আট বছরের রিয়ানা ভীষণ দুষ্টু। লেখাপড়া মোটেই করতে চায় না।
তো একদিন দুপুরে রিয়ানা কিছুতেই ভাত খাচ্ছে না। তখন রিয়ানার আম্মু রিয়ানাকে একটা মামদো ভূতের গল্প বললো। গল্পটা ওর খুব পছন্দ হলো। আর সেদিন গল্পটা শুনতে শুনতে রিয়ানা আম্মুকে একটুও ডিস্টার্ব না করে পুরো ভাত খেয়ে ফেললো। ভাত খেয়েই শান্ত মেয়ের মতো বিছানায় গিয়ে দিলো এক ঘুম।
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখল রিয়ানা। দেখলো, ও একটা বনের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ওর সঙ্গে আর কেউ নেই। এমন সময় কে যেন পেছন থেকে বললো, তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
রিয়ানা বললো, ‘কে? কে এমন করে কথা বলছে?’
তখন সেই কণ্ঠস্বরটা বললো, ‘আমি আয়না। মামদো ভূতের একমাত্র মেয়ে। এ কথা শুনে রিয়ানা হঠাৎ রেগে গিয়ে বললো, ‘দেখ আয়না, তুমি আমাকে মিথ্যে কথা বলবে না। আয়না কারও নাম হয় নাকি? আয়না তো চেহারা দেখার কাজে লাগে। আর তাছাড়া তুমি আমার সামনে আসছ না কেন? অদৃশ্য কারও সঙ্গে আমার কথা বলতে ভালো লাগে না। ’ আয়না রিয়ানার এই কথা শুনে বললো, ‘আমি তো তোমার সামনেই আছি। আমি ভূত তাই তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না।
আর ওই যে আমার নামের কথা বললে, আমাদের ভূত রাজ্যে আয়না নামের খুব সুন্দর একটা অর্থ আছে। আয়না অর্থ সুন্দরী। আমি আমাদের ভূত মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী কিনা, তাই। আর তোমাদের দেশে আয়না অর্থ যাই হোক, তা দিয়ে আমাদের ভূতদের কি যায় আসে?
আচ্ছা, এখন আমার নামের কথা বাদ দিয়ে তোমার নাম কি সেটাই বল। ’
রিয়ানা বললো, ‘আমার নাম রিয়ানা’।
শুনেই আয়না হেসে উঠে বলল, ‘হিঁ হিঁ হিঁ... রিয়ানা কারো নাম হয় নাকি? কি পচা একটা নাম। তোমার মা-বাবা তোমার নাম রিয়া রাখতে গিয়ে ভুলে রিয়ানা রেখেছে। ভূত রাজ্যে রিয়ানা মানে কান্না। ’
রিয়ানা বললো ‘আমি মোটেই কাঁদি না। আর দেখ, আমার নাম নিয়ে তুমি কোন ফাজলামি করবে না। তাহলে কিন্তু ভালো হবে না। ’
তখন আয়না বললো, স্যরি রিয়ানা আমি আর তোমার নাম নিয়ে ফাজলামি করবো না। চল আমরা দু’জনে বন্ধুত্ব করে ফেলি। চল তোমাকে আমাদের ভূতের দেশে নিয়ে যাই। ’
‘কিন্তু আমি তোমাদের ভূতের দেশে কীভাবে যাবো? আমি তো বাতাসে ভাসতে পারি না। ’
আয়না শুনে বললো, ‘তাও তো ঠিক। তুমি আমাদের দেশে কিভাবে যাবে। তার চেয়ে বরং চল, আমরা দু’জন এখানেই লুকোচুরি খেলি। ’
‘লুকোচুরি খেলব কি, আমি তো তোমাকে এমনিতেই দেখতে পাচ্ছি না। ’
ঠিক আছে, তাহলে বরং দড়ি লাফ খেলি। ‘এ কথা শুনে রিয়ানাও রাজি হয়ে গেলো।
তারপর আয়না আর রিয়ানা মিলে অনেকক্ষণ দড়ি লাফ খেললো। হঠাৎ রিয়ানা খেয়াল করলো তার বাড়ি ফিরতে হবে। বললো, ‘এই রে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আম্মু নিশ্চয়ই আমার জন্য চিন্তা করছে। এখন আসি আয়না। ’ আয়নাও বলল,‘হ্যাঁ, আমিও যাবো।
সকালবেলা আমি এমনিতেও জেগে থাকতে পারি না। আমিও আসি। টা-টা। গুডবাই। ’
এদিকে সকালবেলা আম্মু রিয়ানাকে ডাকতে এসে দেখে বিছানায় নেই। সারা বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে আম্মু যেই খাটের নিচে উঁকি মারলো, দেখলো রিয়ানা খাটের নিচে ঘুমিয়ে আছে। আর ঘুমের মধ্যে কাকে যেন বলছে, টা-টা, গুডবাই। আম্মু রিয়ানার পা ধরে টানতে টানতে ওকে খাটের নিচ থেকে বের করলো। রিয়ানা তখনও ঘুমের মধ্যে বলছে আয়না, টা টা, গুডবাই।
আম্মু তখন রিয়ানাকে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি কখন থেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আয়না আয়না করছো, আয়নাটা আবার কে? রিয়ানা তখন চারপাশে দিখতে লাগলো, দেখে মনে হলো কাউকে যেন খুঁজছে। কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। তখন রিয়ানা বুঝলো ও আসলে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এএ