ছোটবেলা থেকেই আমেনা গাছপালা ভালোবাসে। বিভিন্ন গাছের ফল, ফুল ও পাতা সংগ্রহ করে এবং এগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে।
গাছপালা সম্পর্কে জানার আগ্রহের কারণে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করে আমেনা। বিভিন্ন বই পড়ে জানতে পারে, গাছের উপকারিতার কোনো শেষ নেই। কিছু কিছু গাছে রয়েছে চমৎকার ওষুধি গুণ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে এসব গাছ। আবার কিছু গাছ থেকে তৈরি হয় অসাধারণ সব সুগন্ধি।
তখনও মানুষ ছোট্ট মরিশাস দ্বীপের গাছপালা সম্পর্কে ভালো করে জানতো না। তাই আমেনা সিদ্ধান্ত নেয়, দ্বীপের বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে ও বিভিন্ন উপকারী গাছপালা খুঁজে বের করবে সে।
আমেনা গবেষণা চালিয়ে প্রায় কয়েকশ গাছ খুঁজে পায়, যা মানুষের বিভিন্ন উপকারে আসে। তার সবচেয়ে পছন্দের গাছটির নাম বাওবাব। গাছটার নাম যেমন অদ্ভুত, এটা দেখতেও তেমনি অদ্ভুত। আরও বেশি অদ্ভুত এ গাছের গুণাগুণ।
বাওবাবের বিশাল আকারের কাণ্ড লম্বা হয়ে সোজা উপরের দিকে উঠে যায়। আর এ কাণ্ডে জমে থাকে বিপুল পরিমাণ পানি। বাকল দিয়ে তৈরি হয় পোশাক ও শক্ত দড়ি।
এ গাছের পাতা ইনফেকশন সারাতে কাজে লাগে। এসব পাতা দিয়ে চমৎকার চাটনিও তৈরি করা যায়। অনেকটা নারিকেলের মতো দেখতে এর ফলগুলোতে রয়েছে দুধের চেয়েও বেশি প্রোটিন।
বাওবাবের কাণ্ড এতো বিশাল যে, এর গুঁড়ির গর্তে মানুষ বসবাস করতে পারে। ঝড়ের সময় মানুষ এ গাছের গুঁড়ির গর্তে আশ্রয় নেয়। সবচেয়ে অবাক বিষয় হলো, এ গাছ কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকে।
মরিশাসের মানুষ ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য বনের গাছপালা কেটে ফেলতো। ব্যাপারটা ভালো লাগতো না আমেনার। তার কাছে একটা বন হলো একটা গবেষণাগারের সমান।
আমেনা বনের গাছ কাটার প্রতিবাদ করে, কিন্তু কেউ তার কথায় কান দেয় না। দ্বীপের গাছপালা বাঁচাতে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয় সে। শুধু বিজ্ঞানী হলে চলবে না, এবার তাকে হতে হবে দেশের প্রেসিডেন্ট। নইলে এই ছোট্ট দ্বীপের গাছপালা কাটা থামানো সম্ভব হবে না।
আমেনা সময় নষ্ট না করে রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়। সে প্রকৃতিকে ভালোবাসে বলে দেশের জনগণও তাকে খুব পছন্দ করে ফেলে। দেখতে দেখতে একদিন আমেনা মরিশাসের প্রেসিডেন্ট হয়ে যায়। নতুন প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে দ্বীপের গাছ কাটা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর কেউ গাছ কাটার সাহস পায় না। ছোট্ট সুন্দর মরিশাস হয়ে ওঠে আরও বেশি সবুজ, আরও বেশি প্রাণবন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৮
এনএইচটি/এএ