মাটির ব্যাংকটা ঝাঁকাচ্ছিল তুহিন। ঠিক তখনই মামা এলেন।
তুহিন বলল, টাকা গুণছি।
মামা অবাক হয়ে বললেন, টাকা গুণছিস! আমি তো দেখছি তুই মাটির ব্যাংক ঝাঁকাচ্ছিস!
তুহিন বলল, দেখতেই যখন পাচ্ছ, তখন আবার জিজ্ঞেস করছ কেন?
মামা বললেন, মেজাজখানাও তিরিক্ষি করে রেখেছিস দেখছি! কী হয়েছে বল তো?
তুহিন এবার হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল, বুঝতেই তো পারছ মামা, কেন ব্যাংক ঝাঁকাচ্ছি।
মামা বললেন, বুঝিরে বুঝি। ক’দিন ধরে যাচ্ছে টাকার কষ্ট?
তুহিন বলল, বেশ কিছুদিন।
মামা জানতে চাইলেন, বলিস নি কেন?
তুহিন কিছু বলল না। চুপ করে রইল। ও জানে মামা নিজে থেকেই কিছু টাকা দেবেন ওকে। কখনো মামার কাছে চাইতে হয় না। ও কখনো নিজে থেকে চায়ও না।
মামা বললেন, বলিস নি যখন তখন একটা পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় পাস করলেই তবে তোর অভাব মোচন করবো।
তুহিন খুশি হল। ও জানে মামা আর কী পরীক্ষা নেবেন! ধাঁধা জিজ্ঞেস করবেন। এবং খুব সহজ একটা ধাঁধা কিন্তু ভাবনা এলোমেলো করে দেয়ার মতো।
মামা বললেন, আচ্ছা বল তো প্রাণী জগতের সবচেয়ে ধনী কে?
তুহিন বলল, প্রাণীরা আবার ধনদৌলত দিয়ে কী করবে? ওরা তো এগুলোর ব্যবহার জানে না।
মামা বললেন, সেটা যা-ই হোক। ওদের অর্থের দরকার নেই, তবু দ্যাখ, পশ্চিমা দুনিয়ায় কত মানুষ নিজের অর্থ-সম্পদ দিয়ে যাচ্ছে তাদের পোষা প্রাণীকে। কোনো অর্থ হয়!
তুহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এটাই তো জগতের নিয়ম মামা, যার দরকার নেই, তার আরো হয়। আর যার খুব দরকার তার ধনদৌলত হয়ই না।
মামা বললেন, এটা আংশিক সত্য। সবসময় নয়। ইচ্ছে, পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তাই মানুষকে ওই ধনী প্রাণীতে পরিণত করতে পারে।
তুহিন বুঝতে না পেরে বলল, কোন প্রাণীর কথা বলছেন মামা?
মামা বললেন, বুঝতে পারলি না? প্রাণী জগতের সবচেয়ে ধনী প্রাণীতে পরিণত হতে পারে একটা মানুষ। কেবল ওই টাকার জোরে। বুঝেছিস?
তুহিন বলল, না।
মামা বললেন, চিন্তা কর। চিন্তা করলেই বুঝতে পারবি। টাকার পরেই ওই প্রাণীর নাম আসে। আর কেউ ধনী হলে আমরা তাকে টাকার সাথে ওই প্রাণীর নাম মিলিয়ে বলি। চিন্তা কর।
তুহিন চিন্তা করতে লাগল। অনেকক্ষণ চিন্তা করল। কিন্তু অনেক চিন্তা করেও কোনো ফল পেল না। আবার মাটির ব্যাংক ঝাঁকাতে শুরু করে দিল।
মামা বললেন, আবার মাটির ব্যাংক ঝাঁকাতে শুরু করেছিস কেন? বলেছি না...
মামার কথা শেষ হওয়ার আগেই তুহিন বলল, অনেক ভেবেছি, ওই ধাঁধার জবাব দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই আমার ব্যাংকই ভরসা।
মামা বললেন, রাখ তোর ব্যাংক। এতো সহজে হতাশ হয়ে পড়িস তোরা। বুঝেছি। অর্থাভাবে মাথাটাও খুলছে না।
বলেই পকেট থেকে দুটো একশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন ওর দিকে। তারপর বললেন, চলবে?
তুহিনের মুখ সাথে সাথে উজ্জল হয়ে গেল। গদগদ হয়ে বলল, চলবে না মানে? এর অর্ধেক হলেও চলত।
কিন্তু মামা যেন বিনয়ের অবতার। বললেন, দ্যাখ আরো বেশি দিতে পারতাম। কিন্তু কী করবো বল। আমি হচ্ছি টাকার টিকটিকি।
তুহিন কপাল কুঁচকে বলল, মানে?
মামা বললেন, মানে আর কিছুই না। যাদের অনেক টাকা আছে মানে যারা ধনী তাদের কী বলে বলতে তো পারলি না। ওদের বলে টাকার কুমির। সে হিসেবে আমি হচ্ছি টাকার টিকটিকি। বুঝেছিস? মানে দেখতে কুমিরের মতোই কিন্তু অতো মোটা-তাজা আর ইয়া লম্বা বিশাল নই। কেবল কুমিরের অতিক্ষুদ্র একটা সংস্করণ।
তুহিন এবার হাসতে হাসতে বলল, তাহলে আমি কী মামা?
মামা এবার গম্ভীর গলায় বললেন, এটা কি কোনো ধাঁধা? তাহলে আমায় ভাবতে দে। ব্যস। মামা ভাবতে ভাবতে বাইরে চলে গেলেন। তুহিন জানে, মামা এখন ফুটপাতের খোলা হাওয়া খাবেন, আর ভাববেন। ভাবুন, যত তার খুশি। ওর নিজের টাকার ভাবনা তো দূর হলো।