ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সাকী আর পাখি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১১
সাকী আর পাখি

সাকী যখন দুই বছরে পড়ল আর এক-আধটু অর্থপূর্ণ কথা বলতে শিখলো, তখন আমাকে বেশ ঝামেলাতেই পড়তে হল। প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুটে আসতে থাকলো ওর কাছ থেকে।

এটা কেন? ওটা কী ? ইন্টারভিউয়ের যেন আর শেষ নেই! এমন ঝামেলাও খুব মজার! এভাবে দিন আমার খুব ভাল ভাবেই কাটতে থাকল।

আপুনি তুমি কী করো? কোথায় যাও! ইউনিভার্সিটি যাই, আমার উত্তর। তাহলে শুক্র-শনি যাও না কেন? বারে সে কথাও বলে দিতে হবে! পাগলি, ওই দুই দিন তোর আর আমার। তোর জন্য দুদিন আমি কোথাও যাই না! একথা শুনে সাকীর কোকড়া চুলে নাচন ধরে! সে দৌঁড়ে মার কাছে যায়। একটু পর আবার দৌঁড়ে আসে।

জানো আপুনি , আমাদের বাসায় একটা পাখি থাকে। ও আচ্ছা। আচ্ছা কী, সত্যি বলছি আপু! বলেই আমার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। আমি এক সময় বই সরিয়ে উঠি। তারপর পা টিপে টিপে টেলিভিশনের রুম পেরিয়ে বারান্দায় চলে আসি। ঠিক তখনই লাল ঝুটি ওয়ালা একটা পাখি উড়ে এসে প্রথমে রেলিং-এ বসে, তারপর তীব্র বেগে আমাদের দিকে ছুটে আসে। ভয় পেয়ে আমি সাকীকে নিয়ে দৌঁড়ে ঘরে চলে আসি।

আমি সাকী দুজনই হাঁপাচ্ছি। সাকী তখন আঙ্গুল দিয়ে দেখায়। আমি আশ্চর্য হয়ে তাকাই। সত্যি সত্যি বারান্দার লাইটের শেডের ওপর বাসা বানিয়েছে পাখিটা। বাসায় বসে পাখিটা আমাদের তাকিয়ে দেখছে! এবার আমরা দুজনই হেসে উঠি। তারপর সাকীকে কোলে নিয়ে আদর করে বলি। জানো আপু পাখিটা এখানে বাসা বানিয়েছে ডিম পারবে বলে। সম্ভবত; ডিম পেড়েছে। তারপর ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটাবে। বাচ্চা যখন উড়তে শিখবে তখন তারা উড়ে যাবে।

সাকীর খুব মন খারাপ হয়। এবার আমাকে খুব আবদারের সুরে বলে, আপুনি তুমি বলো না পাখিটাকে থাকতে! আমি বলি, ঠিক আছে বলবো আর ওদের সাথে তোমার বন্ধুত্ব করিয়ে দেবো। সাকী আশ্বস্ত হয়, আশ্বস্ত আমিও। পরদিন বাসার সবাইকে ডেকে বলে দেই বারান্দায় যেন কেউ খুব বেশি না যায়। এখন পাখির ডিম পারার সময়। শত্রু ভেবে সে কামড় দিতে ছুটে আসতে পারে। সে রাতে খেতে খেতে বাবাকে ধরলাম। বাবা তুমি সিগারেট খেতে আর বারান্দায় যাবে না। মা তুমিও যাবে না।

পরদিন সকালে কাজের বুয়া এলে দৌঁড়ে সাকী তাকে সাবধান করে দেয়। দাদু আর বড় ভাইয়াকেও সাবধান করতে সে ভুল করলো না ! এরপর আমাকে ডাকলো। তারপর চুপিচুপি আমরা বারান্দায় সে লাইটের কাছে গেলাম পাখিটাকে দেখবো বলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমরা মিহি গলার কিচির মিচির শব্দ শুনে আশ্চর্য হই। সেকি , শব্দ কিসের! এরই মধ্যে বাবা আসেন। তিনি সাকীকে কোলে তুলে লাইটের কাছে তুলে ধরেন। সাকী আশ্চর্য হয়ে দেখে কী সুন্দর বাচ্চা ফুটেছে। সে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে পাখির বাসার দিকে! এরপর কোথা থেকে কী হলো বাবা সাকীকে নিয়ে ছুটে ঘরে চলে এলেন, সাথে আমিও। আসলে মা পাখিটা কাছেই ছিল। সে ভাবলো আমরা তার বাচ্চাদের ক্ষতি করবো। তাই সে সন্তান বাঁচাতে আমাদের দিকে তেঁড়ে এসেছিল ঠোঁকর দিতে!
 
কিছুদিন পরে আমার সেমিষ্টার ফাইনাল। আমি ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। পড়ার চাপে সাকীর পাখির কথা ভুলেই বসেছিলাম। পরীক্ষা শেষ। সেদিন আমার কোন কাজ নেই। বসে বসে খবরের কাগজের পাতা উল্টাচ্ছি। সাকী কোথা থেকে যে দৌঁড়ে এলো! তাকে দেখেই আমার মনে পড়ল বারান্দার পাখি আর তার বাচ্চাদের কথা।

আমি সাকীর কাছে কিছু জানতে চাওয়ার আগেই সে বলল, জানো আপু ওইযে পাখি আমাদের বারান্দার - তার বাচ্চারা আমাকে চিঠি লিখেছে। আর আমি ওদের বতল, ফিডিং, প্লেট আর চামচ দিয়েছি। বুঝলাম পাখিদের সাথে তার দারুন দোস্তি হয়েছে। কিন্তু পাখিরা তাকে চিঠি লিখেছে, আমি ভাবতে বসি!

এরমধ্যে আবার সাকীর দৌঁড়। সে চিঠিটা এনে আমার হাতে দেয়। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে চিঠিটা পড়ি। হাতের লেখায় বোঝা গেল, চিঠিটা আসলে বাবা লিখেছেন। সাকীর এমন পাখি প্রীতির জন্য তাকে খুশি করতেই এমন চিঠির অবতারণা। অনেকগুলো আঁকি বুঁকি আছে চিঠিটাতে, সাথে দুটো ‘অ’ লেখা একটা ‘ব’ আর ৫ লেখা কতগুলো। আমি পড়তে থাকি, সাকীও গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। কী লিখেছে তাকে বাচ্চা পাখিটা চিঠিতে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।