তোমরা জানো কী ইংরেজি নববর্ষের উৎপত্তি কীভাবে হলো? চলো জেনে নেওয়া যাক।
সে অনেকদিন আগের কথা।
সুমেরীয়দের কথা জানো তো? বর্ষপঞ্জিকা, অর্থাৎ ক্যালেন্ডার আবিষ্কার কিন্তু তারাই প্রথম করেছিল।
গ্রিক আর রোমানদের কথায় আসা যাক এবার। গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা। তারা কিন্তু ১২ মাসে বছর গুণতো না। তাদের বছরে ছিল ১০টি মাস। শীতের দুই মাস বাদ দিয়ে ৩০৪ দিনে বছর হিসাব করতো রোমানরা। ১ মার্চ উদযাপন করতো নববর্ষ। পরবর্তীতে রোমের সম্রাট নুমা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস দু’টিকে ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করেন।
পরে মারসিডানাস নামে আরও একটি মাস যুক্ত করেন তিনি রোমান বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করতে শুরু করে, কিন্তু সেটা আনুষ্ঠানিক ছিল না। ১ মার্চও নববর্ষ উদযাপিত হতো। ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করেছিল।
আনুষ্ঠানিকভাবে ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় সম্রাট জুলিয়াস সিজারের আমল থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন ঘটান। রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবর্ষের, সম্রাট জুলিয়াসেরটা হলো সৌরবর্ষের। তিনি মূলত মিশরীয় বর্ষপঞ্জিকা নিয়ে আসেন। জ্যোতির্বিদদের সঙ্গে আলাপ করে জুলিয়াস সিজার সে বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝে ৬৭ দিন ও ফেব্রুয়ারির পর ২৩ দিন যুক্ত করে ক্যালেন্ডার সংস্করণ করেন। এই ক্যালেন্ডার জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।
এখানে মার্চ, মে, কুইন্টিলিস ও অক্টোবর মাসের দিন সংখ্যা ৩১ এবং জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দু’দিন যুক্ত করে ৩১ দিন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতে থাকে ২৮ দিনেই। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি চার বছর পরপর যুক্ত করা হয় একদিন। এভাবে আসে লিপইয়ার। রোমানদের দরজা ও ফটকের দেবতা ছিলেন জানুস। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস। সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ উদযাপন শুরু হলো।
পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয় জুলাই।
আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় অগাস্ট।
কিন্তু মধ্যযুগে আবার দেখা দিলো বিপত্তি। খিস্টান ধর্মের অনেক প্রসার ঘটেছিল তখন। ইউরোপের খ্রিস্টানরা আবার ২৫ মার্চ নববর্ষ পালন করতে শুরু করল। ওই দিনটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ খ্রিস্টধর্ম অনুযায়ী সেদিন যিশুখ্রিস্টের মা মেরিকে তার জন্ম নেওয়ার সংবাদ দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল গ্যাব্রিয়েল।
শুধু ২৫ মার্চ নয়, ২৫ ডিসেম্বর, ১ মার্চ এবং ইস্টার সানডেতেও কোথাও কোথাও নববর্ষ উদযাপিত হতো। অর্থাৎ নববর্ষের দিন-তারিখ বাঁধা ছিল না।
যিশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন।
১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে দেওয়া হয় ১০ দিন। পরে পোপ গ্রেগরি ঘোষণা করেন,যেসব শতবর্ষীয় অব্দ ৪০০ দিয়ে বিভক্ত হবে সেসব শতবর্ষ লিপইয়ার হিসেবে গণ্য হবে। এভাবেই আসে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার। এটিই কিন্তু আমাদের খ্রিস্টাব্দ।
এরপর ১৫৮২ সালেই গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে পুনরায় নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৯
এএ