এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)
ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।
তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ
এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।
জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।
পর্ব ২৬ পড়তে ক্লিক করো
সতের. বিপদে পড়ল স্পট
স্পট খুব ভালো করেই জানত অন্যসব কুকুর তার ওপর রেগে আছে, এবং তাই সে ভীত ছিল। সে অতি আদরে বখে যাওয়া ছোট্ট একটি কুকুর এবং মেষ রাখালের খাবার খাওয়া তার মোটেই দরকার ছিল না, কারণ তার কর্ত্রী তাকে অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়ান। তিনি সবসময়ই ওকে চকলেট এবং মিষ্টি বিস্কিট দেন এবং এমন আরো অনেক খাবার খাওয়ান যা একটি কুকুর ছানার স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ।
‘তুমি ভয়ানক মোটা। ’ খামারের বাগানে মিস রবিনস যেখানে বসে ছিলেন সেখান দিয়ে যাবার সময়, শ্যাডো স্পটকে কথাটা বলে, স্পট তখন তার পাশে বসেছিল। ‘কদিন পর দেখবে তুমি এতটাই মুটিয়ে গিয়েছো যে দৌড়াতেই পারবে না—তখন আমরা তাড়া করার পর আর দৌড়ে ভাগতে পারবে না। পুঁচকে লোভী কুকুর!’
স্পট তবু ধরা দিতে রাজি নয়! হঠাৎ ভাবে খুব সহজেই সে সাঁতরে পুকুরের অন্যপাড়ে গিয়ে উঠতে পারবে, এবং সেখান দিয়ে পালাবে। তাই হাত-পা ছড়িয়ে পানিতে ঝাঁপ দেয়, সাঁতরাবার জন্য ছোট ছোট পাগুলো ছুড়তে থাকে। কিন্তু হায় স্পটের কপালে দুঃখই লেখা ছিল! পুকুরের মাঝামাঝি যাবার পর, তার পাগুলো কিছু আগাছার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ওগুলো তাকে নিচের দিকে টানতে থাকে। সে ডুবে যায়। তার মাথাটা পানির ভেতর হাবুডুবু খেতে খেতে, ফুত ফুত শব্দ করতে থাকে এবং দম আটকে আসে
স্পট শ্যাডোকে দেখে বিশ্রীভাবে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। তার কর্ত্রীর সঙ্গে থাকলে সবসময় সে নিজেকে খুব নিরাপদ ভাবে। তিনি তাকে অত্যন্ত পছন্দ করেন এবং তিনি কাছে থাকলে আধ ডজন কুকুরও যদি সাহস করে ওর দিকে তেড়ে আসে তাহলে তিনি তাদের সবগুলোকে সরিয়ে দেন।
শ্যাডো কাছাকাছি এক জায়গায় শুয়ে, এক চোখ খোলা রেখে স্পটের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ইচ্ছে সম্ভব হলে ওকে একা পাওয়া। প্রকাণ্ড শিপ-ডগটির দিকে তাকিয়ে স্পট ঘেউ ঘেউ করতেই থাকে। এতে মিস রবিনস খুবই বিরক্ত হন, তারপর শ্যাডোকে ডাকেন।
‘এখান থেকে ভাগো! দেখতে পাচ্ছো না স্পট তোমাকে পছন্দ করছে না?’
