ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাড়িতে হনুমান

ইমরুল ইউসুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১১
বাড়িতে হনুমান

আড়ি আড়ি আড়ি, কাল যাব বাড়ি, পরশু যাব ঘর, কী করবি কর, হনুমানের লেজ ধরে টানাটানি কর। টানাটানি কর।

প্রিয়তি আর লাবিব যখন এই ছড়াটি আওড়াচ্ছিল ঠিক তখনই দেখে একটি হনুমান তাদের বারান্দর গ্রিলে ঝুলছে। হনুমানজিকে দেখে তারা তো অবাক। ভয় যে পায়নি তাও নয়। ভয়ে তাদের গলা শুকিয়ে যেতে লাগলো। ছড়া বলা তো বন্ধ হয়ে গেছে সেই কখন। দু ভাইবোনের হাতের কনিষ্ঠ আঙুলও একে অপরের হাত থেকে ছুটে গেছে আগেই। তাদের এখন কী করা উচিত বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে হনুমানের দিকে। তারা দেখেÑ হনুজি লেজটা একটু বাঁকিয়ে, কটমটিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোতে এমনই ভাবে যে প্রিয়তি আর লাবিব তাকে নিয়ে ছড়া বলে মহা অপরাধ করেছে।

হ্যাঁ, অপরাধই তো করেছে। তা না হলে বলে ‘হনুমানের লেজ ধরে টানাটানি কর। টানাটানি কর?’ আর তারা যদি সত্যিই এখন হনুমানের লেজ ধরে টানাটানি করে তাহলে তাদের কি হনুজি আস্ত রাখবে? মোটেই না। জোরসে একটি থপ্পড়ও মেরে বসতে পারে।

না হনুমানজি থাপ্পড় মারে না। তবে থাপ্পড় মারার ভান করে। গ্রিলের ভিতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করে। আর তখনই তারা ঝেড়েপেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বলে, চলে যাও বলছি। এখনই চলে যাও। তা না হলে মার দিব। লাবিবের কথা শুনে প্রিয়তিও বললো, হ্যাঁ ভালোয় ভালোয় চলে যাও। তা না হলে মার খাবে কিন্তু। তাদের কথা শুনে হনুমান বললো, আমাকে মারবে কেন? আমি তোমাদের কী করেছি। পাশের বাড়ির ছাদে বসে শুনলাম তোমরা আমার লেজ ধরে টানাটানি করবে। তাই ভাবলাম দেখে আসি কারা আমার লেজ নিয়ে এত সুন্দর ছড়া বলছে। লাবিব বললো, দেখা হয়েছে? এখন তবে যাও।

হনুমানজি বললো, করো, এখন আমার লেজ ধরে টানাটানি করো। প্রিয়তি বললে, না করবো না। এখন তুমি তোমার লেজ নিয়ে এখান থেকে চলে যাও। এই কথা শুনে হনুমান এক লাফ দিয়ে পাশের বাড়ির ছাদে চলে গেল। যেতে যেতে বললো, আমি আবার আসবো।

হনুমানজি পরের দিন দুপুরের দিকে আবার আসে। দেখে তারা দুজন ঘটি বাটি নিয়ে খেলছে। বলে, তোমরা কী খেলছ?

আমাকে একটু নাও না। আমি সেই কবে পথ ভুলে তোমাদের মহল্লায় চলে এসেছি। আর আমাদের আস্তানায় ফিরে যেতে পারছি না। জানো আমি কতোদিন আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলি না। এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে যাই না। তোমাদের এ মহল্লায় শুধু বাড়ি আর বাড়ি। কোনো গাছ নেই। বাড়ির আশপাশ দিয়ে চলে গেছে বৈদ্যুতিক তার। কখন যে তারে জড়িয়ে মারা যাই তার ঠিক নেই। কতোদিন আমি ঠিকমতো খাই না। ঘুমাই না। কারো বাড়িতে খাবারের খোঁজে গেলেই তাড়িয়ে দেয়।

মারে, গালাগালি করে। আমার তখন ভীষণ রাগ হয়। রাগে আমি তখন যার ঘরে যা পাই তা নিয়ে যাই। কাপড়চোপড় পেলে দাঁত দিয়ে টেনে ছিঁড়ি। তারপর দলামলা করে ফুটবল বানিয়ে ছাদের ওপর খেলি। কখনো বা সেই কাপড় মাথায় দিয়ে শুই।

