হোসনে আরা ম্যাডাম লেকচার দিচ্ছেন। অন্য সব দিন খুব মজা করে বলেন।
কিছু সময় শোনার পর সে ব্যাগ থেকে খাতা বের করে ছবি আঁকা শুরু করলো। প্রথমে সে হোসনে আরা ম্যাডামের ছবি আঁকলো। নিজে একে নিজেই মুগ্ধ তিলোত্তমা। তার আঁকিবুকি ঈশিতাকে দেখানোর জন্য ডাকলো। ব্যস্ত ঈশিতা একটু তাকালোনা পর্যন্ত। ধ্যাত, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো! আবার সে আঁকায় মনোযোগ দিলো। এবার সে আপন মনে একে চললো। এক সময় নিজের আঁকা নিজেই দেখে মুগ্ধ হলো তিলোত্তমা। সে একটা ঘুড়ি একেছে। ঘুড়িকে সবাই ঘুড্ডিবলে। ঘুড্ডি দেখে তিলোত্তমার শৈশব মনে পরে গেল। ঘুড়ি ওড়ানো ছেলেদের খেলা হলেও তিলোত্তমার নিজেও ঘুড্ডি ওড়াতো ইচ্ছেমত।
কাটা যাওয়া ঘুড্ডি ধরার জন্য তার সে কী দৌড়! মনে হলো এই তো সে দিনের কথা। তাদের বাড়ির পাশে কোন নদী নেই। বন নেই, জঙ্গল নেই কিন্তু বিশাল ধান ক্ষেত আছে। ধান ক্ষেতের আল ধরে সে ঘুড্ডি নিয়ে ছুটতো। ধান ক্ষেতে চড়ুই পাখি দেখে চুপিচুপি সে তাদের ড্রাম থেকে চাল নিয়ে ধান ক্ষেতে ছড়িয়ে দিতো। দল বেধে সে সব খেয়ে যেত সব চড়ুই। তিলোত্তমা একাই ছিলো, মাঝে মাঝে ছোট ভাই তারেক তার খেলার সাথী হতো। খুব দুরন্ত ছিলো সে। আবার পাশের বাসার সাদিয়াও তাদের খেলার সাথী হতো। তিলোত্তমার বাবা চীন থেকে একটা বার্বি পুতুল এনেছিলো তাই দিয়ে তারা খেলতো। গৌরনদীতে থাকার সময় স্কুলে প্রথম হওয়াতে বাবার চীন সফরের উপহার ছিলো এই বার্বিটি তিলোত্তমার জন্য!
গৌরনদীতে তাদের বাড়িতে মানুষজন তেমন আসতো না, ফেরিওয়ালা আসতো, তিলোত্তমা সে সব ফেরিওয়ালাদের অপেক্ষায় থাকতো। ফিতা, ক্লিপ, বিস্কিট, চকলেট কত কী নিয়ে আসতো সেই ফেরিওয়ালা। তখন সে ভাবতো আহা কত মজা ফেরিওয়ালাদের। এক সময় সে প্রতিজ্ঞা করে ফেললো বড় হয়ে সে ফেরিওয়ালা হবে। রাতের বেলা বাবা দেরি করে বাড়ি ফিরত। কখনো বা ফিরতো না তার রাজনীতি করা বাবা। বাবার জন্য মন খারাপ হতো, মা বুঝতে পারতো। মা তখন গল্প বলে তিলোত্তমাকে ঘুম পারাতো।
কী নির্মল, সুন্দর, রঙিন ছিলো সে সব দিন। কিন্তু আজ এই ক্লাস, লেকচার, আইটেম ...আর শুধু পড়া আর পরীক্ষার চাপের কী এক যান্ত্রিক জীবনে এসে পড়েছে সে! এক ঘেয়ে সে জীবন। এর থেকে সে নিস্তার চায়। ফিরে পেতে চায় সব ফেলে আসা দিন। ঈশিতা এবার কাছে আসে। সে দেখে তিলোত্তমার চোখে পানি। সে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার খাতায়...!