ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৭৮)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৭৮) রহস্য দ্বীপ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
​পারি, তবে খুব ভালোভাবে নয়, নোরা বলে। 
আমার ধারণা একেক রাতে একেকজন শব্দ করে পড়লে খুব ভালো হবে, জ্যাক বলে। যা শিখছি তা ভুলে যাওয়া মোটেই ভালো কিছু নয়। আজ রাতে আমি পড়বো আর তুমি কালকে, নোরা বলে।

দু’টি মোমবাতি জ্বালিয়ে জ্যাক অন্যদের রবিনসন ক্রুশোর গল্প পড়ে শোনাতে শুরু করে। ওরা একত্রে গুল্মের ওপর শুয়ে গল্প শুনতে থাকে।

জ্যাক বই বন্ধ করার পর ওরা সবাই একসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।  
সুন্দর তো, পেগি বলে। আরে জ্যাক, আমার মনে হচ্ছে আমরা যদি এই দ্বীপের মজার সব রোমাঞ্চকর ঘটনা লিখে ফেলি তাহলে দারুণ একটা বই হবে! 

ওদের কথা কেউই বিশ্বাস করবে না! পেগি হাসে। যদিও এর সবই আসলে সত্য- আমরা এখানে একা একা বসবাস করছি, একা একা নিজেরাই খাওয়া-দাওয়া করছি, রহস্য দ্বীপে দারুণ সময় কাটাচ্ছি, যা কেউই জানে না!

পরদিন জ্যাক ও মাইক কয়েকটা তাক বানায় যেখানে তারা তাদের নতুন কিছু জিনিসপত্র রাখতে পারবে। সবকিছু সাজাতে গোছাতে খুব মজা। জ্যাক পরেরবার বাজারে গেলে কী কী আনতে হবে তার একটা তালিকা বানাতে শুরু করে।  
সামনের দিনগুলোতে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে, জ্যাক বলে। বুধবার গ্রামে হাট বসে তাই এখন থেকে আমি বুধবারটা খোয়াতে চাই না। তখন আরও বেশি দাম হাঁকবো।

তাই, পরের বুধবার, আবারও ভোরবেলায় বিশাল এক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়, আর চারটে বাচ্চা মাশরুম আর স্ট্রবেরি তোলার কাজে যায়। মাঝে আবারও ওদের প্রচুর ঝুড়ি বানাতে হয় এবং পরে ঝুড়ি দিয়ে নৌকা সাজিয়ে ওর সবগুলো সঙ্গে নিয়ে জ্যাক আর মাইক তিন চার ঘণ্টার পথ যায়।

তিন কি চার সপ্তাহ ধরে জ্যাক মালামাল বিক্রি করতে বাজারে যাচ্ছে। শীতের জন্য অনেক কিছু কিনতে শুরু করে দিয়েছে। পাহাড়ের ভেতরকার গুহার জায়গাটা পুরোপুরি শুষ্ক হওয়ায় সে আর মাইক মালামালের সব থলে আর বস্তা সেখানে মজুদ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আরও একটা কারণ হলো শীতে তাদের গুহার ভেতর বসবাস করতে হতে পারে, তখন সব জিনিস নাগালের মধ্যে থাকবে।

সপ্তাহের পর সপ্তাহ গড়ায়, এক সময় খুব বেশি বুনো স্ট্রবেরি পাওয়া যায় না। মাঠেও মাশরুম জন্মানো বন্ধ হয়ে গেছে, আর অন্যসব বাজারিপণ্য এসে তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে। বাচ্চারা বাদাম পাড়তে হেজল গাছের কাছে যায় আর সুদৃশ্য অসমতল সবুজ আবরণ আর বাদামি খোলসওয়ালা থোকা থোকা পাকা বাদাম পেড়ে আনে। মেয়েরা ঝুড়ি ভরে ডাসা ডাসা কালোজাম নিয়ে আসে, আর জ্যাক মাশরুম আর স্ট্রবেরির বদলে ওসব বাজারে নিয়ে যায়। শিগগিরই বাজারের লোকেরা তাকে চিনতে শুরু করে। তারা খুব অবাক হয়, ছেলেটা কোথায় থাকে, কিন্তু জ্যাক কারও কাছে নিজের সম্পর্কে কোনো কথা বলে না।  

আমি, এই তো লেকের পাড়ে থাকি, কোথায় থাকে লোকেরা জানতে চাইলে সে বলে। তারা ভাবে লেকের পাড়ে কোথাও হবে- তারা জানে না এর মানে রহস্য দ্বীপের লেকের পাড়- আর অবশ্যই কথাটা জ্যাক তাদের কাউকেই বলে না!

একদিন প্রথমবারের মতো জ্যাক সেই গ্রামে কোনো পুলিশ দেখতে পায়। এতে সে খুব অবাক হয়, কারণ এর আগে ওখানে এমন একজনও দেখেনি। আর সে জানে গ্রামটা ছোট বলে এর নিজস্ব কোনো পুলিশ নেই। পাঁচ মাইল দূরের একটা গ্রামের সাথে ভাগাভাগি করে তাদের কাজ চলে। জ্যাকের বুকটা কেঁপে ওঠে- পুলিশের কাছে গিয়ে কি কেউ অচেনা ছেলেটির কথা বললো নাকি। আর যদি ছেলেটি হারানো বাচ্চাদের কেউ হয়, সে কি তাই দেখতে এসেছে! জ্যাক সুযোগ বুঝে সরে আসে, যদিও তার বাদাম আর কালোজামের অর্ধেকটা মাত্র বিক্রি হয়েছে।  

এই, তুমি! হঠাৎ-ই পুলিশটা তাকে ডাকে। তুমি কোথা থেকে এসেছ, এই ছেলে?
লেকের পাড় থেকে, সেখান থেকেই কালোজাম আর বাদাম নিয়ে এসেছি বেচতে, পুলিশের কাছাকাছি না এসেই, জ্যাক জবাব দেয়।  
তোমার নাম কি মাইক? পুলিশটা বলে।

আর এরপরই জ্যাক বুঝতে পারে কেউ পুলিশকে গিয়ে বলে এসেছে এই ছেলেই সেই ছেলে হতে পারে। জ্যাক নিজেও পালাতক চারটে শিশুর একটি- তাই তাকেও খোঁজা হচ্ছে।

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।