কখনো আবার গায়েও দেই। হনুর কথা শুনে প্রিয়তি ও লাবিবের খুব খারাপ লাগে। কিছুটা ভয়ও পায়। ভাবেÑ তাদের জামাকাপড়গুলো আবার নিয়ে যাবে নাতো! এমন ভাবতে ভাবতে লাবিব বলে, তোমার কি ক্ষুধা পেয়েছে? কী খাও তুমি? হনু বললো, হ্যাঁ আমি খুব ক্ষুধার্ত। বাসায় কলা আছে? থাকলে দাও। কলা আমার ভীষণ প্রিয়। এই কথা শুনে লাবিব দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে কলা নিয়ে আসে। হনুজিকে দিতেই গপাগপ খেতে শুরু করে।

সেই শুরু। এরপর থেকে হনুমান কলা খাওয়ার লোভে প্রতিদিন প্রিয়তিদের বাসায় আসে। এসেই কুই কুই শব্দ করে প্রিয়তি ও লাবিবকে ডাকে। তারপর গল্প করে তাদের সঙ্গে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের খুব ভাব হয়ে যায়। এমনই ভাব হয় যে হনুমানজি তাদের বাড়ির ছাদের পানির ট্যাঙ্কির নিচে থাকা শুরু করে। আর প্রতিদিন দুপুরের দিকে প্রিয়তিদের ঘরের বারান্দায় কলা খেতে আসে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তাদের গল্প হয়। গল্পের ছলে একদিন লাবিব বলে, হনুমানজি আর কদিন পরেই তো ঈদ। তুমি ঈদ করতে তোমার বাড়িতে যাবে না? হনু বলে, যাব কী করে। আমি তো পথ হারিয়ে ফেলেছি। লাবিব বলে, ভালোই হয়েছে। তোমার বাড়িতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তুমি বরং এবার আমাদের সঙ্গেই ঈদ করো। ঈদের দিন আমরা সবাই নতুন জামাকাপড় পরবো। মজার মজার খাবার রান্না হবে ঐদিন। সেদিন তোমাকে আমরা কলা খেতে দিব না।

সেমাই, সুজি, কোর্মা, পোলাও খাওয়াবো। বাবাকে বলবো তোমার জন্য নতুন ড্রেস কিনে দিতে। নতুন ড্রেস পরে তুমি আমাদের বাসায় আসবে। সেদিন কিন্তু খালি গায়ে এসো না। তাহলে বাবা মা খুব মাইন্ড করবেন। এই কথা শুনে হনুজি আনন্দে লেজ নাড়তে থাকে। বাম হাত দিয়ে পেট চুলাকাতে থাকে। তারপর চার হাত পা দিয়ে গ্রিল ধরে লাফাতে থাকে।
পরের দিন ঠিক একই সময় পাশের বাড়ির ছাদ থেকে কার্নিস, কার্নিস থেকে লাফিয়ে হনুমানজি প্রিয়তিদের বারান্দায় আসে।

এসেই কুই কুই শব্দে তাদের ডাকে। ডাক শুনে বারান্দায় ছুটে আসে প্রিয়তি। তারপর আসে লাবিব। তাদের দেখেই হনুজি বলে, তোমাদের ঈদ কবে? আমাকে কবে মিষ্টি, কোর্মা, পোলাও খাওয়াবে। কবে আমাকে নতুন ড্রেস কিনে দিবে। প্রিয়তি বললো, আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ঈদ। ঈদের আগেই বাবাকে বলবো তোমার জন্য ড্রেস কিনে দিতে। ঈদের কেনাকাটা শেষ। আকাশে কাঁচির মতো চিকন চাঁদ উঠেছে। রাত পোহালেই ঈদ। চারদিকে শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। সকাল হতেই সবাই নতুন জামাকাপড় পরে এবাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রিয়তি ও লাবিবের মন খারাপ। তারা কোথাও ঘুরতে বের হয় না। কারণ হনুমানজি এখনো আসেনি। যে কোনো সময় সে আসতে পারে। এসেই কুই কুই শব্দে ডাকতে পারে তাদের। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। দুই ভাইবোন মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু হনুমানজি আসে না।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।