথা
আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠত, আমি
ভয়ে আতঙ্কিত হতাম, তিনি শোনাতেন
আত্মরক্ষা আর সম্ভ্রম বাঁচানোর চেষ্টা
মা’র মুখখানি অগ্নিমূর্তি ধারণ করত ক্রমেই
বুঝতাম না গণ্ডগোল কী
দেখতে পেতাম মা’র মুখে ফুটে উঠেছে
ঘৃণা, ক্রোধ আর প্রতিশোধের দাবানল
মা’র মুখমণ্ডলে আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি।
স্বাধীনতার ১২ বছর পর আমার জন্ম
আমি শুনেছি মৌসুমী ভৌমিকের যশোর রোড
জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ, শুনেছি
গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা
জ্বালাময়ী ভাষণ আর বজ্রকণ্ঠের স্লোগান
তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখি যখন
জগন্নাথ হলের মালি শ্যামলা
স্মৃতিচারণ করেন সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের।
আমি পড়েছি একাত্তরের দিনগুলি, মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস, পড়েছি ওজাতির দুইবছর
স্বাধীনতা তুমি, আমি শুনি
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি
আমি দেখি ওরা এগারজন, স্পার্টাকাস-৭১ ও
এর সিক্যুয়াল, বারবার আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখি।
যখন শুনি বেলুচিস্তানের কসাইয়ের এমন
বিবৃতি—এদেশের মানুষ চাই না, মাটি চাই
কিংবা রাজাকারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ উচ্চারণ
এদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি
আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ।
স্বাধীনতার ১২ বছর পর আমার জন্ম
তবু আমি কাঁদি, যখন দেখি
এদেশের মাটিতেই মুক্তিযোদ্ধা তার সনদ
থালায় রেখে ভিক্ষা করে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
বঙ্গভবনের ফেলে দেওয়া খাবারের প্রত্যাশায়
রাজ্যের ক্ষুধা নিয়ে বসে থাকে বাইরে
আমি লজ্জিত হই—যখন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসার অভাবে
তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়
যখন রাষ্ট্রযন্ত্র নিশ্চুপ থাকে মুক্তিযোদ্ধা
কথিত কোনো সংগঠনের কর্মীর হাতে
লাঞ্ছিত হওয়ার পরও।
আমি বারবার মুক্তিযুদ্ধ দেখি আর
ঝাপিয়ে পড়ি যুদ্ধে, বর্বর পিশাচদের ওপর
বেয়নেট চার্জ করি, চামড়া ছিলে লবণ লাগাই
চুল দাড়ি চেঁছে সারা শরীরে বর্বর লিখে
বিশ্বময় ঘোরাই, গুঁড়িয়ে দিই ওদের আস্তানা
ধ্বংস করি হায়েনাদের
আইফেল টাওয়ারে উল্টা করে বেঁধে রাখি
আমার স্বস্তি হয় না, সাধ মেটে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