শ্যাডো শুনবার জন্য তার কান খাড়া করে—তবে একটুও নড়ে না। সে আবারও থাবার ওপর মাথাটা নামিয়ে রাখে এবং স্পটের দিকে চেয়ে থাকে। মিস রবিনস খুব রেগে যান।
‘আমি বলার পরও তুমি কি এখান থেকে যাবে না, বেয়াদপ কুকুর! না গেলে আমি জনিকে ডাকছি। ’
তবু শ্যাডো একচুলও নড়ে না। মিস রবিনস কাছেই জনির শিস শুনতে পান এবং তাকে চেঁচিয়ে ডাকেন।
‘জনি! জনি! তোমার কুকুর যেচে এসে জ্বালাতন করছে! এদিকে এসে ওকে সরিয়ে নাও। এবং এইসব অদ্ভুত শিস দেয়া বন্ধ করো! এটা আমার মাথায় লাগছে। ’
জনি শিস দেয়া বন্ধ করে। সে বাগানের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে শ্যাডো চুপচাপ শুয়ে আছে এবং স্পট পাগলের মতো ঘেউ ঘেউ করছে।
‘মনে তো হচ্ছে না আমার কুকুর কিছু করছে,’ ভদ্রভাবে জনি বলে। ‘অন্তত নিজের খামার বাগানের ওপর ওর অধিকার স্পটের চেয়ে বেশি। ’
‘আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলো না,’ মিস রবিনস তীক্ষ্ণ স্বরে বলেন। ‘আর, ভাবা যায়, এই সকাল সকাল তুমি এতটা নোংরা হলে কী করে! একটু নিজের জামার দিকে তাকিয়ে দেখো! কালো কালো দাগে ভরা—আর ডান হাতায় কত্ত বড় একটা ফুটো! সত্যিই তোমাকে দেখতে একটা নোংরা-ইতর ছেলের মতো লাগছে! এখান থেকে গিয়ে আগে পরিষ্কার হয়ে আসতে পারো না?’
‘আমি তো গোয়াল ঘর পরিষ্কার করছিলাম। ’ জনি বলে। ‘এসব কাজে ভালো কাপড় পরার কোনো মানে হয় না। পুরাতন এই জার্সিটা ময়লা পরিষ্কারের সময় পরার জন্য। যাই হোক এসব নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে আসিনি, কেবল ডেকেছেন বলেই এলাম। ’
‘সত্যিই, তোমার কুকুর আর তুমি একইরকম নোংরা!’ মিস রবিনস বলেন। শ্যাডোর গা-ও পরিষ্কার করা দরকার—আর ওর কলারটার দেখো! একেবারে গলা থেকে খসে পড়ার অবস্থা। তুমি যদি সত্যি সত্যিই নিজের কুকুরের যত্ন নিতে তাহলে ওকে নতুন একটা কিনে দিতে। কদিনের মধ্যেই এটা পুরোপুরি খসে পড়বে। আর তখন কলার ছাড়া একটা কুকুর রাখার কারণে তোমাকে জরিমানা গুনতে হবে। ’
‘শ্যাডোকে আজকেই ব্রাশ দিয়ে ঘষে-মেজে পরিষ্কার করা হয়েছে। ’ ভদ্র এবং শান্ত ভঙ্গিতে জনি বলে। ‘কিন্তু ও তো পাহাড়ে কাজ করে, আর ওখানকার ঝোপ-জঙ্গলের মাঝে ছুটে বেড়াতে হয়। আর কলারের কথা বলছেন, নতুন একটা কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছি। তবে ওগুলো খুব দামি, আপনি তো তা জানেনই।
‘ঠিক আছে, দোহাই লাগে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাও,’ বৃদ্ধা বলেন। ‘অনেকক্ষণ ধরে স্পট আমার কানের কাছে চেঁচাচ্ছে, আর তোমার এই ভয়ানক নোংরা কুকুরটা শুয়ে শুয়ে আমার আর অসহায় স্পটের দিকে তাকিয়ে আছে, আমার খুব রাগ হচ্ছে। ’
জনিরও খুব রাগ হয়। তবে সে জানে বয়সে বড় কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়, তাই সে বৃদ্ধা মহিলাকে এর বেশি কিছু বলে না। সে গেটের দিকে এগিয়ে যায় এবং সেটা খুলে বেরিয়ে আসে। ইচ্ছে হচ্ছিল খুব জোরে শব্দ করে গেটটা লাগাবে তবে সেটা করলে বোকামি হবে। তাই নীরবে বেরিয়ে আসে। তখনও শুনতে পাচ্ছিল বদমেজাজী পুঁচকেটা সমানে চেঁচাচ্ছে।
‘মনে হচ্ছে ঘেউ ঘেউ করতে করতে ব্যাটা মাথা খারাপ করে ফেলবে,’ জনি ভাবে। ‘সম্ভবত তারপর আর এধরনের উৎপাত করতে পারবে না!’
