শিশুদের খুব প্রিয় একজন মানুষ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীসহ শিশুদের জন্য খুব মজার সব লেখা লেখেন।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে খুব চিন্তিত তিনি।
‘আমাদের দেশের শিশুদের কথা ভাবতে একটু কষ্টই লাগে। এখানে শিশুরা খুবই অবহেলিত। তাদের মানসিক বিকাশে কোনো উদ্যোগ নেই। এ বিকাশ না হলে তাদের কাছ থেকে জাতি বড় কিছু আশা করতে পারে না।
তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের শিশুদের কিছু একটা ধরিয়ে দিতে পারলেই এরা তা করে দেখাতে পারে। আমি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে তাদের সীমাবদ্ধ করতে চাই না। জোর দিয়ে বলতে পারি, সুযোগ পেলে সব বিষয়েই আমাদের শিশুরা ভালো করতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশের শিশুদের সাথে আমি মিশেছি। দেখেছি তারা অন্যান্য দেশের শিশুদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েও রয়েছে। যেমন : গণিত অলিম্পিয়াডে আমাদের শিশুরা প্রতি বছরই পদক অর্জন করছে। তবে পার্থক্য হলো তাদের তুলনায় আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা দূর করতে হবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থারও আরো পরিবর্তন দরকার। কারণ আমাদের দেশের শিশুদের মানসিক উন্নয়নে প্রধান বাধা শিক্ষাব্যবস্থা। গৎবাঁধা মুখস্থবিদ্যা, কোচিং, প্রাইভেট এ সবই শিশুর মানস গঠনে প্রধান বাধা। শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ও চর্চার মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। ’
ঢাকা শহরে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ না থাকার বিষয়টি তাঁকে ভাবায়।
‘বিষয়টি শিশুদের জন্য অবিচারই বলবো আমি। পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠনের পথে অন্তরায়। যারা নিত্যনতুন স্কুল গড়ছেন এ বিষয়টি তাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। অভিভাবকদেরও এক্ষেত্রে সচেতন হওয়া দরকার। ’
পথশিশুদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের পরও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন না জাফর ইকবাল।
‘সত্যিকার আন্তরিকতা নিয়ে পথশিশুদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ফেরানো দরকার। রাস্তায় বেরুলেই অসংখ্য শিশুশ্রমিকের দেখা মেলে। তবে আমি আশাবাদী এ অবস্থার একদিন পরিবর্তন হবে। তবে তা হচ্ছে খুব ধীরে। অবশ্য দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার সাথেও বিষয়টি সম্পর্কিত। পথশিশুদের জন্য বিভিন্ন স্তরে পরিকল্পনা চলছে। যদিও অতীতের পরিকল্পনাগুলো এখনো কাঙ্খিত আলোর মুখ দেখেনি। ’
জাফর ইকবালের স্বপ্ন মূলত শিশুদের ঘিরেই, তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চান স্বপ্নগুলো।
‘শিশুদের জন্য প্রতি বছরই আমি কিছু বই লেখার চেষ্টা করি। এছাড়া এ বছর আমার রচনায় আর মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘কাজলের দিনরাত্রি’ নামে দুটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ’
গণমাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে শিশুদের অংশগ্রহণের কঠোর সমালোচনা করলেন জাফর ইকবাল।
‘এটা আমি কোনোভাবেই সমর্থন করি না। প্রতিযোগিতা দিয়ে কখনই বড় কাজ হয় না। এটা স্বার্থপরতারই নামান্তর। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিশুরা প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। এটি তাদের প্রকৃত বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ’
শিশুদের জন্য যদি আপনাকে একটি স্লোগান দিতে অনুরোধ করি, কী বলবেন?
শিশুদের প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার শিশুসুলভ সারল্যেই জবাব দেন- ‘শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দাও’।