আচ্ছা বলো তো, পাখি কি হতাশ হয়? কিংবা কোনো কারণে খুব বেশি কষ্ট পায়?
নিশ্চয়ই অবাক হয়ে ভাবছো, এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কেন করছি?
এই প্রশ্ন করার কারণ হলো হতাশ হয়ে পড়লে বা খুব বেশি কষ্ট পেলেই কেউ আত্মহত্যা করার কথা ভাবে। পাখি যদি আত্মহত্যা করে, তাহলে তো বলা যেতেই পারে, পাখিটা হতাশ ছিলো?
এবার নিশ্চয়ই হাসছো আর ভাবছো, পাখি আবার আত্মহত্যা করে নাকি?
গল্পটা তাহলে খুলেই বলি।
ভারতে জাটিংগা নামে একটা গ্রাম আছে। এই গ্রামের নাম পুরো বিশ্ব জেনে গেছে শুধু পাখির আত্মহত্যার কারণে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে কুয়াশামাখা রাতগুলোতে এই গ্রামে পাখির আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যার পর যখন কুয়াশা পড়তে শুরু করে, হঠাৎ করেই উড়ে যাওয়ার সময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ধুপ ধুপ করে নিচে জ্বলতে থাকা আলোর দিকে পড়তে থাকে। পাখিগুলো নিজেদের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছ বা অন্যকিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে।
অনেকদিন পর্যন্ত এ ঘটনাটা রহস্য হয়ে ছিলো সবার কাছে। তবে অনেকদিনের গবেষণার পর বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন।
আসলে জাটিংগার পাখিগুলো আত্মহত্যা করে না। ওই সময়টায় বাতাসের গতিবেগ অনেক বেশি থাকে, সঙ্গে অনেক কুয়াশাও পড়ে। এ অবস্থায় পাখির পক্ষে উড়তে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সে সময় নিচে গ্রামবাসীর জ্বালানো মশাল ও অন্য আলোর উৎস দেখে আকৃষ্ট হয়ে আশ্রয় খুঁজতে নিচের দিকে নামতে শুরু করে।
এ সময় পাখিগুলো ঠাণ্ডা ও বাতাসের তোড়ে কাহিল থাকে। ফলে প্রায় অচেতন অবস্থায় গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে।
পাখিগুলো যখন নিচের দিকে নামতে থাকে, তখন গ্রামবাসী বাঁশ বা লাঠি দিয়ে পাখিগুলোকে আঘাত করেও নিচে ফেলে। মূলত জাটিংগা গ্রামে আদিবাসীদের বসবাস। তারা এভাবে পাখি শিকার করে, যদিও তাদের ধারণা পাখির পড়ে যাওয়ার পেছনে তাদের কোনো হাত নেই। এটা কোনো আলৌকিক ব্যাপার।
জাটিংগার পাখির ঘটনাটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হলেও এখনও কোনো বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে নিশ্চিত নন। সুতরাং, এ ঘটনার মূল কারণ এখনও অজানা।
কিছু কারণ অজানাই থাকা ভালো, নইলে কৌতূহল নিঃশেষ হয়ে যায়। আর কৌতুহল না থাকলে নতুন কিছু জানার আগ্রহও আর থাকে না। তাই নতুন কিছু জানার চেষ্টার জন্যই যুগে যুগে এরকম রহস্য থাকা উচিত, কী বলো?
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
এএ