আনন্দ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সান্ত্বনা। দিনমান কানামাছি, গোল্লাছুট, বৌচি আর পুতুল খেলায় মগ্ন থাকার বয়স।
শুধু সান্ত্বনা নয়, একই অবস্থা শিখা রানী (১৪), তাপসী (১৩), দুই সন্তানের জননী স্বপ্না, সোমবারী, মনিরা। তাদের কারো বয়সই ১৪ পেরোয়নি। কেউই পেরোয়নি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি। বিয়ে কি তা বোঝার আগেই তারা এখন শিশু জননী।
সান্ত্বনা থেকে সোমবারী ও মনিরার মতো জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার হলকারচর ও বড়খাল মাঝিপাড়ার অসংখ্য শিশুকেই এভাবেই শিশু বয়সেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। বছর না পেরোতেই শিশুর কোলে আসে আরেক শিশু। মা শিশু বুড়িয়ে যায় আর কোলের শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে বেড়ে ওঠতে থাকে। গ্রাম দুটি এরইমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে ‘বাল্য বিয়ের’ গ্রাম হিসেবে।
সম্প্রতি একদল শিশু সাংবাদিক সরেজমিন ঘুরে জানতে পেরেছে, যমুনার ভাঙ্গনে সবকিছু হারিয়ে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই হতদরিদ্র। নিত্য অভাবী সংসারে মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দিতে অস্থির হয়ে ওঠেন তারা।
কিশোরী বধূ সান্তনার বাবা হলকার চর মাঝিপাড়া গ্রামের নেপাল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘কি করবো? ঘরে অভাব, নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। মেয়েরে পালমু ক্যামনে? তাই বিয়া দিয়া দিছি। ’
বড়খালের বাদল রাম, পল্লী ডাক্তার প্রিয়নাথসহ স্থানীয় অনেকেই বলেন, ‘নিরাপত্তা ভাবনার পাশাপাশি মেয়ের বয়স বেশী হয়ে গেলে যোগ্য পাত্র পাওয়া যেমন কঠিন তেমনি যৌতুকও দিতে হয় বেশি। তাই অল্প বয়সেই তড়ি-ঘড়ি করে বাপ-মায়ে মেয়ের বিয়ে দেয়। ’
এই দুই গ্রামে ব্যাপক হারে বাল্য বিয়ে প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা ফুলকলি ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম দুটিতে বাল্য বিয়ের অবস্থা ভয়াবহ। গ্রামের মানুষের সচেতনতা বাড়াতে সরকারি পর্যায় ছাড়াও বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে এলে এ প্রবণতা কমানো যাবে। ’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল আমীন বলেন, ‘বাল্য বিয়ের কারণে খিচুনির মতো প্রসব জটিলতা, মায়ের রক্তশূন্যতাসহ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সুস্থ মা ও শিশুর জন্য ২০ বছর বয়সের আগে কোন ক্রমেই সন্তান ধারণ উচিৎ নয়। ’
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে শিশু সাংবাদিক মিম, সাদিয়া, নওশীন, চাঁদনী, পাপড়ী, আরমান, শোভন, শাহেদ, মাহমুদুল, আতিক