ব্যাঙের সামনে বড় একটা শিকড়। আর সাপ গাছের আড়াল থেকে অর্ধেকটা বেরিয়ে আছে।
ব্যাঙ থাকতো পাশের পুকুরে। সকালে বেরিয়েছিল খেলা করতে। এসে দেখে পুকুর নেই। বাবা-মা ভাইয়া কেউ নেই। মানুষেরা পুকুর মাটি ফেলে বন্ধ করে দিয়েছে। ছোট্ট প্রাণীর কথা কেউ ভাবেনি। এ তল্লাটে সে-ই একমাত্র জীবিত ব্যাঙ। মনটা এমনিই খারাপ, তার ওপরে সামনে মরণ দাঁড়িয়ে।
সাপটা সাড়ে তিন দিন আগে ব্যাঙ খেয়েছিল। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। চোখের সামনে ব্যাঙ। এ সুযাগ তো আর ছাড়া যায় না!
সাপ ভাবলো, কী করে যে খাই! ব্যাঙটা যেভাবে হাঁ-চোখে চেয়ে আছে, ধরতে গেলেই তো সটকে পড়বে!’ সাপ তখন ফন্দি করলো। বললো, ‘গাছে কে দ্যাখ তো?’ ব্যাঙ তখনই প্রায় গাছে তাকাতে যাচ্ছিল। ‘ওরে বাপরে! গাছে তাকাই আর তুমি খপ করে ধরো! সেটা হচ্ছে না!’ মনে মনে ভাবলো ব্যাঙ। বললো, ‘গাছে তোমার মামা। ’
ব্যাঙের কথায় সাপ থতমত খেয়ে গেলো। ‘ভারি পাকা তো!’ সাপ একটু কেশে বললো, ‘আমার আবার মামা কোথায়! ওটা তোর মামা! ভালো করে দ্যাখ, তোর মামা বসে আছে। ’
ব্যাঙ বললো, ‘আমার মামা তো তুমি। ’
ব্যাঙের কথা শুনে সাপ আবার থতমত খেয়ে গেলো। ‘বলে কী এ পুঁচকে!’ সাপ বললো, ‘তুই আমাকে মামা বললি! সত্যি কেউ আমাকে মামা বলে না। আজ থেকে সত্যিই আমি তোর মামা। তুই সত্যিই আমার ভাগনে। আমি তোকে খাবো না, কথা দিচ্ছি খাবো না। ’ সাপ সামনের পাতায় মিথ্যে মিথ্যে চোখের জল মুছলো। বললো, ‘চা! আমার কাছে আবদার করে কিছু চা!’
‘কী চাইবো মামা?’
‘চা, চকলেট চা, আইসক্রিম চা, রসগোল্লা চা, যা ইচ্ছা তা-ই চা!’
‘আমিতো ওসব খাই না। আমি খাই মশা। ’
‘ও.., তবে তা-ই চা, মশা চা, কিন্তু এখানে তো মশা দেখছি না। হয়তো তোকে দেখে পালিয়েছে, আচ্ছা তবে তা-ই চা। ’
ব্যাঙ ভাবলো, ‘বাহ! সাপটা তো বেশ ‘সাপবিক’, মানে মানবিক। বললো, ‘মামা আমি ওসব কিছু চাইনে, তুমি আমার বাবা-মা আর ভাইয়াকে এনে দিতে পার?’ সাপ বললো, ‘খুব পারি! এসব তো আমার কাছে ওয়ান-টু। ’ বাবা-মা-ভাইয়াকে ফিরে পাওয়ার আশায় ব্যাঙ গলে গেলো। আড়চোখে দেখলো সাপ। সাপ ভান ধরে বললো, ‘কিন্তু ভাগনে! আমার খাওয়া-দাওয়া তো ডকে উঠেছে, আমি কিছু খেতে পারিনে, গায়ে শক্তি নেই, শক্তি না থাকলে তো... ’
‘কেন কী হয়েছে মামা?’
‘আর বলিস নে! গালের মধ্যে বড় একটা ফোঁড়া! একটু দ্যাখতো কী অবস্থা!’ সাপ চোখ বুজে গাল হাঁ করলো।
ব্যাঙ লাফিয়ে লাফিয়ে সাপের গালে ফোঁড়া দেখতে গেলো। আর সাপ খপ করে ব্যাঙকে গালে পুরলো। ব্যাঙ ছটফট করে বললো, ‘কী ব্যাপার মামা! তুমি আমাকে খাচ্ছ কেন?’ সাপ ভরামুখে বললো, ‘ওরে! তুইতো আমার একমাত্র ভাগনে! তোরে কোথায় রাখি বল! তাই পেটের মধ্যে নিজের সঙ্গে রাখলাম। ’ সাপ দুই ঢোকে গিলে ফেললো ব্যাঙকে।
সাপের পেটের মধ্যে অন্ধকার। ব্যাঙ রাগে-অভিমানে ফুলে উঠলো। চেঁচিয়ে বললো, ‘আমার সঙ্গে বেঈমানি! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। ’ ব্যাঙ খুব করে গুঁতো দিতে লাগলো সাপের পেটে। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। আস্তে আস্তে ব্যাঙের শক্তি কমে আসছে। হজম হয়ে যাচ্ছে সে।
এদিকে খিদে মিটিয়ে সাপ বেশ আরামে আছে। শুয়ে আছে সেই নারকেলতলায়। পেটের মধ্যে একটু হুড়ো-তাড়া হচ্ছে; ভাবলো, ‘খামখা অতো নড়ছিস কেন রে..? একটু পরেই তো হজম হয়ে যাবি!’
ঠিক সেই সময়ে আস্ত একটা নারকেল পড়ল সাপের পিঠে। আর সাপের পেট ফেটে ব্যাঙ বেরিয়ে গেলো। সাপের মর মর অবস্থা। ব্যাঙ টলতে টলতে হাঁপাতে হাঁপাতে কিছু দূরে গিয়ে বলল, ‘সত্যি আমার আসল মামা গাছের ওপরে!’
সাপ কষ্টে বিস্ময়ে নারকেলগাছের ওপরের দিকে তাকালো। আর জ্ঞান হারালো তাকিয়েই।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
এএ