তাদের ধারণা ভূতের ফুঁয়ে বালাই নাশ হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা জনে মানত করতে আসে।
জনতার ঢল দেখে কিপটে ও লোভী সেরালি টাকা উপার্জনের একটা দারুণ মওকা পেয়ে গেলো। সে গভীরভাবে ভাবতে লাগলো লোকজনের সীমাহীন বিশ্বাস আর কৌতূহল কীভাবে নিজের আয়-উপার্জনের কাজে লাগানো যেতে পারে।
সেরালি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবার সামনে সাফ সাফ বলে দিলো, দেবতা আমাকে যে সন্তান দিয়েছেন তাতে আমি খুশি। আমার জীবনের আশা পূরণ হয়েছে। আমার সন্তানের মাঝে মহান দেবতা কী রূপ ও রহস্য দিয়ে রেখেছেন, এর মাহাত্ম্যই বা কি, এর মাঝে সৃষ্টি ও স্রষ্টার কী লীলাখেলা রয়েছে তা শুধু তিনিই জানেন।
এখন থেকে আমার সন্তানদের আর এভাবে মাগনা দেখাও যাবে না আর মাগনা ফু-ও নেওয়া যাবে না। যার বিশ্বাস হবে সে উপহার-উপঢৌকন আর হাদিয়া নিয়ে এসে আমার রহস্যছেলের ফুঁ নিতে হবে। তাকে দেখতে হলে পাকপবিত্র হয়ে আদব-লেহাজের সঙ্গে এখানে আসতে হবে। আমার ছেলের দাম আছে।
সেরালির এ কথায় মানুষের কৌতূহল আরও বেড়ে গেলো এবং তা লোকমুখে দূরের এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো।
পরের দিন সেরালির আনন্দের আর সীমা নেই। কেউ খালি হাতে আসে না। সেরালি দু’হাতে লোকজনের কাছ থেকে পুঁটলি, টাকা-পয়সা, সোনাদানা ও হাদিয়া গ্রহণ করতে লাগলো। তার প্রশান্ত চোখে-মুখে আনন্দ-হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
বিভিন্ন এলাকার লোকজন লাইন ধরে সেরালির অদ্ভুত সন্তানকে দেখছে। কে একজন আবেগে আপ্লুত হয়ে দূরে থেকে একটা চুম্বন ছুড়ে দিলো সেরালির ছেলের দিকে। সেরালির ছেলে হাত ইশারা করতেই লোকটি দৌড়ে গিয়ে মুখটা বাড়িয়ে দিলো তার সামনে। সেরালির ছেলে লোকটার গালে কষে দিলো এক চুমু। এক চুমুতে গালটা লম্বা করে ছেড়ে দিতেই চটাং চট করে একটা শব্দ হলো। লোকটা প্রচণ্ড কষ্ট গোপন করে এটাকে স্রেফ ‘ভাগ্যচুম্বন‘ মনে করে আনন্দের হাসি ফুটিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো।
সেরালির ছেলের চুম্বন নেওয়ার জন্য অনেকে অনেক কিছুই করলো কিন্তু ‘ভাগ্যচুম্বন’ আর কারো ভাগ্যে জোটেনি।
এক বয়স্ক লোক সেরালিকে বিনয়ের ভঙ্গিতে বললো, ভাই, যে লোকটাকে আপনার ছেলে চুম্বন দিলো সে কী উপঢৌকন এনেছিল একটু খোলাসা করে বলেন তো দেখি! আমাকে একটা চুমু দিলে সার্থক হই।
সেরালি বুদ্ধি করে বললো, লোকটা তেমন কিছু আনেনি- কয়েকটা সোনার মোহর এনেছিল মাত্র। একথা শুনে লোকটা ‘ভাগ্যচুম্বনের’ রহস্য বুঝতে পেরে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে চলে গেলো। পরের দিন সোনার মোহর এনে সেরালির হাতে গুঁজে দিয়ে সেরালির ছেলের চুম্বনের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে রইলো। সেরালির ছেলে লোকটাকে ইশারা দিতেই লোকটা ছুটে গিয়ে গালটা পেতে দিলো, সেরালির ছেলে লোকটার গালে চুমুর পরিবর্তে ঠাস করে মারলো এক চড়।
লোকটা চড়টাকেই ‘ভাগ্যচড়’ মেনে নিয়ে মোলায়েম হাতে গাল হাতিয়ে খুশিমনে বেরিয়ে গেলো। সে মনে মনে বললো, ‘চুমার চেয়ে চড়ের চোট বেশি। সুতরাং, ভাগ্যের দিক থেকে আমি একটুও ঠকিনি; লাভ কিন্তু আমারই হয়েছে। ’
এভাবে সেরালির রহস্যছেলে এলাকার লোকজনকে মূল্যবান জিনিসের বিনিময়ে লম্বা লম্বা চুমা দিয়ে গালে টোল ফেলে দিলো, তার সঙ্গে মাগনা চড়-কিল-থাপ্পড় তো আছেই। লোকেরা ওসব পেয়ে বেজায় খুশি। তারা বলে, ‘যে গাই দুধ দেয় তার লাথিও ভালো, চনাও ভালো!’
সুতরাং সেরালির ছেলের মুখের, হাতের ও পায়ের ঘা-গুঁতো খেয়ে এলাকার লোকজন ধন্য হতে লাগলো। ছেলের সুবাদে সেরালির অর্থ-সম্পদ আর মান-মর্যাদাও দ্রুত বেড়ে গেলো। ক্ষেত্র বিশেষে সুযোগ বুঝে সেরালিও লোকজনকে হাতে ও পায়ে ঘা-গুঁতো মারতে ভুল করে না। এতে কেউ বেজার হয় না, রহস্যছেলের বাপ বলে কথা!
****সেরালির ঘরে ‘ভূতের ছাও’ | বিএম বরকতউল্লাহ্
***অদ্ভুত সন্তানে ভরে গেছে ঘর | বিএম বরকতউল্লাহ্
***অদ্ভুত সন্তানে ভরে গেছে ঘর | বিএম বরকতউল্লাহ্
***সেরালির স্ত্রীর উপর ভূতের আছর | বিএম বরকতউল্লাহ্
***ভূত-দেবতার চালাকি | বিএম বরকতউল্লাহ্
***ভূতপাহাড়ের ভূত-দেবতা | বিএম বরকতউল্লাহ্
***সেরালি | বিএম বরকতউল্লাহ্
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭
এএ