অর্পা স্কুলে এলো। ক্লাসরুমে বসলো।
একটু পর ক্লাসের সবাই তার পাশে এসে দাঁড়ালো। অর্পা আরও অবাক হলো। কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ঘটনা কী!
বান্ধবী তপতী বললো, অর্পা, তোমার বাবা নাকি রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে পোস্টার বিক্রি করতেন। তুমি ফেরিওয়ালার মেয়ে!
অর্পা বেঞ্চে থেকে উঠলো। তারপর তপতীর দিকে তাকিয়ে বলল, কী! আমার বাবা ফুটপাতে পোস্টার বিক্রি করতেন। তোমাকে কে বলেছে?
তপতী বলল, কে বলেছে মানে! তোমার বাবাই তো বলেছেন। আজ পত্রিকায় তোমার বাবার সাক্ষাৎকার ছাপা এসেছে।
অর্পা রেগে বললো, মিথ্যা কথা বলছ? আমার বাবার তো এসি রুমের বসে ব্যবসা করেন।
অর্পার আরেক বান্ধবী প্রিয়াংকার হাতে পত্রিকা। পত্রিকাটা অর্পার সামনের বেঞ্চে রেখে বললো, এই দেখো। এটা তো তোমার বাবার ছবি। ছবি দেখেতো অস্বীকার করতে পারবে না। ছবির পাশে কি লেখা আছে পড়ো।
অর্পা তাকিয়ে দেখে সত্যি বাবার ছবি। সাক্ষাৎকারটা তার মনোযোগ দিয়ে লেখাগুলো পড়লো। পড়া শেষে অর্পা সঙ্গে ক্লাসরুমে কান্না শুরু করলো। বান্ধবীরা সবাই তাকিয়ে রইলো। একটু পর অর্পা রাগ করে স্কুলব্যাগ নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হলো।
অর্পা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢুকলো। ওর মা অর্পার কান্না করতে করতে স্কুল থেকে বাসায় আসা দেখে অবাক হলেন। ভাবলেন, অর্পা স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এলো কেন?
তারপর মা বললেন, অর্পা, তোমার কী হয়েছে? এত তাড়াতাড়ি আজ স্কুল থেকে চলে এলে কেন? কাঁদছ তুমি? কারণ কী বলো তো?
অর্পা স্কুলব্যাগ রেখে বললো, আমি আর স্কুলে যাব না।
মা অর্পার মাথায় হাত দিয়ে বললো, স্কুলে যাবে না কেন? কী হয়েছে তোমার?
আমার বান্ধবীরা আমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলেনি আজ।
কেন? ঘটনা কী বলো তো?
অর্পা দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, বাবা, নাকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেন। পত্রিকায় বলেছেন। বান্ধবীরা পড়েছে বাবার সাক্ষাৎকার। আমি নাকি ফুটপাতের ব্যবসায়ীর মেয়ে।
তুমি চুপ করো অর্পা। বিষয়টা তোমার বাবাকে মোবাইল ফোনে কল করে বলি।
আচ্ছা, তুমি বাবাকে এক্ষুনি জানাও।
মা কল করে অর্পার বাবাকে বললেন, শোনো, অর্পা কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে বাসায় এসেছে। আর স্কুলে যাবে না।
অপর পান্তে অফিস থেকে অর্পার বাবা বললেন, ‘কেন? কী হয়েছে অর্পার?’
