জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তদানীন্তন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুন।
১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ৯ বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন।
১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৩৮ সনে আঠারো বছর বয়স তার সাথে ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের জন্য জীবনের ১৪টি বছর তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় মুজিব তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই সংগ্রাম-আন্দোলন চালিয়ে গেছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই নেতা।
একাত্তরের মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঘোষণা করেন, `এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ` সেদিন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল এ ভাষণ। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালায়। আর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশের।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। মনোনিবেশ করেন দেশ পুনর্গঠনে। কিন্তু তিনি সে সুযোগ বেশি দিন পাননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু অশুভ মানুষের হাতে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য। দেশের বাইরে থাকায় ঘাতক চক্রের হাত থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।