কম্পিউটারে ওর কোনো কিছু নিজে করা ভাইয়ার নিষেধ। কারণ সেখানেও নাকি দুষ্টু মানুষেরা থাকে।
সেখান থেকে শুধু ভয়ংকর একটা ছবি বের হয়ে এলো। বলল - তুই আমার দুষ্টু পরীর রাজ্যে প্রবেশ করেছিস। এখান থেকে না খেলে কেউ যেতে পারে না। তোকেও খেলতে হবে। না খেললে আমি পুরো কম্পিউটার নষ্ট করে দেবো। রাশিব ভীষণ ভয় পেলো। দুষ্টু পরীটা রাশিবকে বাইরে থেকে টেনে নিয়ে গেলো কম্পিউটারের ভেতরে। ও ঢুকে গেলো অন্ধকার আর ভয়ংকর পরীর রাজ্যে।
পরীটা ওকে নিয়ে গেলো বিশাল এক খাঁচার সামনে। ওই খাঁচায় বন্দি ছিল অনেকগুলো পাখি। পাখিগুলো চিৎকার করছিল। মনে হচ্ছিল ওরা বলছে আমাদের বাঁচাও! দুষ্টু পরী বললো- ওরা সবাই তোর মতো ছিল। খেলায় হেরে পাখি হয়ে গেছে। তুই যদি খেলাটা জিততে পারিস তাহলে সবাই ছাড়া পাবে, আর যদি হেরে যাস তাহলে এদের মতো পাখি হয়ে যাবি আর আটকা পড়বি কম্পিউটারের দুষ্টু পরীর গেমের রাজ্যে।
রাশিবের খুব কান্না পেলো। কাল পরীক্ষা আছে। কিছুই পড়া হয়নি। কেন যে আম্মুর কথা না শুনে খেলতে বসলাম? এখন মনে হচ্ছে আমাকে এখানেই বন্দি হয়ে থাকতে হবে। দুষ্টু পরী চিৎকার করে উঠলো- এতো কী ভাবছিস? চল খেলি? বলেই সে খাঁচাটার চারপাশে আগুন লাগিয়ে দিলো আর বানিয়ে দিলো তিনটা দরজা। দরজাগুলোতে তালা দেওয়া ছিল যার চাবি ছিল আশেপাশেই লুকনো। আর দরজার মধ্যেই ছিল চাবির সন্ধান।
এক ঘণ্টার মধ্যে সব চাবি খুঁজতে পারলে তবেই সবাইকে বাঁচনো যাবে। বাধ্য হয়ে রাশিব খেলা শুরু করলো। প্রথম দরজায় এসে দাঁড়ালো। কিছুই বুঝতে পারলো না। রাগে ওর চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু ওর হাতে সময় নেই। ও দরজাটা ভালো করে দেখতে লাগলো। তালার দিকে চোখ পড়তেই একটা গেলাকার চিহ্ন দেখা গেলো। রাশিবের মনে হলো কোথাও ও এই চিহ্ন দেখেছে। হুম! খাঁচাটার কাছে আসার সময় একটা দেয়ালে এই চিহ্ন দেওয়া ছিল। রাশিব দেয়ালটা খুঁজতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরই সে পেয়ে গেলো।
দেয়ালে হাত দিতেই চাবিটা টুপ করে বের হয়ে নিচে পড়লো। রাশিব চাবি দিয়ে প্রথম দরজাটা খুললো। ওর খুব আনন্দ হলো। এবার পরেরটা। কিছুতেই কিছু খুঁজে পাওয়া গেলো না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ও ক্লান্ত হয়ে হেলান দিয়ে দরজায় বসে পড়লো। চারদিকে আগুন জ্বলছিল কিন্তু ওর একটুও গরম লাগছিল না।
একটু পর উঠে দাঁড়ানোর জন্য যেই ও দরজার হাতল ধরে টান দিল ওমনি উপর থেকে একটা চাবি ওর হাতে এসে পড়লো। চাবিটা পেয়ে ও এতো খুশি হলো যা কোনোদিন হয়নি। লক্ষ্য করলো পাখিগুলো এখন মানুষের মতো কথা বলছে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওরা মানুষ হয়ে গেলো। রাশিব ভাবলো ও জিতে গেছে, কিন্তু না, শেষ দরজাটা এখনও খোলা বাকি আছে। ওটা না খুলতে পারলে কেউ যেতে পারবে না।
একটা ছেলে বললো, ভাই তুমি জানো না এটাই ওই পরীটার ফাঁদ। শেষ দরজার চাবি নেই। তুমিও ফাঁদে পড়েছ। যদি বাইরে থেকে কেউ আমাদের বের না করে তবে আমরা বের হতে পারবো না। শুনে রাশিবের কান্না পেলো, এখন কী হবে? কে বাঁচাবে আমাদের? ওরা সবাই বসে রইলো চুপচাপ। এদিকে রাশিবের ভাইয়া এলেন কম্পিউটারে কাজ করতে। দেখলেন কম্পিউটার খোলা, রাশিব নেই।
ভাইয়া কম্পিউটারের দিকে তাকিয়েই বুঝলেন রাশিব বিপদে পড়েছে। ‘দুষ্টু পরীর রাজ্যে’ একটা গেম ভাইরাস। রাশিব সেটা জানতো না। ভাইয়া দেখলেন সময় বেশি নেই, দেরি হলে রাশিব ওখানে আটকে যাবে। ভাইয়া দ্রুত এন্টিভাইরাস নিয়ে এলেন। সেটা কম্পিউটারে দিতেই পুরো অন্ধকার রাজ্যে ভূমিকম্প শুরু হলো। আর দুষ্টু পরী দৌড়ে এলো খাঁচার কাছে। তার শরীর পুড়ে যেতে শুরু করলো। এক সময় ছাই হয়ে গেলো সে। সবাই মুক্তি পেলো। রাশিবকে ধন্যবাদ দিলো আর যে যেই কম্পিউটার থেকে এসেছিল সেখানে চলে গেলো। রাশিবও ফিরে এলো তার ঘরে। ভাইয়াকে দেখে সে যেমন খুশি হলো তেমনি ভয় পেলো। কিন্তু ভাইয়া কিছুই বললো না। জড়িয়ে ধরে পড়ার ঘরে পাঠিয়ে দিলো। সেদিনের পর থেকে রাশিব আর কোনোদিন নিজে নিজে না জেনে কোনো কিছু করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এএ