ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

নকল রাজা (পর্ব-৩) | বিএম বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭
নকল রাজা (পর্ব-৩) | বিএম বরকতউল্লাহ্ নকল রাজা

পরেরদিন মাঠভর্তি বনের পশু আর পাখিতে। রাজা বলল, আমি তোমাদের রাজা। আর এ কুকুরি তোমাদের রানীমা। আগে তোমরা তোমাদের সম্মানিত রাজা-রানীর থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করো, তারপর হবে তোমাদের সুখ-শান্তির ব্যবস্থা।
সবাই বলল, খাওয়ার ব্যবস্থা? সেটা কীভাবে?
 
 

রাজা বলল, প্রতিদিন আমাদের তিনবেলা পশু-পাখির টাটকা গোস্ত এনে খাওয়াতে হবে। সেটা হতে পারে খরগোশের, হতে পারে বেড়ালের, হতে পারে হাঁস বা মুরগির, হতে পারে খট্টাসের, অগত্যা শেয়ালের মাংস হলেও চলবে।

রাজা-রানীর পেট শান্তি তো বনেও শান্তি। তোমরা তখন নিরাপদে চলবে-ফিরবে, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না কিছু করবেও না। বুঝতে পেরেছ ব্যাপারটা?

 
রাজা আর রানীর খাবার জোগাড় করার দায়িত্ব পড়লো শেয়ালের ওপর।
শেয়ালেরা পালা করে একেক দিন একেক প্রাণীর গোস্ত এনে খাওয়ায়। যেদিন শেয়াল কোনো প্রাণী ধরে আনতে পারে না সেদিন সবাই থাকে লুকিয়ে।
 
রাজা বলল, তোমরা পাশের গ্রামে চলে যাও রাতে। ওই গ্রামের ঘরে ঘরে হাঁস-মুরগি আছে। তোমরা নিয়ে আসবে ওসব। যাও।
 
শেয়ালেরা রাতের অন্ধকারে চলে যায় গ্রামে। তারা গৃহস্থবাড়ি থেকে চুপি চুপি নিয়ে আসে হাঁস-মুরগি। রাজা আর রানী মজা করে খায়।
 
এদিকে রাজা-রানীকে ঠিকমতো খাবার না দিতে পারলে, ক্ষুধার্ত রাজা রানী যে আচরণ করে তা সহ্য করা কঠিন।

পরেরদিন শেয়ালেরা গ্রামে ঢুকলো। তারা শুনতে পেলো, এক বুড়ি আফসোস করে বলছে, কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। আরামে ছিল, ভালো লাগেনি। এখন বুঝুক মজা।

এ কথাটা শেয়ালের কানে বারবার বাজতে লাগল। কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। ব্যাপারটা কি তাহলে?
শেয়াল বুদ্ধি করল, আমরা তাহলে কুকুরকে ঘি খাইয়ে দেখি অবস্থাটা কি দাঁড়ায়।
 
এক শেয়াল বলল, চল আমরা হাঁস-মুরগির পরিবর্তে নিয়ে যাই ঘি। ঘি খাওয়াবো রাজা-রানীকে।
 
গৃহস্থের রান্না ঘরে ভাঁড় ভর্তি ঘি। শেয়ালেরা ঘি-এর ভাঁড় নিয়ে গেল।
 
নকল রাজা একটা ভাঁড় নিয়ে সামনে ধরতেই রাজা-রানী খেয়ে ফেলল সব ঘি। ঢেঁকুর তুলে বলে বাহ্ এ-তো দেখছি মহামজাদার আর মূল্যবান খাবার। অনেকদিন পরে খেলাম। খুব দামি খাবার এটি। সত্যিই তোমরা বুদ্ধিমান। তা-না হলে রাজা-রানীর উপযুক্ত খাদ্য খুঁজে বের করতে পারতে না।
শেয়ালেরা ভাবে রাজা-রানী তো দেখি ঘি এর পাগল। এভাবে ঘি কয়দিন খাওয়ানো যাবে। ফুরিয়ে গেলে পরের ব্যবস্থা কি!
 
এক বৃদ্ধ শেয়াল পরামর্শ দিয়ে বলল, রাজা-রানী যেভাবে ঘি পছন্দ করে তাতে আর সমস্যা নেই। যে কোনো জিনিস ঘিয়ে মেখে দিলেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলবে।
 
আর কিছু না পেয়ে শেয়ালেরা গাধা, খট্টাস আর নিজেদের শুকনো লেদা ঘিতে মেখে নিয়ে যেই রাজা-রানীর সামনে নিয়ে দিল, ওরা হড়হড় গড়গড় করে খেয়ে সাফ করে ফেলল।
 
বাহ্ ভারী মজা তো। শেয়ালেরা হাফ ছেড়ে বাঁচল। আমাদের রাজা-রানী যখন ঘিয়ে মেখে দিলে গোবর আর লেদা খেয়ে ফেলতে পারে তবে আর চিন্তা কি?

শেয়ালেরা শুকনো গোবর আর লেদা কুড়িয়ে আনে। ঘিয়ে মেখে দিলে আর রক্ষা নেই। রাজা-রানী সব খেয়ে শেষ করে ফেলে।
 
এভাবে বনের পশু-পাখির গোবর আর লেদা ঘিয়ে মেখে খাওয়াতে লাগল রাজা আর রানীকে।
 
রাজা-রানী দিনে দিনে মোটা হয়ে উঠল।
 
আনন্দে রাজা-রানীর দিন কাটতে লাগল।

চলবে...

**নকল রাজা (পর্ব-২)‍ | বিএম বরকতউল্লাহ্
**নকল রাজা (পর্ব-১)‍ | বিএম বরকতউল্লাহ্

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।