তুমি না কি পত্রিকায় বলেছ, ফুটপাতে ব্যবসা করো। এসব বলার দরকার আছে। ওর বান্ধবীরা পত্রিকা পড়েছে। অর্পাকে নানা রকমের কথা বলেছে ওর বান্ধবীরা। তাই কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছে। বলেছে আর ওই স্কুলে যাব না।
তাই! ফোনটা অর্পাকে দাও।
অর্পার হাতে মোবাইল ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলেন ওর মা। কিন্তু অর্পা মোবাইল ফোন হাতে না নিয়ে বললো, আমি কথা বলব না বাবার সঙ্গে।
অর্পার মা বললেন, শোনো, অর্পা তোমার সঙ্গে এখন কথা বলবে না।
আপর প্রান্ত থেকে ওর বাবা বললেন, তুমি অর্পার কান্না থামাও। বিষয়টা আমি দেখছি।
আচ্ছা, ঠিক আছে।
মোবাইল ফোনটা রেখে অর্পাকে আদার করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন মা।
অর্পার বাবা স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার কাছে কল দিলেন। বিস্তারিত বললেন। প্রধান শিক্ষিকা অর্পার বাসায় কল দিলেন। তারপর অর্পার সঙ্গে কথা বলে বললেন, ঠিক আছে। কাল স্কুলে এসে দেখিয়ে দেবে। কোন কোন মেয়ে তোমাকে এসব কথা বলেছে। তাদের দেখিয়ে দেবো।
অর্পা বললো, ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি দেখিয়ে দেবো।
পরদিন অর্পা স্কুলে এলো। চুপচাপ ক্লাসরুমে বসলো। একটু পর হেড ম্যাডাম নাছিমা ঢুকলেন সঙ্গে অর্পার বাবাকে নিয়ে। ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে দাঁড়ালো। ম্যাডাম সবাইকে বসতে বললেন।
ম্যাডাম বললেন, অর্পা এবার বলো। কারা তোমাকে ফুটপাতের ব্যবসায়ীর মেয়ে বলেছে?
অর্পা দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে বেশ কয়েকজনকে দেখিয়ে দিলো।
ম্যাডাম তাদের দিকে তাকালেন। মেয়েরা ম্যাডামের তাকানো দেখে বলল, ম্যাডাম, সত্যি বলছি। কালকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
অর্পার বাবা বললেন, গুড, তোমরা বসো।
ম্যাডাম বললেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত, খুবই খুশি, অর্পার বাবা ফুটপাতে ব্যবসা করে আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছেন। তোমরা কি জানো, আমার কোনো সন্তান নেই।
ক্লাসরুমের অনেকেই একসঙ্গে বললো, জি ম্যাডাম, জানি।
ম্যাডাম বললেন, তাহলে আজ থেকে অর্পার বাবা আমার ছেলে। আর আমার এই ছেলে ফুটপাতে থেকে ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করেছে। তাহলে এবার বলো অর্পা আমার কি হচ্ছে?
অনেকেই একসঙ্গে বলল, নাতনি।
ম্যাডাম বললেন, এখন তোমরা বলো, অর্পা আজ থেকে আমার নাতনি। সম্মান এখন কার বেশি, তোমরা এখন বলো?
মেয়েরা বললো, ম্যাডাম, অর্পা। আপনার নাতনির।
অর্পা বাবা বললেন, সবাই মিলে মিশে থাকবে। কখনো কাউকে ছোট করে দেখবে না। মানুষকে মূল্যায়ন করা শিখবে। সে অভ্যাসটা এখন থেকেই তোমাদের গড়ে তোলা উচিত।
ম্যাডাম বললেন, ভালো ছাত্রী হলেই হবে না। সবার সঙ্গে আচার-ব্যবহার ভালো করে করতে হবে। অন্যকে ছোট করে দেখা যাবে না। হিংসা, বিদ্বেষ অন্যকে ছোট ভেবে অবহেলা করা যাবে না। কথাগুলো মনে রাখবে সব সময়।
সবাই চুপচাপ। ম্যাডাম আর অর্পার বাবা ক্লাসরুম থেকে বের হলেন। বান্ধবীরা ভালোবেসে জড়িয়ে ধরলো অর্পাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৫
এএ
ইচ্ছেঘুড়ি
ক্লাসরুমে অর্পার কান্না | রণজিৎ সরকার
গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।