পরের দু’এক দিন শ্যাডো স্পটের দিকে নজর রাখে, কিন্তু ছোট্ট কুকুরটি এতটাই চালাক যে তাকে একবারও ধরবার সুযোগ দেয় না। শ্যাডো তাই কোথাও লুকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন, স্পট তাকে দেখতে না পেলে, হয়ত একা একা বেরিয়ে আসবে—এবং শ্যাডো পিছু নিয়ে তাকে ধরে ফেলতে পারবে। এই ভেবে শ্যাডো একটা শুকরের খোঁয়াড়ের ভেতর লুকিয়ে পড়ে, এবং একটা ফাটল দিয়ে বাইরে চোখ রাখে কখন স্পট একা বেরিয়ে আসে।
আর পরদিন সন্ধ্যায়, স্পট ঠিকই বের হয়! সারাদিন মিস রবিনসের আদর পেতে পেতে সে খুবই ক্লান্ত। তাই কৃষকের বউয়ের সঙ্গে তার আলাপ করতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে—তারপর খামারের গেট গলে বেরিয়ে যায় এবং হাঁসের পুকুরের দিকে রওনা হয়। ভাবে হাঁসেদের সঙ্গে চেঁচামেচি করতে পারলে ভীষণ মজা হবে।
শ্যাডো ওকে যেতে দেখে। শূকরের খোঁয়াড় গলে বেরিয়ে, ঝোপের পেছন ঘেঁষে সে স্পটের পিছু নেয়। স্পট এদিক সেদিক শুঁকতে শুঁকতে মনের আনন্দে দৌড়াতে থাকে। সে একা একা মজা করে বেড়ায়। এসব তার কাছে খুব ভালো লাগে।
দেখতে দেখতে সে হাঁসের পুকুরে চলে আসে। হাঁসেরা তখন শান্তভাবে পুকুরে সাঁতার কাটছে। স্পট তীরে এসে দাঁড়ায় এবং ঘেউ ঘেউ শুরু করে।
‘আউফ, আউফ, আউফ!’ যতটা জোরে পারা যায় ঘেউ ঘেউ করে, এবং হাঁসেরা ভয়ে পুকুরের অন্যপাড়ে চলে যায়। স্পট এতে খুব মজা পায়। সে ঘুরে পুকুরের সেই প্রান্তে চলে যায় এবং আবারও চেঁচাতে শুরু করে। শ্যাডো চুপি চুপি তার পিছু নিয়েছে ব্যপারটা সে মোটেই লক্ষ্য করেনি।
‘হুউউফ!’ হঠাৎই শ্যাডো স্পটের কানের কাছে এসে বলে। আতঙ্কে ছোট্ট কুকুরটি ঘুরে দাঁড়ায়। দেখে প্রকাণ্ড শিপ-ডগটি তার পালাবার পথ রুদ্ধ করে কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয়ে বিলাপ শুরু করে।
স্পট তবু ধরা দিতে রাজি নয়! হঠাৎ ভাবে খুব সহজেই সে সাঁতরে পুকুরের অন্যপাড়ে গিয়ে উঠতে পারবে, এবং সেখান দিয়ে পালাবে। তাই হাত-পা ছড়িয়ে পানিতে ঝাঁপ দেয়, সাঁতরাবার জন্য ছোট ছোট পাগুলো ছুড়তে থাকে।
কিন্তু হায় স্পটের কপালে দুঃখই লেখা ছিল! পুকুরের মাঝামাঝি যাবার পর, তার পাগুলো কিছু আগাছার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ওগুলো তাকে নিচের দিকে টানতে থাকে। সে ডুবে যায়। তার মাথাটা পানির ভেতর হাবুডুবু খেতে খেতে, ফুত ফুত শব্দ করতে থাকে এবং দম আটকে আসে।
শ্যাডো অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিল। কী ঘটছে? স্পট কেন এরকম অদ্ভুত আচরণ করছে? বড় কুকুরটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
স্পট পানির উপরিতলে ভেসে উঠে, হাঁপাতে থাকে। ভয়ে আর্তচিৎকার করে, এবং থুতু ছিটাতে ছিটাতে আবারও ডুবে যায়। মিস রবিনস সব জায়গায় খুঁজে শেষে, দৌড়ে পুকুরের কাছে আসেন।
‘ওহ্, স্পট, স্পট! তুমি তো ডুবে যাচ্ছো!’ তিনি কেঁদে ওঠেন। ওকে বাঁচাতে তিনি পানিতে নামতে শুরু করেন। তাই শ্যাডো বুঝতে পারে কী ঘটতে যাচ্ছে এবং স্পটকে বাঁচাতে সে পানিতে ঝাঁপ দেয়!
