মাইক আগুন ধরাবার জন্য তড়িঘড়ি করে হামাগুড়ি দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসে। সম্ভবত সে আর বিছানায় ফেরত যাবে না।
আগুনটা পটপট শব্দে সুন্দর মতো জ্বলতে শুরু করলে সবাই একসঙ্গে জেগে ওঠে। নোরা লাফিয়ে মায়ের কাছে যায়, কারণ তার বিশ্বাস হচ্ছিল না আবারও সত্যি সত্যিই সে তার মাকে ফিরে পেয়েছে, তাই সে মাকে জড়িয়ে ধরে অনুভব করতে চায়। শিগগিরই গুহার ভেতরটা কথা আর হাসাহাসিতে ভরে ওঠে।
পেগি ও নোরা সকালের নাস্তা বানায়। মাইক তার বাবাকে ভেতরের গুহা আর তাদের ভাণ্ডারের মজুদ দেখায়। জ্যাক ডেইজির দুধ দোয়াতে ছোটে। বাইরে মুরগির ডাক শুনতে পাওয়া যায়, আর নোরা চারটে বাদামি ডিম নিয়ে ফিরে আসে।
জ্যাকের ছিপে আটকাপড়া মাছ, ডিম, রোল, মজুদ মাংসের বাকিটা এবং একটিন পিচ, সঙ্গে গরম গরম চা, সবমিলে চমৎকার একটা নাস্তা তৈরি হয়ে যায়। আগুনটা নিভে যাওয়ার পর গুহামুখে রোদের আলো এসে পড়ে। দিনটা কেমন তা দেখতে সবাই বাইরে আসে।
নিচের নীলচে লেকটা ঝলমল করছে। পাতাহীন গাছগুলো বাতাসে আলতো দোল খাচ্ছে। নোরা তার মাকে বুনো রাজবেরি, স্ট্রবেরি আর বাদামের কথা বলে। পেগি তাকে তাদের বীজ লাগাবার আর ঝুড়ি বানাবার গল্প বলে।
সবশেষে ক্যাপটেন আরনল্ড বলেন, ঠিক আছে, আমার মনে হচ্ছে এবার আমাদের যাওয়ার সময় হলো।
বাচ্চাদের সবাই তার দিকে তাকায়। যাওয়ার! তুমি কী বোঝাতে চাইছ ড্যাডি? আমরা আমাদের দ্বীপ ছেড়ে যাবো?
সোনামনিরা, ক্যাপটেন আরনল্ড বলেন, তোমরা তো সারা জীবন এখানে থাকতে পারবে না-তাছাড়া, এখন তো তোমাদের আর এখানে থাকার দরকার নেই। তোমরা তো এখন আর পালাতক নও। তোমরা আমাদের সন্তান যাদের আমরা খুব ভালোবাসি। তোমাদের অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে।
হুম, মিসেস আরনল্ড বলেন। এবার আমাদের সবাইকে অবশ্যই একটি মানানসই বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। তোমাদের অবশ্যই স্কুলে যেতে হবে, সোনামনিরা। এতোদিন তোমরা খুব বুদ্ধিমত্তা আর সাহসের পরিচয় দিয়েছ। খুব সুখেই ছিলে। এখন তোমরা আমাদের সঙ্গে সুন্দর একটা বাড়িতে থাকবে। আমরা সবাই একসঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করবো।
তাহলে জ্যাকের কী হবে? সঙ্গে সঙ্গে, নোরা বলে ওঠে।
জ্যাক তো আমাদেরই, মিসেস আরনল্ড বলেন। আমি নিশ্চিত বাকি জীবন সে আমাদের সঙ্গে থাকবে। কথাটা শুনে ওর দাদা খুশিই হবেন। আমি হবো ওর মা আর তোমাদের বাবা হবেন ওর বাবা! সবাই মিলে আমরা হবো বড় একটা পরিবার!
জ্যাকের অনেক কথা বলার ছিল কিন্তু সে মুখ দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারে না। খুব অবাক করা ঘটনা। আনন্দে তার মুখটা লাল হয়ে আসে। আর সে এমনভাবে নোরার হাতটা মুঠো করে ধরে যেন না বুঝেই তাকে আঘাত দিয়ে ফেলেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে সে পৃথিবীর সবচাইতে সুখী একটি ছেলে।
মাম্মি, আমাদের অতিপ্রিয় এই দ্বীপ ছেড়ে যেতে আমার খুবই খারাপ লাগবে। নোরা বলে। আর উইলো বাড়িও। আমাদের আরামদায়ক গুহা ও বুদ্বুদওয়ালা ঝরনা, আর আশপাশের বাকি সবকিছু।
চলবে….
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
এএ