সে বুঝে উঠতে পারেনি পুঁচকে স্পট কতটা ভয় পেয়েছে। সে এটাও ভাবেনি বৃদ্ধা মহিলা ওকে উদ্ধার করতে গিয়ে কতটা কৌতুকের জন্ম দেবে এবং কতটা কাদা পানি গায় মাখবে। সে কেবল দেখেছে তার পক্ষে কিছু একটা করা সম্ভব, এবং সে সেটা করেও। সে সাঁতরে পুকুরের মাঝখানে যায় এবং মাথা ডুবিয়ে স্পটকে খুঁজতে থাকে।
শেষে আগাছায় জড়াজড়ি অবস্থায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। শ্যাডো ছোট্ট কুকুরটির কলারে দাঁত বসিয়ে ঝাঁকুনি দেয়। স্পট দ্রুত পানির ওপরে ভেসে ওঠে। আধাআধি ডুবন্ত অবস্থায়, সে পাগলের মতো একাধারে সবগুলো পা ছুঁড়তে শুরু করে। শ্যাডো তাকে একা ছেড়ে দেয় না। সে সোজা বৃদ্ধা মহিলার দিকে সাঁতরায়, স্পটকেসহ তাকে টানতে শুরু করে। সে স্পটকে নিরাপদে তীরে এনে রাখে তারপর ভালো করে গা ঝাঁকায়।
তার ঘন লোম থেকে ছিটকে হাজার হাজার রুপালি ফোঁটা মিস রবিনসের গায়ে এসে লাগে। কিন্তু সে তা টেরই পায় না। তিনি হাঁটু গেড়ে বসে স্পটকে আদর করতে থাকেন এবং ওর মুখ থেকে বেশ কিছু আগাছা বের করে আনেন।
‘অসহায় ছোট্ট কুকুর!’ তিনি বলতে থাকেন। ‘অসহায় ছোট্ট কুকুর! এবার ঠিক আছে! এখন তুমি সুস্থ আছো। ’
স্পট দ্রুত সুস্থ বোধ করে। সে পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ায় এবং তার কর্ত্রীর দিকে তাকায়। এরপর, তখনও গা ঝেড়ে পানি সরাতে ব্যস্ত, বিশালদেহী শ্যাডোর দিকে তাকায়। সে ওর দিকে দৌড়ে যায় এবং লাফিয়ে গায়ের ওপর পড়ে। সে তার গোলাপি জিহ্বা দিয়ে বিশাল কুকুরটিকে চেটে দেয়।
‘ধন্যবাদ, শ্যাডো, ধন্যবাদ তোমাকে!’ সে ঘেউ ঘেউ করে। ‘তুমি একটি ভালো বন্ধু। আমি তোমার করুণার যোগ্য নই—আমি তা জানি। তবে যদি আমাকে একটা সুযোগ দাও, তাহলে আমি তোমাকে দেখাব আমিও ভালো একটি কুকুর হতে পারি। তোমাকে হাজার হাজার ধন্যবাদ!’
বৃদ্ধা দেখেন স্পট শ্যাডোকে ধন্যবাদ দিচ্ছে, এবং তিনিও শ্যাডোর দিকে এগিয়ে যান। কান্না ভেজা চোখে তিনি ওকে আদর করেন।
‘তুমি একটি ভালো, সহসী, দয়ালু কুকুর,’ তিনি বলেন। ‘আমি জানি প্রিয় স্পটকে তোমার পছন্দ নয়—এবং তারপরও তুমি ওর জীবন বাঁচালে। আমি তোমাকে চমৎকার একটা নতুন কলার কিনে দেব!’
শ্যাডো নম্রভাবে তার লেজ নাড়ে। মিস রবিনসকে তার পছন্দ নয় এবং সে জানে কথাটা তিনি ভুলে যাবেন। কী ঘটেছে তা আর সব কুকুরদের খুলে বলতে সে ছুটে যায়।
‘ঠিক আছে, ভীত পুঁচকে কুকুরটিকে ডুবে যেতে দেখে সম্ভবত তুমি ওকে একা ছেড়ে আসতে পারোনি,’ রাফে বলে। ‘তবে ওর ভালো হয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি, আমি তা বিশ্বাস করি না। ’
‘ঠিক আছে, আমরা ওকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারি,’ শ্যাডো বলে। তাই তারা ওকে একটা সুযোগ দেয়—এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্পট তার কথা রাখে। সে আর কখনোই তাদের দেখে ঘেউ ঘেউ করে না। তাদের বিস্কিট বা খাবার চুরি করে না। তাদের সবার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে এবং তাদের কাছে সবকিছু জানতে চায়, যেন সত্যি সত্যিই সে তাদের কাছ থেকে শিখতে চাইছে।
‘সত্যিই, ও আসলে ওতটা খারাপ সঙ্গী নয়,’ তিনদিন বাদে রাফে বলে। ‘এভাবে চলতে থাকলে, সঙ্গে নিয়ে খামার ঘুরিয়ে আনতে, তেমন কিছু মনে করব না। আমি ওকে অনেক কিছু শেখাতে পারব। তোমাকে কি বৃদ্ধা মহিলা কথামতো নতুন কলার কিনে দিয়েছে, শ্যাডো?’
‘না। ’ শ্যাডো বলে। ‘তবে সম্ভবত কিনে দেবেন। আমি তাকে জনির কাছে বলতে শুনেছি কিভাবে আমি তার প্রিয় স্পটের জীবন বাঁচিয়েছি—এবং তিনি বলেছেন তিনি আমার জন্য লন্ডনের সবচেয়ে সেরা কলারটি ফরমায়েস করে পাঠিয়েছেন। ’
‘ঠিক আছে, নিশ্চিত হওয়া গেল, সবচেয়ে সেরা কলারটি আসছে! এবং সেটি দেখতে কতই না চমৎকার হবে! কালচে বাদামি আর চকচকে বাকল। চারপাশ ঘিরে পেতলের গজাল। জনি এটা দেখলে খুশিতে আটখানা হয়ে তাকিয়ে থাকবে।
‘খুব চমৎকার!’ আমি আগে কখনো এত সুন্দর জিনিস দেখিনি, কখনোই না! আপনাকে ধন্যবাদ, মিস রবিনস, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার এটা খুবই পছন্দ হয়েছে—এবং শ্যাডোকেও অনেক সুন্দর দেখাবে!’
দেখালোও তাই—এবং সেটা পরে আর সব কুকুরদের মাঝে যাবার পর তাকে ওদের নেতা বলে মনে হতে থাকে!
‘তুমি এর যোগ্য শ্যাডো। ’ সঙ্গে থাকা জনি বলে। ‘সত্যিই তুমি এর যোগ্য। আমার মতোই তুমি স্পটকে খুব একটা পছন্দ করতে না—এবং তারপরও তুমি ওর জন্য সাধ্যমতো করেছো। এটা খুবই মজার—এখন আমি স্পটকে পছন্দ করি, এবং আমি মিস রবিনসকেও পছন্দ করি। খারাপ লাগছে ওরা খুব শীঘ্র চলে যাচ্ছে। তুমি স্পটকে অনেক কিছু শিখিয়েছো!’
‘আমরা ওকে প্রচুর শিখিয়েছি!’ শ্যাডো ঘেউ ঘেউ করে। সে এখন অনেক অনেক বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন কুকুর!’
চলবে। ...
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
ইচ্ছেঘুড়ি
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২৭)
অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।